দেশের নাগরিকদের পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনতে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) চালু করছে সরকার। বহুল প্রতীক্ষিত এই কর্মসূচি আজ থেকেই সকলের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।
বিজ্ঞাপন
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল শ্রেণী-পেশার বাংলাদেশি নাগরিক এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশন স্কিমের অংশ হতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র আবশ্যক। তবে ব্যতিক্রম আছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। তারা চাইলে পাসপোর্ট দিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে তার কপি জমা দিতে হবে।
আবার বয়সের ক্ষেত্রেও বিশেষ বিবেচনা রাখা হয়েছে। যাদের বয়স ৫০ পেরিয়ে গেছে তারাও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে তিনি পেনশন পাবেন টানা ১০ বছর চাঁদা দিয়ে যাওয়ার পর। অর্থাৎ স্কিম অনুযায়ী ব্যক্তির বয়স ৬০ বছর হলেই তিনি সরকার থেকে পেনশন পেতে শুরু করবেন, তাকে আর চাঁদা দিতে হবে না। কিন্তু কেউ যদি ৫৫ বছর বয়সে এসে স্কিমে অংশ নেন তাহলে ৬৫ বয়স বয়স থেকে তিনি পেনশন পেতে শুরু করবেন।
সর্বজনীন পেনশন সুবিধায় সরকার মোট ৬টি স্কিমের কথা ঘোষণা করেছে। তবে আপাতত চারটি স্কিম চালু হয়েছে। এগুলোর নাম— প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা।
সর্বজনীন পেনশনের জন্য নিবন্ধন করবেন যেভাবে
বিজ্ঞাপন
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে গেলে ইউপেনশন ওয়েবসাইটে যেয়ে নিবন্ধন করতে হবে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আজ থেকেই যে কেউ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ার শুরুতেই একটি প্রত্যয়ন পাতা আসবে, যেখানে লেখা থাকবে—‘এই মর্মে প্রত্যয়ন করছি যে আমি সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নই। সর্বজনীন পেনশন স্কিমবহির্ভূত কোনো ধরনের সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা গ্রহণ করি না। আমি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কোনো ধরনের ভাতা গ্রহণ করি না।’
এই পাতার নিচের দিকে ‘আমি সম্মত আছি’ অংশে ক্লিক করলে দ্বিতীয় পাতায় গিয়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। এখানে আবেদনকারীকে প্রবাস, সমতা, সুরক্ষা বা প্রগতি—এই চার স্কিমের মধ্য থেকে প্রযোজ্য স্কিম বাছাই করতে হবে। একই সঙ্গে ১০, ১৩ বা ১৭ সংখ্যার এনআইডি নম্বর, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর, ই–মেইল আইডি লিখে দিতে হবে। এরপর পাতার নিচের দিকে থাকা ক্যাপচা লিখে পরের পাতায় যেতে হবে।
ক্যাপচা দেওয়ার পরে আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর ও ই–মেইলে একটি ওটিপি বা একবার ব্যবহারযোগ্য গোপন নম্বর আসবে, যা ফরমে দিয়ে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ার পরের ধাপে আসবে ব্যক্তিগত তথ্যের পাতা। এ পাতায় এলে ব্যক্তির এনআইডি অনুযায়ী এনআইডি নম্বর, ছবি, আবেদনকারীর বাংলা ও ইংরেজি নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে (যেহেতু আগের পাতায় এনআইডি নম্বরের মাধ্যমে এ তথ্যগুলো দেওয়া হয়েছে)।
তবে এখানে আবেদনকারীর বার্ষিক আয় লিখতে হবে এবং পেশা, নিজ বিভাগ, জেলা ও উপজেলার নাম নির্বাচন করতে হবে। পেশা বাছাইয়ের ঘরে শিক্ষক, বেসরকারি চাকরিজীবী, ছোট ব্যবসায়ী, ব্যবসা, দিনমজুর, আইনজীবী, সাংবাদিক ইত্যাদি পেশার উল্লেখ আছে। সেখান থেকে নিজের পেশা নির্বাচন করতে হবে। সব লেখা সম্পন্ন হলে পরের ‘স্কিম তথ্য’–এর পাতায় যেতে হবে।
স্কিম তথ্যের পাতা এলে সেখান থেকে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ও চাঁদা পরিশোধের ধরন বাছাই করতে হবে। চাঁদা পরিশোধের ধরনের মধ্যে মাসিক, ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক—এ তিন অপশন রয়েছে। এরপর ব্যাংক তথ্যের ধাপে যেতে হবে।
ব্যাংক তথ্যের পাতায় আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবের নাম ও নম্বর, হিসাবের ধরন (সঞ্চয়ী অথবা চলতি), রাউটিং নম্বর, ব্যাংকের নাম (বাংলায়) ও ব্যাংকের শাখার নাম (ইংরেজিতে) লিখতে হবে। এরপর পরবর্তী নমিনি তথ্যের পাতায় যেতে হবে।
নমিনি তথ্যের পাতায় গিয়ে নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে নমিনিকে যুক্ত করতে হবে। এখানে একাধিক নমিনিও যুক্ত করা যাবে। এ সময় নমিনির মোবাইল নম্বর, নমিনির সঙ্গে সম্পর্ক, নমিনির প্রাপ্যতার হারের (একাধিক নমিনি হলে) তথ্য দিয়ে সর্বশেষ ‘সম্পূর্ণ ফরম’ ধাপে যেতে হবে।
এটিই নিবন্ধনের শেষ ধাপ। এ ধাপে আগে পূরণ করা ব্যক্তিগত তথ্য, স্কিম তথ্য, ব্যাংক তথ্য ও নমিনি তথ্য দেখানো হবে। সেখানে কোনো ভুল থাকলে আবার শুরুতে গিয়ে তথ্যের প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে। আর সব তথ্য ঠিক থাকলে তাতে সম্মতি দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এ সময় চাইলে সম্পূর্ণ আবেদনটি ডাউনলোডও করতে পারবেন আবেদনকারী।
উল্লেখ্য, নিবন্ধনের পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে সব পাতার কাজ শেষ না করে পেছনে (ব্যাক) যাওয়া যাবে না। পেছনে গেলে সব প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করতে হবে। তবে সে ক্ষেত্রে পুরনো তথ্যগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে; নতুন করে আর লিখতে হবে না।
পেনশন কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন করলে সেই আবেদন বাতিল হবে এবং জমাকৃত অর্থ ফেরতযোগ্য হবে না।
এমএইচটি