বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সাকার ফিশের কবলে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা

ব্যুরো প্রধান
প্রকাশিত: ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১০:৫৯ এএম

শেয়ার করুন:

সাকার ফিশের কবলে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা
ছবি: ঢাকা মেইল

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী এমনিতেই অবৈধভাবে বালি উত্তোলন, ইঞ্জিন বোট চলা, মা-মাছ নিধনে জাল বসানো এবং আবাসিক ও শিল্পবর্জ্য পড়াসহ নানাভাবে দূষণের কবলে আছে। 

এখন এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে মাছের পোনাখাদক সাকার ফিশ। যার পুরো নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ। এর বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকোসটোমাস। মূলত এটি বিদেশি ও অ্যাকুরিয়াম-নির্ভর মাছ। মাছটি দেশীয় জীববৈচিত্র ও জলাশয়ের জন্য হুমকিস্বরূপ। 


বিজ্ঞাপন


এমন কথাই বলছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মনজুরুল কিবরিয়া। 

তিনি বলেন, সাকার ফিশ জলাশয়ের শ্যাওলা জাতীয় খাবার খেয়ে ফেলে। এরা সংখ্যায় বেড়ে গেলে বাস্তুসংস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। যা অন্য মাছের খাবারের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। তখন সব প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে।

তিনি আরো বলেন, এটি মূলত অ্যাকুরিয়াম নির্ভর বিদেশি মাছ। এটি মোটেই খাওয়ার উপযোগী মাছ নয়। এর শরীরটা শক্ত, মাংসও নেই। মাছটির তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে-দ্রুত প্রজনন বৃদ্ধি, অক্সিজেন ছাড়াই বাঁচতে পারা এবং হালকা ও দূষিত পানিতে বাঁচা। তাই যত দূষিত পানিই হোক সে বেঁচে যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে নানাভাবে এটি খাল-বিল-নদী-জলাশয়-ডোবা-ড্রেনে ছড়াচ্ছে। 

সূত্রমতে, শনিবার (২ এপ্রিল) হালদা নদীর মোহনা থেকে মদুনাঘাট সেতু পর্যন্ত ছয়টি স্পটে নৌপুলিশ অভিযান পরিচালনা করে সাড়ে ৪ হাজার মিটার ঘেরজাল জব্দ করে। এ সময় কচুখাইন এলাকা থেকে জব্দকৃত ঘেরজালে মিলেছে সাকার ফিশ। ক্ষতিকর মাছটি কেবল এখানে নয়, হালদা নদীর শাখা খাল কাটাখালীসহ অনেক খালেই আছে। 


বিজ্ঞাপন


হালদা নদীর ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, হালদায় সাকার ফিশ পাওয়ায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ এ মাছ দ্রæত বংশবিস্তার করে জলজ পোকামাকড়, শ্যাওলা, ছোট মাছ ও মাছের পোনা খেয়ে থাকে। তাই হালদায় সাকার ফিশ ছড়িয়ে পড়লে নদীর মাছ ও জীববৈচিত্রের জন্য হুমকি হবে।

হালদাপাড়ের বাসিন্দা পরিতোষ চন্দ্র দে বলেন, হালদার শাখা নদী কাটাখালীতে কয়েক বছর ধরে এ মাছ ছাড়া আর কোনো মাছ দেখা যায় না। ফলে হালদা নদীতে প্রতিবছর ডিম সংগ্রহ কমছে। চলতি এপ্রিল মাসের শেষে বা মে মাসের শুরুতে ডিম সংগ্রহের মৌসুম। এ সময়ে সাকার ফিশ চরম উদ্বেগ তৈরি করেছে। 

হাটহাজারীর জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা রনি বলেন, এর আগে হালদা নদীতে সাকার ফিশ তার নজরে পড়েনি। তবে হাটহাজারীর কয়েকটি পুকুরে বছর খানেক আগে এই মাছ দেখেছে তিনি। এদের বংশবৃদ্ধির হার বেশি। সংখ্যায় বেড়ে গেলে তখন অন্য মাছ খাবার পাবে না। কোথাও এ মাছ পাওয়া গেলে তা নিধন করতে হবে। এটাই বংশবৃদ্ধি ঠেকানোর উপায়।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, মাছটি খাওয়ার অনুপযোগী। এর পাখনা খুব ধারালো হওয়ায় অন্য মাছকে সহজে আঘাত করে। তাই এটি যদি আমাদের প্রকৃত মৎস্য স¤পদের উৎসস্থলগুলো দখল করে নেয়, তাহলে সেটি হবে দেশের মৎস্য সম্পদের জন্য হুমকিস্বরূপ।

তিনি বলেন, সাকার ফিশের কারণে বুড়িগঙ্গায় এখন অন্য প্রজাতির কোনো মাছ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এখন থেকে এ মাছ নিধন করা না হলে তা হালদার জন্যও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। হালদা অববাহিকায় এ মাছ যাতে কেউ অ্যাকুরিয়ামেও না রাখে সে বিষয়ে নজরদারি ও সচেতনতা প্রয়োজন। তাই হালদা নদীতে মাছটির সন্ধান বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা এলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের রাউজান, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে চলা হালদা নদী রুই, কাতলা, কালিবাউশসহ দেশীয় অর্ধশত প্রজাতির মাছের প্রজননক্ষেত্র। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের প্রথম বা দ্বিতীয় ভারী বর্ষণে (এপ্রিলের শেষ বা মের শুরুতে) পাহাড়ি ঢল নামলে এবং অমাবস্যা বা পূর্ণিমার তিথি থাকলে হালদায় মা মাছ ডিম ছাড়ে। সেসময় নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করে হালদা পাড়ের মৎস্যজীবীরা।

আইকেে/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর