সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘হেড স্যার’ আমাকে পরীক্ষা দিতে দিলো না

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০১ মে ২০২৩, ০৬:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

‘হেড স্যার’ আমাকে পরীক্ষা দিতে দিলো না

ফরম পূরণের টাকা নেয়ার পরও হেড স্যার আমাকের পরিক্ষা দিতে দিলো না। আমার জীবন থেকে একটি বছর নষ্ট করে দিলো। কান্না জড়িত কণ্ঠে এমন করে হেড স্যারের ভুলের কথাই জানালেন সদ্য শুরু হওয়া এসএসসি পরিক্ষার এক শিক্ষার্থী। ঘটনাটি ঘটেছে রংপুর মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের রূপসী উচ্চ বিদ্যালয়ে।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ভুলের কারণে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি মেহেদি হাসান নামে এক শিক্ষার্থী। মেহেদি হাসান রূপসী ফতেপুর গ্রামের দিনমজুর মোক্তারুর রহমানের ছেলে।


বিজ্ঞাপন


এ ঘটনায় পরীক্ষার আগের দিন শনিবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল হককে এলাকাবাসী অবরুদ্ধ করে রেখেও কোনো লাভ হয়নি। রোববার (৩০ এপ্রিল) রাণীপুকুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে অভিভাবক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের বাগবিতণ্ডা হয়।

এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছে ওই শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেহেদি এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ ২ হাজার ৮০০ টাকা প্রদান করে প্রধান শিক্ষকের কাছে। এছাড়াও বোর্ডে যাতায়াতের জন্য অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা প্রদান করা হয়। ফরম পূরণ করার পরও রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র পায়নি মেহেদি হাসান।

ওই বিদ্যালয়ের বাকিদের প্রবেশপত্র চলে এলেও তার প্রবেশপত্রের কোনো খবর নেই। প্রধান শিক্ষকের কাছে প্রবেশপত্র চাইলে সময় মতো চলে আসবে বলে টাল-বাহানা করতে থাকে। পরীক্ষার আগের দিন হলে প্রবেশপত্র পেয়ে যাবে বলে মেহেদিকে আশ্বাস দেন ওই শিক্ষক। পরে সে পরীক্ষার আগের দিন সন্ধ্যায় জানতে পারে তার ফরম পূরণ করা হয়নি।


বিজ্ঞাপন


এ ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে অত্র বিদ্যালয়ে শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক রেজাউল হককে অবরুদ্ধ করে রাখে এলাকাবাসী। একপর্যায়ে সেখানে বিশৃঙ্খলাসহ ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। পরে বিষয়টি ইউএনওকে অবগত করলে তার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান বলেন, রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণ করেছি। প্রধান শিক্ষকের কাছে প্রবেশপ্রত্র চাইলে তিনি নানান অজুহাত দেখিয়ে টাল-বাহানা করতে থাকেন। পরীক্ষার আগের দিন সন্ধ্যায় তিনি আমাকে ফোন করে বলে আমার ফরম পূরণ হয়নি। এজন্য এডমিট কার্ড আসেনি। আমি পরীক্ষা দিতে পারব না। সেই সাথে তিনি আরো বলেন, আগামী পরিক্ষায় যাতে অংশ নিতে পারো সে ব্যবস্থা করে দিবেন।

মেহেদি হাসানের বাবা মোক্তারুর রহমান বলেন, ১৬ বছর ধরে দিনমজুরি করে আমার ছেলের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছি। ফরম ফিলাপের টাকা ছাড়াও বোর্ডে যাতায়াতের জন্য অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের ভুলে আমার ছেলে পরীক্ষা পারেনি এর দায় তাকেই (প্রধান শিক্ষক) নিতে হবে। আমি ওনার বিচার চাই। আমার ছেলের জীবন থেকে একটি বছর নষ্ট করে দিলো।

রূপসী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল হক বলেন, মেহেদি হাসানের ফরম ফিলাপ করতে গিয়ে ভুল হয়েছে। বিষয়টি জ্ঞাতস্বরে হয়নি। এজন্য তারা কয়েকদফা আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছেন।

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব) রুহুল আমিন বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। তদন্ত করে দেখা হবে। 

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর