এক রাতের আগুন পুরো প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করে দিয়েছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের। সেখানকার কোটি কোটি টাকার ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। কারও কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কেউ আবার ধ্বংসস্তুপ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে কৃষি মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মূল মার্কেট পুরোপুরি বন্ধ। শুরু হয়নি মার্কেট ঠিকঠাক করার কাজ। মার্কেটটির পশ্চিম ও উত্তর অংশের অনেক দোকানি তাদের ব্যবসা শুরু করেছেন। তবে নিজ দোকানে নয়। তাদের ঠাঁই হয়েছে দোকানের সামনের ফুটপাত আর রাস্তায়।
বিজ্ঞাপন
কৃষি মার্কেটের মূল মার্কেটের পশ্চিম দিকের সারিতে ছিল শরীয়তপুর কোকারিজ। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভোর রাতের আগে মার্কেটের যে ২১৭টি দোকান পুড়েছে, সে তালিকায় ছিল এই দোকানটিও।
শরীয়তপুর কোকারিজের মালিক মোহাম্মদ শাওন খানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনদিন ধরে তারা দোকান শুরু করেছেন। মার্কেটের কাজ শুরু হয়নি। ফলে নিজ দোকানে ব্যবসা করার সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়ে দোকান বসিয়েছেন মার্কেটের সামনের রাস্তায়।
শাওন খান বলেন, এই দোকান ঠিক হতে আরও অনেক সময় লাগবে। এখন দোকান চালাতে হবে। তাই রাস্তায় শুরু করলাম।
বিজ্ঞাপন
একই কাজ করেছেন জুতা ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন। মার্কেটের উত্তর পশ্চিম দিকের দোকানটি তার। দোকানের নাম আলমগীর স্যুজ।
এই ব্যবসায়ী জানান, মার্কেটটিতে তার দোকান ছিল দুটি। একটি জুতার, আরেকটি শাড়ির। সায়েম শাড়ি ঘর নামে যে কাপড়ের দোকান ছিল, তার কিছুই বের করতে পারেননি। তবে জুতার দোকানের সামান্য কিছু মালামাল রক্ষা হয়েছে। তাই দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি।
আলমগীর হোসেন বলেন, আগুনে পুরো দোকান পুড়ে গেছে, কিছু মালামাল বের করতে পারছিলাম। সেগুলো নিয়ে বসছি। কাস্টমার জানে না আমরা বসেছি। তাই বিক্রি তেমন নাই। তাও দুই-চার জোড়া দৈনিক যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মার্কেট কবে ঠিকঠাক হবে জানি না। টিন এনে রাখছে। কাজ শুরু করলে শেষ কবে হবে বলা যায়। এখনো তো কাজই ধরে নাই।
দুইদিন ধরে নতুন মালামাল এনে ব্যবসা শুরু করেছেন নরুল হক। মার্কেটের উত্তরাংশে তার দোকান ছিল। দোকানের নাম ইমন স্যু। তবে সেই দোকান পুড়ে ছাই।
এই ব্যবসায়ী বলেন, দোকান ভাড়া ১৫ হাজার টাকা। দোকান মালিক চাপ দিচ্ছে না। আমি নিজে কিছু মালামাল কিনে নিয়ে আসলাম। দোকানে যা ছিল, তার সবই তো শেষ। এখন চেষ্টা করছি দোকানের সামনের ফুটপাতে কিছু মাল বিক্রি করতে।
নুরুল হক বলেন, টুকটাক কিছু কাস্টমার আসে। কিন্তু তারা বলে এগুলো পুরান মাল (আগুনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া)। তাই নিতে চায় না।
এদিকে মূল মার্কেটের গোটা বিশেক দোকানি নিজেদের ব্যবসা ফুটপাত ও সড়কে শুরু করেছেন। বাকীদের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ।
তবে মার্কেটের উত্তরাংশ, দক্ষিণের পার্কিং, পশ্চিম দিকের সড়কে ও ফুটপাতের দোকান আগের মতোই বসেছে। হাঁটার পথ বন্ধ করে বসেছে অর্ধশতাধিক দোকান। যা মার্কেটের নকশাবহির্ভূত ও সিটি করপোরেশনের তালিকার বাইরে বসানো অবৈধ স্থাপনা।
এসকল দোকানির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কথা বলতে রাজি হয়নি।
এক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের কথা বলার অনুমতি নাই। মার্কেটের লোকজন আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেন। আমরা কিছু বলতে পারব না।
মার্কেটটির সভাপতি ২৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সলিমুল্লাহ সলু। এ বিষয়ে জানতে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল ধরেননি।
ওয়ার্ডটির সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর শাহিন আক্তার সাথীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি দুই দিন ধরে অসুস্থ, আমি ওইদিকে যাইনি। অবৈধ কোনো দোকান থাকার সুযোগ নেই।
সাথী বলেন, মার্কেটের সামনের অংশ পুরোটাই পার্কিং। এখানে কোনো অবৈধ দোকান থাকবে না। আমরা সে ব্যবস্থা করব। দুই-একদিনের মধ্যেই মার্কেটের কাজ শুরু হবে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে যেন পানি সরবরাহ করা যায়, সে ব্যবস্থা করা হবে। যাতায়াতের কোনো বাধা যেন তৈরি না হয়, সে ব্যবস্থাও করা হবে।
কারই/এমএইচএম

