নিত্যপ্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্যের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবে খুচরা-পাইকারি কোনো বাজারে সেই দামে কেনা যাচ্ছে না এসব পণ্য। এই তালিকায় রয়েছে সুপারশপও। রাজধানীর অন্তত তিনটি সুপারশপ ঘুরে দেখা যায়- পেঁয়াজ, ডিম, আলুর বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে অতিরিক্ত দরে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও আবার পণ্য নেই জানানো হচ্ছে।
শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) অন্তরঙ্গ ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, স্বপ্ন, ডেইলি শপিং ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
বিজ্ঞাপন
গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। প্রতিটি ফার্মের ডিমের দাম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অথচ নির্ধারণ করে দেওয়ার ১৫ দিন পরেও বাজারে এসব দ্রব্যের দাম কার্যকর হয়নি।
বিজিবি ১নং গেট পিলখানা অংশে থাকা অন্তরঙ্গ ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ঘুরে দেখা যায়, ডিমের হালি ৫০ টাকা। ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা এবং ৩০টি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৭৫ টাকায়। সে হিসেবে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২.৫০ পয়সা দরে। দাম নিয়ে জানতে চাইলে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি বিক্রয় প্রতিনিধিরা। সেই সাথে জানায়- আউটলেটটিতে পেঁয়াজ, আলু কিংবা কাঁচাপণ্য বিক্রি হয় না।
লালবাগ কাশ্মীরি টোলা মোড়ে থাকা স্বপ্ন আউটলেট ঘুরে দেখা যায়, রয়েছে সামান্য কিছু আলু। যার অধিকাংশ কাটা, পঁচা। নির্ধারিত স্থানের সবগুলো পণ্যর দাম দেওয়া থাকলেও নেই আলুর দর। বিক্রয়কর্মীর সহায়তায় নির্ধারিত কোড দেখে বলেন, প্রতি কেজি আলুর দাম ৩৯ টাকা। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৭ টাকা, ডিম প্রতি পিস ১২ টাকায়।
লালবাগ মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার মসিজিদ সংলগ্ন এবং বিজিবি ১নং গেট পিলখানা অংশে থাকা ডেইলি শপিং ঘুরে দেখা যায়, আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা এবং ডিম ১২ টাকায়। ডিমের দাম ঠিক থাকলেও বাকি পণ্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিক্রয় কর্মী।
বিজ্ঞাপন
সরকার দাম নির্ধারণ করার পর থেকে নিয়মিত সুপার শপে আসা ক্রেতাদের অভিযোগ বেড়েছে। তারা বলছেন- দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর থেকে সুপার শপে বাকি সব পাওয়া গেলেও আলু, ডিম, পেঁয়াজ হাওয়া হয়ে গেছে। কিছুদিন পরপর পাওয়া যাচ্ছে, তবে দামে নির্ধারিত মূল্যের যেমন বেশি নেওয়া হচ্ছে তেমনি মানেও তা খারাপ।
স্বপ্নে নিয়মিত বাজার করেন মাহফুজা। গত ১৫ দিনের সুপার শপের বাজার করার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, কিছু দিন ডিম ছিল না। এখন অবশ্য পাওয়া যায়। তবে আগে দেখা যেত বাহিরের ডিমের তুলনায় সাইজে স্বপ্নের ডিম বড় থাকত। এখন দেখা যায় বেছে বেছে ছোট ডিম ডিসপ্লেতে রাখা হয়।
ডেইলি শপিং করতে আসা নাজমা আক্তার বলেন, এখানকার আলুগুলো ভালোই, তবে দাম বেশি। দোকানে ৪০-৪৫ টাকায় পাওয়া গেলেও এখানে ৫০ টাকা। ডিম দেখলে আর কেনার ইচ্ছে থাকে না। সাইজ খুবই ছোট, প্রায় একই সাইজ। এই ক্রেতার অভিযোগ, যারা সুপার শপ পরিচালনা করে তারা ছোট কোনো ব্যবসায়ী নন। কর্তাব্যক্তিদের সাথে যোগসাজশ না থাকলে এভাবে বেশি দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়।
বিজিবি ১নং গেট পিলখানা অংশে থাকা অন্তরঙ্গ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে বাজার করতে আসা রুমেল আহম্মেদ বলেন, স্বস্তি এবং সময় বাঁচাতেই এখানে আসা। এক ছাদের নিচে সব পাওয়া যায়। দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, তারা যদি বেশি দামে বিক্রি করে, আমাদের বেশি দামেই কিনতে হবে। কিছু তো করার নেই। প্রতিবাদ হতে পারে না কিনে, কিন্তু কতদিন না কিনে থাকা যায়। এরপর থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দামদর নিয়ে আর কথা বলব না।
গত ২০ সেপ্টেম্বর ফার্মগেট এলাকায় সুপার শপ আগোরায় অভিযান শেষে অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার মণ্ডল জানান, অতি উচ্চমূল্যে আলু বিক্রি করছে আগোরা। পেঁয়াজ ও ডিমের দামও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি নেওয়া হচ্ছে।
ডিএইচডি/জেবি

