বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ঢাকা

‘আলু-ডিমটা খাইতাম সেটার দামও বাড়াইল, আমরা খামু কী’

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ০৪:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

‘আলু-ডিমটা খাইতাম সেটার দামও বাড়াইল, আমরা খামু কী’

দ্রব্যমূল্যের বাজারে এখন আগুন। নিত্যপণ্য ক্রেতাসাধারণের নাগালের বাইরে। মাছ-মাংস কেনা দুষ্কর হয়ে পড়েছে মধ্যবিত্তের জন্য। অনেকে ডিম ও আলু কেনাও কমিয়ে দিয়েছেন। আমিষের চাহিদা তারা এখন সবজিতে পূরণ করছেন। যদিও রাজধানীতে বসবাসরত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য সেটাও এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে তাদের।  

গত বছর ২৫০ গ্রামের একটি ইলিশ কিনেছিলেন সিরাজগঞ্জের রিকশা চালক তারেক মিয়া। এরপর থেকে ইলিশ তিনি আর কিনতে পারেননি। আগে ডিম সপ্তাহে অন্তত এক হালি কিনতেন। সম্প্রতি আলু ও ডিমের দাম বাড়ায় সেটাও কমিয়ে দিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


তারেক মিয়া বলছিলেন, ‘আলু ও ডিমে তো এখন আগুন। গত তিন মাসে কোনো মাছ কিনতে পারিনি। বৌরে বলছি, সবজি ভর্তা দিয়া চালায় নাও। কী করার আছে এই বৃদ্ধ বয়সে রিকশা চালাই। একজনের আয়ে কি সংসার চলে! বড় মেয়েটা পড়ে কলেজে আর ছোটটা স্কুলে। তাদের তো ভিটামিন দরকার। সেটাও এখন মুখে দিতে পারছি না।’

mm

এই রিকশাচালক বলেন, ‘আমি টাকা না দিলে বাচ্চাদের মাছ-মাংস কিনে দেবে কী করে? এমন পরিস্থিতিতে দিন যাচ্ছে যা কাউকে বলেও লাভ নেই। বাজারে কিনতে গেলে একটা জিনিসও সাধ্যে কুলায় না। আমরা না পারছি কইতে, না পারছি সইতে।’

সামনে কী হবে সে চিন্তা তাকে এখন থেকে তাড়া করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার চাইলে এই দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। শুধু দরকার সদিচ্ছার। সরকার উদ্যোগ নিলে বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’


বিজ্ঞাপন


শুক্রবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে রিকশাচালক তারেকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউনহল মার্কেটের সামনের সড়কে। এসময় পাশেই ছিলেন আরেক রিকশা চালক সেলিম। তারেকের কথা শুনে তিনিও ছুটে আসেন কষ্টের কথা বলতে। তিনিও প্রায় একই কথা বলেন।  

mm2

আজাদ রহমান মোহাম্মদপুরে এক চাকরিজীবীর প্রাইভেটকার চালান। মাসে বেতন পান ১৮ হাজার টাকা। তার স্ত্রী অন্যের বাসায় কাজ করে পান ছয় হাজার। সব মিলে তার মাসিক আয় ২৪ হাজার টাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এই টাকায় তার সংসার চলে কি না জানতে চাইলে সোজা-সাপ্টা জবাব- ‘ক্যামনে চলব। প্রতি মাসেই ধার কর্জ করি।’

আজাদ বলছিলেন, ‘আমরা গরিবরা যে আলু-ডিমটা খাইতাম সেটার দাম বাড়াইল। আমরা খামু কী। এখন আমার মাসে ১০টি ডিম কিনতেও শরীর কাঁপে। গরুর মাংসে তো হাত দিবার পারি না। ইলিশ খাইতে পারি না। দেশি মুরগি তো খাওয়ার ক্ষমতা আমাদের নাই।’

গত বছর গরুর মাংস কিনেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে পাংগাসটা আমরা ১২০ টাকা কিনছিলাম সেটা এখন ২০০ টাকা। আমরা কী খেয়ে বাঁচব বলেন। আল্লায় আমাদের মৃত্যু দিয়া দিক। আমাদের গরিবরে দেখার মতো কেউ নাই। আমাদের দেখবে একমাত্র আল্লাহ।’

mm3

এই গাড়িচালক জানান, আগে প্রতি মাসে তিন ডজন ডিম অনায়াসে কিনতে পারতেন। কিন্তু এখন সেটা কমিয়ে দেড় ডজনে নিয়ে এসেছেন।

কুড়িগ্রামের হাবিব রহমান দুই ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে থাকেন শেখেরটেক এলাকায়। তিনি রিকশা চালান এবং স্ত্রী একটি প্রতিষ্ঠানে ধোয়া-মোছার কাজ করেন। দুইজনের টাকায় সংসার চালানো তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানালেন তিনি।

bb

হাবিব জানান, কয়েক বছর আগে মাসে হাফ কেজি গরুর মাংস কিনতে পারতেন। কিন্তু এখন সেটা তার কাছে স্বপ্নের মতো। বাসায় মেহমান এলেও তিনি গরুর মাংস কিনতে পারেন না। বাধ্য হয়ে ব্রয়লার দিয়ে চালিয়ে নেন।

এই রিকশা চালক বলেন, ‘গত এক বছরে গরুর মাংস কিনতে পারি নাই। বয়লার কিনছি। আগে দুই হালি ডিম কিনতাম, কিন্তু এখন কিনি দুইটা। বাকি দিনগুলা সবজি খায়া কাটাই।’

এমআইকে/জেবি


ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর