রোববার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘ডিমের বাজার এলোমেলো হলে আমরা বসে থাকব না’

ওয়াজেদ হীরা
প্রকাশিত: ০৮ আগস্ট ২০২৩, ০৪:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

‘ডিমের বাজার এলোমেলো হলে আমরা বসে থাকব না’

আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে ডিমের বাজার। দুই তিন দিন ধরে রাজধানীর বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের প্রতি হালির দর উঠেছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। দেশে এর আগে কখনো এত দামে মানুষকে ডিম কিনতে হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ডিমের মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়ছে দরিদ্র মানুষের আমিষের চাহিদায়। দুর্মূল্যের বাজারে পরিবারের খাবার খরচ কমাতে যারা ডিম খাচ্ছিলেন, তাদের ঘাড়ের বোঝাটা আরেকটু ভারী হয়েছে।

গত কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতি ডজন মুরগির ডিমের দাম খুচরায় ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ১৭০ টাকা বা আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়াই কারসাজির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভোক্তারা।


বিজ্ঞাপন


উৎপাদনের চেয়ে অধিক মুনাফায় ডিম বিক্রি হলে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। অতিরিক্ত দাম বেড়ে বাজার এলোমেলো হলে এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মেইলকের সঙ্গে একান্তে আলাপকালে এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, ‘বাজার এলেমেলো হলে ভোক্তাদের স্বার্থে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। তবে এটি দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরও আছে। ডিমের দাম কেন বাড়ছে উৎপাদন খরচ বেড়েছে কি না সেটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ভালো বলতে পারবে।’

ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘গত বছর আমরা এই ডিম নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছি। তখন একটা বিশেষ প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল। গতবার হঠাৎ করে অনেক বেড়ে গিয়েছিল, আমরা নিজেরাও সে সময় সিআইডিতে মামলা করেছিলাম। এই সেক্টরের যে সমস্যা আছে ডিমের দাম, বাচ্চার দাম, খরচ ইত্যাদি তুলে ধরে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে আমরা রিপোর্টও দিয়েছিলাম।’


বিজ্ঞাপন


এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রেক্ষাপটটা ওই সময় ভিন্ন ছিল। এরপর সংশ্লিষ্টরা কমিটি করেছে। এবার যে ডিমের দাম বেড়েছে প্রতি পিস ১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলছেন, তাহলে এর উৎপাদন খরচ কতে সেটি আগে জানতে হবে আমাদের। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বা প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যদি আমাদের এই বিষয়ে কাজ করতে বলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বা প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ না করলে ভোক্তা অধিদফতর কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, ‘এর আগেও আমরা এটি নিয়ে কাজ করেছি। একই বিষয়ে মনোযোগ দিলে হবে না, আমাদের আরও কাজ থাকে। এরপরও ডিমের বাড়তি দামে বাজার যদি খুব বেশি এলোমেলো হয়ে যায় আমরা বসে থাকব না, ভোক্তাদের স্বার্থে অভিযানে নামব।’

এলেমেলো হবে কেন সে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘কাঁচা মরিচ বাজার এলেমেলো করে দিল, আমরা কিন্তু অভিযানে নেমেছি। ভোক্তাদের স্বার্থে আমরা সব জায়গায় কিন্তু যাচ্ছি- সেটা সিলিন্ডার গ্যাস হোক আর চার্জার ফ্যান হোক। এখানেও ব্যত্যয় হলে মাঠে নামব।’

গত দুই দিন রাজধানীর বিভিন্ন বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকারভেদে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা দরে। সেই হিসাবে প্রতি হালি ডিমের দাম পড়ে ৪৮ টাকা ৩৩ পয়সা থেকে ৫০ টাকা। আর সেই ডিম খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৭৫ টাকা ডজন। আর সুপারশপগুলোতে ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকায়। খুচরায় ছোট আকারের ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। বিভিন্ন মহল্লার অলিগলির দোকানে ৬০ টাকা হালি ডিম বিক্রি করছেন। অন্যদিকে হাঁসের ডিমের ডজন পাইকারিতে ২১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি হালি ৭০ টাকা। খুচরায় প্রতি ডজন ২৪০ টাকা।

গত কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতি ডজন মুরগির ডিমের দাম খুচরায় ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ১৭০ টাকা বা আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়াই কারসাজির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভোক্তারা।

ফার্মগেট এলাকায় মেসে থাকা শিক্ষার্থী আবু জাফর বলেন, ‘ডিম মেসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। অথচ এর দাম বিনা কারণেই বাড়ছে, কেউ দেখার নেই। একটি ডিম উৎপাদন খরচ কত যে রাতারাতি দাম ৪/৫ টাকা বেড়ে যায়। ১১ টাকার ডিম ১৫ টাকায় উঠেছে।’

EE

একই এলাকার আরেক বাসিন্দা হাসনাত আবুল খায়ের বলেন, ‘অলিগলিতে ৬০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে, কোনো বাজারে দুই এক টাকা কম পাওয়া যায়, কিন্তু শুক্রবারও এই ডিম কিনেছি ১৩০ টাকা ডজন। আর এখন ১৬৫ কোথাও ১৭০, এটা মানা যায় বলেন?’

সুত্রাপুর বাজারে দীর্ঘদিন ডিম বিক্রি করা আবিদ হোসেন বলেন, ‘জীবনে কখনো এত দামে ডিম বিক্রি করিনি। এখন রেকর্ড দাম বলতে পারেন।’

দেশে এর আগে কখনো এত দামে মানুষকে ডিম কিনতে হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ডিমের মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়ছে দরিদ্র মানুষের আমিষের চাহিদায়। দুর্মূল্যের বাজারে পরিবারের খাবার খরচ কমাতে যারা ডিম খাচ্ছিলেন, তাদের ঘাড়ের বোঝাটা আরেকটু ভারী হয়েছে।

রায়সাহেব বাজারের পাইকারি ও খুচরা ডিম বিক্রেতা মহসিন বলেন, ‘কাপ্তান বাজারের আড়ৎ থেকে ১০০টি ডিম খরচসহ ১১৮০ টাকা কেনা পড়ে। সেই ডিম আমরা পাইকারি বিক্রি করি ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি হালি ডিমের দাম পড়ে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। আর খুচরা বাজারে প্রতি হালির ডিমের দাম আকার ভেদে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা বিক্রি হয়। সেখানে আমাদের কী করার আছে? আমরা কী করব? দাম বাড়লে বাড়াই, কমলে দাম কমাই। তবে কী কারণে দাম বড়ছে সেটা বলতে পারি না।’

সরকারে বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে ডিমের দাম বাড়ার তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে রাজধানীর বাজারে ফার্মের বাদামি ডিমের হালি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে তুলে ধরেছে। সংস্থাটি বলছে, এক মাসে ডিমের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে মুরগির ডিমের হালির গড় দাম ছিল ২৭ টাকার আশপাশে। আর এখন তা ৫৫ টাকা হালিতে উঠেছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ডিম উৎপাদন হয়েছে মোট দুই হাজার ৩৩৫ কোটি; সে হিসাবে বছরে প্রত্যেকের জন্য ডিমের প্রাপ্যতা ছিল ১৩৬টি। আর তার আগের অর্থবছরে দেশে ডিম উৎপাদন হয় মোট দুই হাজার ৫৭ কোটি, তাতে জনপ্রতি নাগরিকের ডিমের প্রাপ্যতা দাঁড়ায় ১২১টি।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক হিসাব বলছে, এক যুগ আগে ২০১০ সালে প্রতি হালি লাল-সাদা ডিমের দাম ছিল গড়ে ২৫ টাকা ৩৩ পয়সা। পরের বছর তা সামান্য কমে ২৪ টাকা ৮৩ পয়সা হয়। সেই দাম বাড়তে বাড়তে ২০১৯ সালে গড়ে ৩৫ টাকা হালি ছাড়িয়ে যায়। এরপর থেকে ডিমের দাম আর নামেনি।

ডব্লিউএইচ/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর