সৈয়দ তোরাব আলী চৌধুরী জমিদার বাড়ির পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইতিহাসের স্মৃতি। বাড়িটি ঘিরে আছে নানান গল্প। লোকমুখে শোনা যায় বিভিন্ন কাহিনিও। সবমিলে ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় সুনসান আর জঙ্গলে ঘেরা বাড়িটিকে ‘ঐতিহ্য’ হিসেবে ঘোষণারও দাবি আছে স্থানীয়দের। এ জমিদার বাড়িটিকে সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্রের রূপান্তরের দাবিও বহুদিনের।
লোকমুখে শোনা যায়, বাড়িটির দক্ষিণে ছিল হাতিশালা। বড় দুটি হাতি ছিল সেখানে। এখন সেই হাতি নেই, হাতিশালাও আর নেই। হাতি দুটি মারা গেলে জমিদার বাড়ির মাটির নিচে এদের পুঁতে রাখা হয়।
বিজ্ঞাপন

এছাড়া বাড়িটির পশ্চিম পাশে রয়েছে কয়েকশ বছর বয়সী একটি গাছ। যার নাও বলতে পারে না কেউ। তবে লোকমুখে পরিচিত অচিন গাছ হিসেবে। বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে—এটি বট গোত্রীয় বৃক্ষ। তবে কী গাছ সেটা তারা জানাতে পারেননি।
গাছটির পাশেই রয়েছে উঁচু একটি মাঠ। অনেক আগে গাছটি কাটার চেষ্টা করেও কেউ কাটতে পারেনি। যখন গাছের পাতা ঝরে তখন ২-৩টি জোড়া লাগানো অবস্থায় মাটিতে পড়ে। গাছটির ডালে ডালে পরগাছা গজালেও দেখলে মনে হবে না গাছটি কয়েক শ বছর আগের। শত বছর ধরে গাছটি একইরকম আছে। অনেকে এখানে এসে মনবাসনা পূরণের জন্য মানত করেন।

বিজ্ঞাপন
বলছি বগুড়া শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে কাহালু উপজেলার মুরইল গ্রামের কথা। এই গ্রামের মাদরাসা কাছে রয়েছে সৈয়দ তোরাম আলী চৌধুরী জমিদার বাড়ি। একসময় শানবাঁধানো ঘাটের বিশাল পুকুর ছিল। পাড়ে বিশাল এলাকা নিয়ে ছিল এই জমিদার বাড়ি। এখনও শহরের বুকে এই গ্রামটি টিকে থাকলেও জমিদার বাড়িটি এখন প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। এই বাড়ি আজ অনেকটাই বিধ্বস্ত। সংকুচিত হয়ে পড়েছে বাড়ির আঙিনা। ভেঙে গেছে পুকুরের শানবাঁধানো ঘাট। ফলে বাড়িটি উদ্ধার এবং সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।
অতীতে কাহালু ছিল একটি প্রাচীন ও ব্যবসায়িক জনপদ। বগুড়া অঞ্চলের বিভিন্ন পরগনার মধ্যে একটি কাহালু। তাদের মধ্যে সৈয়দ তোরাব আলী চৌধুরী ছিলেন একটি পরগনার জমিদার।

সৈয়দ তোরাব আলী চৌধুরী ছিলেন একজন সংগীত অনুরাগী। সংগীত চর্চা করতেন তিনি। তার বাড়িতে ছিল সংগীত চর্চার জন্য বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র। সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজানোর ক্ষেত্রে তার ছিল দক্ষতা। সেই বাড়িটিতে এখন সংগীত ঘরে নেই এখন বাদ্যযন্ত্র বাজে না।
মুরইল গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে মাদরাসার পশ্চিম পাশে সেই পুকুর। যার পশ্চিম পাড়ে সৌখিন জমিদার বাড়ি। বাড়ির সঙ্গেই ছিল উত্তরাধিকারদের থাকার জন্য বাড়ি ও খাজনা আদায়ের কাচারি ঘর। বর্তমানে তিনটি আলাদা জমিদার বাড়ির আংশিক স্থাপনা থাকলেও সেগুলোর অবস্থা খুবই জীর্ণশীর্ণ। ভেঙে গেছে ছাদ। খসে পড়ছে চুন-সুরকির গাঁথা ইট। লতাপাতায় ছেয়ে গেছে জমিদারের বাড়ি।
পাশেই বাস করেন জমিদারের নাতি সৈয়দ আ. সোবহান বাবু চৌধুরী। তিনি যেখানে থাকেন সেটি আংশিক টিনশেড (ইট) ও আংশিক মাটির ঘর। বর্তমানে জমিদারি সম্পত্তি ওয়াকফ স্টেটের অধীনে। শুধু এই বাড়ির অংশটুকুই এখনও আঁকড়ে ধরে আছেন বাবু চৌধুরী।
বগুড়ার ইতিহাস জানা যায়, সৈয়দ তোরাব আলী চৌধুরী জনস্বার্থে কয়েকশ বিঘা জমি রেখে গেলেও বর্তমানে তার জমিদার বাড়ির চিহৃ মুছে যাওয়ার পথে। এখনও জমিদার বাড়িটি দেখতে আসেন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ।
স্থানীয়দের দাবি— দর্শনার্থীদের জন্য এই জমিদার বাড়ির স্থাপনাগুলো সংস্কার করা উচিত। বাড়িটি সংস্কার করা হলে মুরইল গ্রামে সুন্দর একটা পর্যটন স্পট হবে।
এই বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা জানান, জমিদার বড়িটির কথা তিনি শুনেছেন। তিনি পরিদর্শন করবেন এবং জমিদর পরিবারের সাথে কথা বলবেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
প্রতিনিধি/এইচই

