একদিকে তীব্র দাবদাহ। অন্যদিকে মাথার ওপর নেই কোনো বৈদ্যুতিক পাখা। ছোট্ট একটি কক্ষে শত লোকের গাদাগাদি—বসার নেই সুব্যবস্থা। তাই হাঁটু গেড়ে অনেকে বসে আছেন বারান্দায়। এ রকমই নানা সমস্যায় ধুঁকছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার ভারত-বাংলাদেশে পারাপারকারী যাত্রীরা। একতলা ভবনের ছোট্ট একটি কক্ষে গাদাগাদি করে চলে ইমিগ্রেশনের কাজ।
ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ভারত-বাংলাদেশের যাত্রীরা আসা যাওয়া করেন। আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের সামনের আখাউড়া-আগরতলা সড়কের অবস্থান। সড়কটি ইমিগ্রেশনের সামনের এলাকা থেকে তিন-চার ফুট উঁচু। এ জন্য অল্প বৃষ্টিতেও আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ভবনের সামনের উঠানে পানি জমে। এতে দুই দেশের যাত্রীদের পানি পাড়িয়েই ইমিগ্রেশন ভবনে প্রবেশ করতে হয়। বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টি হলেও যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
![]()
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে চালু হয় ভারতের ত্রিপুর রাজ্যের গা ঘেঁষা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দের কার্যক্রম। সুবিধাজনক ভৌগলিক অবস্থান হওয়াই এ বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট থেকে অনেকেই যাতায়াতে আখাউড়া ইমিগ্রেশন ব্যবহার করছেন। প্রতিদিন এখান দিয়ে এক হাজারেরও বেশি যাত্রী পারাপার হচ্ছে। গত ৬ মাসে চার কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়। তবে ইমিগ্রেশনের কাজ সাড়তে গিয়ে যাত্রীদের নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি বসার ও লাগেজ রাখার সুব্যবস্থা না থাকায় তাদের বিড়ম্বনা বাড়ছে। এছাড়া ইমিগ্রেশন ভবন থেকে দুইশ গজ দূরে গিয়ে সারতে হয় কাস্টমসের কাজ।
এদিকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে আখাউড়া চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন আধুনিক ভবন নির্মানের কাজ শুরু হলেও ২০১৭ ও ২০১৯ সালে সীমান্ত আইনের অজুহাতে বিএসএফ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। তবে সম্প্রতি বিষয়টির সমাধান নিয়ে দু’ দেশের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে।
![]()
বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজার জেলা থেকে আসা ভারতগামী বাংলাদেশি যাত্রী সুমন আহমেদ বলেন, আমি ইমিগ্রেশনের পরিবেশ থেকে হতবাক হয়ে গেছি। এখানে লাইনের কোন শৃংঙ্খলা নেই। কোন ধরনের আধুনিকায়ন তার কিছু নেই। অথচ আগরতলা ইমিগ্রেশনের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করা যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফারহানা মিলি নামে এক নারী চিকিৎসক তার বাবার চিকিৎসায় ভারতে যাওয়া সময় আক্ষেপ করে বলেন, আগরতলা ইমিগ্রেশন ও আখাউড়া ইমিগ্রেশনের মধ্যে অনেক তফাত। আমাদের এখানে ব্যবস্থা খুবই নাজুক। কোন মালপত্র সঙ্গে নিয়ে আসলে রাখার জায়গা পায় না। আরেকজনের কাছে পাহারা দিয়ে রাখতে হয়। বছরের কয়েকবার যেতে হয়। তবে এর উন্নতি দেখছি না। আশা করছি শিগগিরই যেন অবকাঠামোতে উন্নয়নের ছোঁয়া যাতে লাগে।
![]()
মুক্তি খান নামে এক যাত্রী বলেন,বর্তমানে আখাউড়া ইমিগ্রেশন ভবন নামেমাত্র টিকে আছে। জোড়া তালি দিয়ে সংস্কার করে কোনোমতে, ঝুঁকি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হচ্ছে। স্থায়ী ভবন তৈরি হলে এক ছাতার নিচে সকল পরিসেবা পাওয়া গেলে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের নাগরিকের পাশাপাশি বিদেশিদের আসা যাওয়া আরও বেড়ে যাবে। এবং যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দুভোর্গ লাগব হবে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ইমিগ্রেশন দিয়ে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা আগের চেয়ে কয়েকগুন বেড়েছে। প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি যাত্রী পারাপার করছে। তবে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সারতে যে ধরনের সুযোগ সুবিধা তা খুবই অপ্রতুল। নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হলে দু-দেশের সেবার মান আরো বৃদ্ধি পাবে। আমরা আশা করি সরকার দ্রুত নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করবে।
![]()
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, এ ইমিগ্রেশন দিয়ে দু,দেশের বিপুল সংখ্যাক যাত্রী পারাপার করলেও ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের পর্যাপ্ত সুবিধার কমতি রয়েছে। আমাদের নতুন একটি ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণের কাজ চলছিল তা বিএসেফের বাধায় বন্ধ হয়ে যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কথা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পেলে আমরা ভবনটির কাজ আবার শুরু করতে পারব। এছাড়াও বলে রাখি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখানে একটি আধুনিক স্থল বন্দর নিমার্ণের উদ্যােগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ৩.৫৭ একর জায়গা অধিগ্রহণের কাজ হাতে নিয়েছি। আমরা এক দেড় মাসের মধ্যে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে। তখন স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম আরো বেগবান হবে। এবং যাত্রীদের পরিসেবা আরো উন্নতি হবে।
তিনি আরও বলেন, আশুগঞ্জ নৌ বন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চারলেন সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হলে এবং আধুনিক স্থলবন্দরটি তৈরি হলে আখাউড়া বাংলাদেশের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য স্থলবন্দর হবে।
প্রতিনিধি/এইচই

