সবুজ পাতার মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে মিয়াজাকি বা সূর্যডিম। কোনো কোনো গাছে আবার ঝুলছে চিয়াংমাই, ডকমাই, ব্রুনাই কিং, আমেরিকান পালমা, কিউযায়সহ নানা প্রজাতির বিদেশি জাতের আম। থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা এসব আম দেখে মনে হবে এই যেন বিদেশি আময়ের স্বর্গরাজ্য।
এমন দৃশ্য দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকায় আব্দুল মান্নান মিয়ার আম বাগানে। ওইসব আমের আকার, আকৃতি, রঙ, মিষ্টতা আর স্বাদ প্রচলিত আম থেকে অন্য রকম। ইতোমধ্যে তার গাছের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। আব্দুল মান্নান মিয়ার চাষ করা ওইসব আমের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম হলো মিয়াজাকি বা ‘সূর্যডিম’। মূলত এই আম বাগানের শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। তার এই আম ও গাছ দেখতে মানুষের আগ্রহের শেষ নাই। শখের বশে বিদেশি জাতের বিভিন্ন আম প্রথমবারের মতো চাষ করে তিনি এলাকায় বাজিমাত করেছেন। পাশাপাশি তার বাগানে সবজি চাষও করেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
আব্দুল মান্নান মিয়া ওই গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান ডিলারের ছেলে।

আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, ছোট বেলা থেকেই গাছের প্রতি তার অন্য রকম শখ ছিল। কিন্তু চাকরি করার সুবাদে বাগান করা তার হয়ে ওঠেনি। চাকরি থেকে অবসরে বাড়িতে আসার পর গত ২ বছর আগে ইউটিউবের কল্যাণে দেশি-বিদেশি নানা জাতের আম চারা ও চাষ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নেন। এরপর স্থির করেন বাড়িতে বিদেশি জাতের আমের বাগান করার। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে বাড়ি সংলগ্ন প্রায় ২০ শতক জায়গার মধ্যে বিদেশি জাতের আম বাগান গড়ে তোলেন। অনলাইনের মাধ্যমে রাজশাহী, রংপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা সংগ্রহ করেন। বর্তমানে তার বাগানে ৩০টি বিদেশি গাছ রয়েছে। এ বছর প্রত্যেকটি গাছে ফলন এসেছে। পাশাপাশি রয়েছে দেশী গাছও। প্রথম বারের মতো বিদেশি গাছ রোপণের পর তাতে বাহারি ফল আসাতে তিনি এলাকায় চমক সৃষ্টি করেন। ইতোমধ্যে তার বাগানের সুনাম এলাকার চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই বাগান দেখতে এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসছেন।
সরেজমিন বাগান পরিদর্শনে দেখা যায়, বাগানের চারদিকে নেটজাল আর জালি দিয়ে বেড়া দিয়ে ঘেরা। ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ছে সারি সারি বিদেশি জাতের আমের গাছ। প্রতিটি গাছের বয়স প্রায় ৩ বছর। প্রতিটি গাছে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির আম। কোনোটাতে মিয়াজাকি বা সূর্যডিম, আবার কোনো কোনোটাতে চিয়াংমাই, ডকমাই, ব্রুনাই কিং, আমেরিকান পালমা, কিউযায়সহ নানা প্রজাতির বিদেশি জাতের আম। বেশ কয়েকটি গাছে আবার ঝুলছে পেঁপের মতো মতো। কাচা অবস্থায় এর রঙ কালছে সবুজ। আবার অনেক গাছে রঙিন আমও দেখা মিলেছে। আমগুলো দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও তেমনি সুমিষ্ট।
বিজ্ঞাপন

কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, বিদেশি জাতের রঙিন আম দেখতেই এখানে এসেছি। আগে কোথাও এসব আম চাষ দেখিনি। বিদেশি জাতের আম দেখে খুবই ভালো লেগেছে।
পৌর শহরের কলেজ পাড়া এলাকার মো. সাব্বির হোসেন বলেন, লোকমুখে শুনে তিনি এই বাগান দেখতে এসেছেন। এই প্রথম তিনি বিদেশি নানা জাতের আম দেখেন। আমের চারা সংগ্রহ, পরিচর্যা আর ফলনসহ নানা বিষয়ে পরামর্শ নেন নিয়েছেন তিনি। এমন একটি বাগান তৈরির জন্য আগ্রহ দেখালেন তিনি।
আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, কৃষি কাজের প্রতি যতেষ্ট তার আগ্রহ রয়েছে। চারা ক্রয়, রোপণ, বেড়া দেওয়াসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর প্রতিটি গাছে ভালো ফলন এসেছে। কোনো কোনো গাছের এক আম ২ কেজিরও বেশি হয়েছে। আর কিছু গাছে এক একটি আমের ওজন ৩শ গ্রামের ওপর হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের মাটিতে বিদেশি জাতের আমের ফলন নিয়ে এক প্রকার দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্ত এখন আর দুশ্চিন্তা নেই। আশা করছি, ফলন ভালই হবে। নিয়মিত পরিচর্যা করা হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি ছাদ কৃষিও করছেন। ছাদ বাগানে দেশীয় নানা জাতের ফল, সবজি রয়েছে বলেও জানার তিনি।
মো. মোশারফ হোসেন নামে আরেক যুবক বলেন, দেশের মাটিতে বিদেশি ফল হচ্ছে—বিষয়টা খুবই চমৎকার। দেশেই যদি বিদেশি পল উৎপাদন করা যায় তো বিদেশ থেকে আর উচ্চমূল্যে ফল কিনেতে হবে না। তাছাড়া, দেশে এসব ফল বিক্রি করে ভালো আয়ও করা যাবে। তাই বেকার যুবকরা যদি এই ফল চাষে আগ্রহী হয় তাহলে বেকার সমস্যা অনেকটা লাঘব হবে।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, এ উপজেলায় নানা প্রজাতির বিদেশি জাতের আমের আবাদ শুরু হয়েছে। ওইসব আম দেখতে খুবই সুন্দর, রয়েছে সুস্বাদুও। তবে সৌখিন মানুষরা মূলত এসব চাষ করছের বেশি। তবে পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকায় আব্দুল মান্নান বিদেশি ফল চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন। তার ফলন ভাল করতে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এলাকার আরও কেউ যদি এমন বাগান করতে আগ্রহী হয়, তবে তাদেরও এ বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।
টিবি

