প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এসেছে বহুমাত্রিক পরিবর্তন। এর মধ্যে স্মার্টফোন আর মোবাইল নেটওয়ার্ক বদলে দিয়েছে মানুষের হালচাল। তবে সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দশটি অনুষদের তিনটিই রয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে। সেগুলো হলো জীববিজ্ঞান অনুষদ, মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদ এবং নতুন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ। অনুষদ তিনটিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক শূন্যতায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
তিনটি অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনুষদগুলোতে ঢুকার পর থেকেই ফোনে নেটওয়ার্ক সংযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কারো সাথে যোগাযোগ করা যায় না, কেউ যোগাযোগও করতে পারে না। এতে গবেষণা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের।
বিজ্ঞাপন
এক দিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই, অন্য দিকে নতুন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে ক্লাস শুরু হওয়ার প্রায় এক বছরেও দেয়া হয়নি ব্রডব্যান্ড সংযোগ। মেরিন সায়েন্সেস অনুষদেও নেই ব্রডব্যান্ড বা ওয়াইফাই সংযোগ। এছাড়া, জীববিজ্ঞান অনুষদে ব্রডব্যান্ড সংযোগ থাকলেও তা মাঝে মধ্যে হয়ে পড়ে কচ্ছপ গতির। বিভিন্ন সময় ব্রাউজারে ঢুকতে পোহাতে হচ্ছে নানান জটিলতা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, জীববিজ্ঞান অনুষদে রয়েছে ছয়টি বিভাগ। প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিজ্ঞান, ভ‚গোল ও পরিবেশবিদ্যা, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান, মাইক্রোবায়োলজি, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, জীন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি, মনোবিজ্ঞান এবং ফার্মেসি বিভাগ। দেশের প্রাচীনতম মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদটিতে রয়েছে তিনটি বিভাগ। ইন্সটিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস, ওশানোগ্রাফি এবং ফিশারিজ বিভাগ। এসব বিভাগের প্রতিটিতেই গবেষণা কার্যক্রম চলে বছরব্যাপী।
এছাড়া নতুন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে বর্তমানে ক্লাস চলছে চারটি বিভাগের। আরবি, ইংরেজি, পালি এবং ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি কম হওয়ার কারণে অনুষদগুলোর প্রতিটি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই বছরের পর বছর পার করছেন বহুমাত্রিক জটিলতা। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করা থেকে ধরে ক্লাস, গবেষণাসহ একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে প্রতিনিয়ত।
তবে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জীববিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। ব্যহত হচ্ছে সেখানকার গবেষণা কার্যক্রম। এ বিষয়ে জীববিজ্ঞান অনুষদে অবস্থিত প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার জাওয়াদ বলেন, আমাদের অনুষদে নেটওয়ার্কের অবস্থা খুবই বাজে। আমরা যখন স্যারদের সাথে ল্যাব করি, গবেষণার কাজ করি, বিভিন্ন সময় আমাদের মোবাইল বা কম্পিউটারের প্রয়োজন পড়ে। একজনের সাথে আরেকজনের যোগাযোগ করতে হয়, তথ্য অনুসন্ধান করতে হয়। তখন দেখা যায় আমরা যথেষ্ট নেটওয়ার্ক পাই না।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, এছাড়া একসাথে অনেক শিক্ষার্থী ওয়াইফাই ব্যবহার করায় মাঝে মধ্যে সেটাও কচ্ছপ গতির হয়ে পড়ে। স্যাররা বিভিন্ন সময় আমাদেরকে অনেক তথ্য দিতে চান, কিন্তু নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে তা পারেন না। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় আমরা সেসব তথ্য উপাত্ত থেকে বঞ্চিত হই। ওয়াইফাই স্পিডটা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদে অবস্থিত মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী খালেদ আহমেদ জানান, আমাদের অনুষদে নেটওয়ার্ক দুস্প্রাপ্য। আমাদের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও যোগাযোগের জন্য সবসময় নেটওয়ার্কের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে আমরা বছরের পর বছর এসব সমস্যার সম্মুখীন হয়ে আসছি। এই নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে আমাদের একাডেমিক পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।
নতুন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে অবস্থিত ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রফিক জানান, নতুন কলা অনুষদে ক্লাস শুরু হয়েছে আজকে প্রায় এক বছর। অথচ, এখনো সেখানে কোনরকম মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সংযোগ দেয়া হয়নি। এছাড়া, পানির সমস্যা তো আছেই। নেটওয়ার্ক শূন্যতার কারণে আমরা শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের অনুষদে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক দুইটারই প্রচুর সমস্যা রয়েছে। অনুষদে ঢুকলে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারি না। বাহিরের কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে না। বিশেষ করে ভর্তি পরীক্ষার সময় সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা গত ভর্তি পরীক্ষার আগেই চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু এখনো পর্যন্ত প্রশাসন নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে পারেনি। এ সমস্যার সমাধানটা আমাদের জন্য জরুরি হয়ে গেছে।
মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের মেরিন সায়েন্সেস অনুষদের কোন বিভাগেই নেটওয়ার্ক সংযোগ হয় না। আমরা প্রতিদিন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। ভর্তি পরীক্ষা, ক্লাস, গবেষণাসহ একাডেমিক কাজে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি নিত্যদিন। শিক্ষকদের গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত ডাটা দিয়েছি, কিন্তু তারা তা ব্যবহার করতে পারছে না। ডিজিটাল যুগে এসেও এসব সমস্যা থাকার কথা না। কিন্তু আমরা তা পোহাচ্ছি। যত দ্রæত সম্ভব এ থেকে আমাদের নিস্পত্তি পাওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
নতুন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক বলেন, নেটওয়ার্কের বিষয়ে আমি প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। প্রশাসন মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করেছিল। গত ডিসেম্বরেই টেলিটক কো¤পানি টাওয়ার বসানোর কথা। কিন্তু এখনো তা হয়নি। এছাড়া, অনুষদে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের কাজ চলমান। আশাকরি, খুব দ্রুত সেখানে নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান হবে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নূর আহমদের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও সাড়া মেলেনি।
প্রতিনিধি/একেবি