নিজের গ্রুপের কর্মীকে কোপানোর অভিযোগে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের আবাসিক হলের কক্ষ ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুর ২টার দিকে শাহ আমানত হলের ৩১১ নম্বর কক্ষ ভাঙচুর করে করা হয়।
এর আগে নিজ গ্রুপ সিএফসির কর্মীকে কোপানোর ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের বিরুদ্ধে। এই সংক্রান্ত একটি ফোনকল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
অডিও রেকর্ডটি ভাইরাল হওয়ার পর রেজাউল হক রুবেলকে ক্যা¤পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে তার গ্রুপ সিএফসি। গত বুধবার রাত ১টার দিকে শাহ আমানত হলের সামনে রুবেলের গালে গালে, জুতা মারো তালে তালে, রুবেলের চামড়া, তুলে নিব আমরা সংবলিত স্লোগান দিতে দেখা যায় সিএফসির কর্মীদের।
তাদের অভিযোগ, রুবেলের বিরুদ্ধাচারণ করলে নিজ দলের কর্মীদের শায়েস্তা করতে দ্বিধাবোধ করেন না। এছাড়া ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে রুবেল অনৈতিক ফায়দা লুটেছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তারই দলের কর্মীরা।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সিএফসির কর্মী খালেদ মাসুদ বলেন, রুবেল নিজের কর্মীকে আঘাত করার কথা স্বীকার করছে। যে নিজ দলের কর্মীকে আঘাত করতে পারে তার আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন উঠে। অতীতেও সে এমন ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে। তার কাছে আমরা কেউই নিরাপদ না। সে যেকোন সময় আমাদেরকেও অন্য দলের কর্মীদের দিয়ে আঘাত করতে পারে। তাছাড়া সে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে অনৈতিক ফায়দা লুটেছে। আদর্শ বিবর্জিত কোন নেতার নেতৃত্ব আমরা মানবো না। তাই চবি ক্যাম্পাস থেকে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো।
এদিকে ভাইরাল হওয়া রেকর্ডে শোনা যায়, নিজ দলের এক কর্মীকে পাশে থাকার কথা বলতে গিয়ে সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, রমজাইন্নারে (শাখা ছাত্রলীগের উপ-দফতর সম্পাদক ও সিএফসির কর্মী) মারতে হইছে আমার? আমারে চিটাগাং ভার্সিটির সবাই ভয় পাইতো রে ভাই, ভয় পায়। তুই শুধু আমার পাশে থাক। বাকি কাজ অটো হয়ে যাবে। রমজাইন্নারে কোপ পড়ছে না? অনেক লাফাইছে না? লাফাইছে রমজান। ওই হিসেবে পড়ি গেছে। সবকিছু মুখে বলতে হবে কেন? চুপ করে থাক না। আমারে দাঁড়াইতে দে। দেখবি অনেকে অনেক হিসাবের মধ্যে হয় পায়ে এসে পড়বে নয়তো নিজের মতো নিজের হিসাব মিলাই নিবে।
বিজ্ঞাপন
তবে অডিও ফোনকল রেকর্ডটিকে সুপার এডিটেড দাবি করে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এটা সুপার এডিটেড। আমার বিভিন্ন কথাবার্তাকে সংযোজন বিয়োজন করে এই অডিও রেকর্ডটা বানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও সিএফসির নেতা সাদাফ খান বলেন, এটা রেজাউল হক রুবেলেরই ফোনকল রেকর্ড। নিজের কর্মীকে আঘাত করার কথা স্বীকার করছে সে (রুবেল)। তার কাছে নিজ দলের কর্মীরাও নিরাপদ না। সে ছাত্রলীগের আদর্শ বহির্ভ‚ত। তাই তাকে চবি ক্যা¤পাস থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা তার রুম ভাংচুর করেছে। তার ক্যা¤পাসে থাকার কোনো অধিকার নেই।
প্রসঙ্গত, গত পহেলা জুন ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিন শাখা ছাত্রলীগের উপ-দফতর সম্পাদক রমজান হোসাইনকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষের কর্মীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ২০১৯ সালের ১৩ জুলাই সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। এর পর থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা অপকর্মের সাথে সংশ্লিষ্টতায় আলোচনায় আসেন এই নেতা। এমনকি তার বিরুদ্ধে ঝাড়-মিছিলও করেছেন খোদ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
প্রতিনিধি/একেবি