মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

চা শ্রমিকদের ভাগ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪ জুন ২০২৩, ০৪:১৫ এএম

শেয়ার করুন:

চা শ্রমিকদের ভাগ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি

চা বাগান। শিল্পীর ক্যানভাসের মতো সাজানো সবুজের এই রাজ্য দারুণভাবে টানে প্রকৃতিপ্রেমীসহ অনেককেই। চা বাগানের দুইটি পাতা একটি কুঁড়ি তোলার ছবি যতটা চোখকে মুগ্ধ করে, এই চা শিল্পের শিল্পী চা শ্রমিকদের জীবনের গল্প ততটা আনন্দদায়ক বা সৌন্দর্যে মোড়া নয়। এখানে আছে কান্না ও আর্তনাদ।

৪ জুন, রবিবার জাতীয় চা দিবস। তৃতীয় জাতীয় চা দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য 'চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিকবান্ধব চা শিল্প’।


বিজ্ঞাপন


বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যোগে চায়ের রাজধানী বলে পরিচিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে জাতীয় চা দিবসের মূল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রথমবারের মত ‘জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩’ প্রদান করা হবে। আটটি ক্যাটাগরিতে আট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে পুরস্কার। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার হস্তান্তর করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

চা শ্রমিক ইউনিয়নের সূত্রমতে, বর্তমানে সারাদেশে ১৬৭ চা বাগানে চা জনগোষ্ঠী রয়েছেন ৫ লক্ষাধিক। এরমধ্যে শ্রমিক রয়েছেন ১ লক্ষ ৪০ হাজারের উপরে। এছাড়া সিলেট বিভাগের তিনটি জেলায় ১৩৫টি চা বাগান রয়েছে। যেখানে প্রায় ৪৭ হাজার নিবন্ধিত শ্রমিক এবং প্রায় ১৬ হাজার অনিবন্ধিত শ্রমিক কাজ করছেন। চা শ্রমিকদের ৬৪ শতাংশই নারী। একজন চা শ্রমিকের সাপ্তাহিক বেতন ১১৯০ টাকা।

জানা গেছে, দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরিতে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে নারী শ্রমিকেরা বিশাল বাগানের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চায়ের পাতা তোলেন। তারা দল বেঁধে পাহাড়ের পর পাহাড়ের গা বেয়ে টিলায় টিলায় এই কাজ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পর্যাপ্ত খাদ্য, চিকিৎসাসহ মৌলিক অধিকারও ঠিকমতো পান না তারা। অপুষ্টি ও দরিদ্রতায় যেন নতজানু এক একটি চা শ্রমিকের পরিবার।

চা শ্রমিকেরা আক্ষেপ করে জানান, চা শিল্পের উন্নতি হলেও বদলাচ্ছে না চা শ্রমিকদের জীবন। সারাদিন কাজের পর একজন চা শ্রমিকের আয় হয় ১৭০ টাকা। নেই নিজস্ব জাতিগত পরিচয়, লেখাপড়ার সুযোগ নেই, নেই স্যানিটেশনও, রয়েছে চিকিৎসার অভাব।


বিজ্ঞাপন


বাগান কর্তৃপক্ষের ঘর মেরামত করে দেওয়ার কথা থাকলেও তা হয় না বছরের পর বছর। নেই নিজস্ব কোনো জায়গা। বাগানে কাজ না করলে থাকার জায়গাও হারাতে হবে জানিয়ে দেওরাছড়া চা বাগানের চা শ্রমিক বৃটিশ ঘাটুয়াল বলেন, ৫ থেকে ৬ সদস্যের অনেক পরিবার আছে যেখানে ১ জন কাজ পাচ্ছে বাকিরা এই ১৭০ টাকার উপর নির্ভর করেই দিন চালাচ্ছে। ছোট ভাঙাচোরা ঘরে থাকতে হয় গবাধি পশুসহ সন্তানদের নিয়ে। যা অমানবিক।

চা জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কাজ করেন বিশ্বজিত নন্দী। তিনি বলেন, ২০২০ সালের চুক্তি অনুসারে একজন শ্রমিককে অবসর ভাতা হিসেবে সে যত বছর কাজ করেছে তার মোট বছরের গড়ে দেড় মাসের বেতন হিসেবে পেনশন দেওয়ার কথা। কিন্তু সেটা শুধু কাগজে কলমে।

চা বাগানের শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন আসেনি জানিয়ে, চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু ধলাই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, ‘উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি আমাদের জীবনযাত্রায়। এমনকি মৌলিক অধিকারও ভোগ করার সুযোগ পাচ্ছি না। চা বাগানের এই জনগোষ্ঠী এখনও ব্রিটিশ সামন্তবাদ আর স্থানীয় বাবু-সাহেবদের বেড়াজাল ছিন্ন করতে পারেনি।’

বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট ভ্যালির সভাপতি জি এম শিবলী জানান, চা শ্রমিকদের জীবন মান আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে, লেখাপড়া চাকরিতেও অনেকে এগিয়ে গিয়েছে। তাদের আরও উন্নয়নের জন্য কাজ চলছে।  

প্রতিনিধি/আরআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর