শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

প্রচণ্ড খরায় চা গাছে আসছে না নতুন কুঁড়ি

পুলক পুরকায়স্থ
প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৩, ০৫:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রচণ্ড খরায় চা গাছে আসছে না নতুন কুঁড়ি

চায়ের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজারে গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড রোদ গরমে অতিষ্ট জনপদ। চা সমৃদ্ধ জেলায় চা শিল্পেও পড়েছে এই দাবদাহের প্রভাব। অধিক তাপমাত্রা ও বৃষ্টি না হওয়ার কারণে চা গাছে আসছে না নতুন কুঁড়ি। ফলে ব্যহত হচ্ছে চায়ের উৎপাদন।

চা পাতা উত্তোলনের এখন ভরা মৌসুম। তবে বৃষ্টির অভাবে মাটি থেকে রস সংগ্রহ করতে পারছে না গাছ। এতে নতুন কুঁড়ি আসা বন্ধ হয়ে গেছে। মৌসুমের শুরুতে এমন বিপর্যয়ে চা উৎপাদনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কিত চা বাগান সংশ্লিষ্টরা।


বিজ্ঞাপন


সরেজমিনে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চা বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ চা বাগানের সেকশনে সবুজ পাতাগুলো হারাচ্ছে তার নিজস্বতা। এই সময়ে নতুন কুঁড়িতে ভরে থাকার কথা থাকলেও খুব কম চাবাগানেই চা গাছের সবুজ কুঁড়ি দেখা গেছে। শ্রমিকরা প্রখর রোদে চা বাগানে কাজ করছেন। কিছুক্ষণ কাজ করে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়ে ফের আবার কাজ শুরু করছেন।

চা শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, দুটি পাতা একটি কুঁড়িতে বৃষ্টির পরিবর্তে কৃত্রিম পানি সরবরাহের যে উৎসগুলো ব্যবহার হয় সেই লেক, পাহাড়ি ছড়াগুলোতেও নেমে গেছে পানির স্তর। তাপমাত্রার কারণে পোকামাকড় বেড়েছে। নতুন পাতা না আসায় অনেক কষ্ট করে বাগানে ঘুরে ঘুরে চা পাতা উত্তোলন করছেন তারা। ফলে মৌসুমের শুরুতে অর্ধেকের কম উৎপাদন হচ্ছে চা বাগানে।

Tea

শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানের চা শ্রমিক জোনাকি হাজরা বলেন, আগে দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ কেজি চা পাতা একাই তুলছি। এখন সারাদিনে ১৫ কেজি চা পাতা তুলতে পারি না। বাগানে পাতাই নাই। বাগান ঘুরে পাতা তোলা লাগে। এক জায়গায় বেশি পাতা থাকে না বৃষ্টি না হলে কষ্ট দূর হবে না।


বিজ্ঞাপন


শ্রমিকরা এক ঘণ্টা কাজ করে এক ঘণ্টা গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নেয় এভাবে গরম থাকলে মানুষ অসুস্থ হয়ে যাবে জানিয়ে ভাড়াউড়া চা বাগানের শ্রমিক সর্দার উজ্জ্বল হাজরা বলেন, চা বাগানে গরমের কারণে কাজ করা অনেক কষ্ট। রোদের কারণে একটু কাজ করেই শ্রমিকরা ক্লান্ত হয়ে যান।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চা শ্রমিক নেতা দীপংকর ঘোষ বলেন, খরায় বেশি পাতা তোলা যাচ্ছে না। শ্রমিকরা আগে যে পরিমাণ পাতা তুলতেন, এখন তার অর্ধেক পাতা তুলেছেন তারা। প্রতিকূল আবহাওয়ায় চা উৎপাদনে দুর্দিন চলছে।

দীর্ঘ খরায় উল্লেখযোগ্য হারে চা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলবাড়ি চা বাগানের ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমান বলেন, নানা রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। বাগানগুলোতে সদ্য লাগানো চারাগাছ মরে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।

Tea

রাজনগর উপজেলার মাথিউরা চা বাগানের চা বিশেষজ্ঞ আবু সাইদ বলেন, প্রচণ্ড খরায় চা উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। কুঁড়ি শক্ত হয়ে যাওয়ায় পাতা উত্তোলন করা যাচ্ছে না। প্রচণ্ড গরমে মাটি শুষ্ক হয়ে যাওয়ায় চা গাছ খাদ্য তৈরি করতে পারছে না। তীব্র খরায় লাল মাকড়সার সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। সংক্রমণ রোধে কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। তবে আবহাওয়া পরিবর্তন না হলে এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসবে না। এতে চা উৎপাদনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল হক বলেন, বৃষ্টি না হওয়া ও তাপামাত্রা বেশি থাকায় চা গাছ খাদ্য তৈরি করতে পারছে না। যা চা বাগানের জন্য ভালো না। এ কারণে চায়ের কুঁড়ি বের হচ্ছে না। চায়ের উৎপাদন ধরে রাখতে চা গাছে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। চা বাগানে টি সেড লাগাতে হবে। লাল মাকড়সার আক্রমণ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর