সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মোগল স্থাপত্যের নিদর্শন পঞ্চগড়ের মির্জা শাহী মসজিদ

এম মোবারক হোসেন
প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০২৩, ১০:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

মোগল স্থাপত্যের নিদর্শন পঞ্চগড়ের মির্জা শাহী মসজিদ

দেশের মোগল স্থাপত্যের নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম মির্জা শাহী মসজিদ। ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটি দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই পর্যটকরা এই মসজিদ দেখতে এসে ইতিহাস জানতে চায়। প্রত্নতত্ব বিভাগের মাধ্যমে ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী এই মসজিদের সংস্কার ও তদারকি জরুরি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা।


বিজ্ঞাপন


পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে এটি অবস্থিত। এই মসজিদ দেখতে প্রায় দিনই দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে। বর্তমানে মসজিদটির তত্ত্বাবধায়ক হচ্ছে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

তবে ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি কত সালে নির্মিত হয়, তা নিয়ে কিছুটা মতপার্থক্য আছে। তবে এটা যে মোগল স্থাপত্য, তাতে একমত সবাই। কারণ, মসজিদটিতে রয়েছে মোগল স্থাপত্য রীতির সুস্পষ্ট ছাপ। মসজিদের শিলালিপি ঘেঁটে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা ধারণা করেন, মির্জাপুর শাহী মসজিদটি ১৬৫৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে (সম্ভাব্য) ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে নির্মিত মসজিদের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকায় এই মসজিদটিও সমসাময়িক কালে নির্মিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, মালিক উদ্দিন নামে মির্জাপুর গ্রামেরই এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেন। এই মালিক উদ্দিন মির্জাপুর গ্রামও প্রতিষ্ঠা করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


কেউ কেউ মনে করেন, দোস্ত মোহাম্মদ নামে জনৈক ব্যক্তি মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। মসজিদের নির্মাণ সম্পর্কে পারস্য ভাষায় লিখিত মধ্যবর্তী দরজার উপরিভাগে একটি ফলক রয়েছে। ফলকের ভাষা ও লিপি অনুযায়ী ধারণা করা হয়, মোগল সম্রাট শাহ আলমের রাজত্বকালে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। মসজিদটির দেয়ালের টেরাকোটা ফুল এবং লতাপাতার নকশা খোদাই করা রয়েছে। মসজিদের সম্মুখভাগে আয়তাকার টেরাকোটার নকশার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, একটির সঙ্গে অপরটির কোনো মিল নেই, প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা।

ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি বিখ্যাত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো-এর দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো। মসজিদের সামনের দেওয়ালে চিত্রাঙ্কন ও বিভিন্ন কারুকার্য রয়েছে যেগুলো একটি অপরটি থেকে আলাদা। এর দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট ও প্রস্থ ২৫ ফুট৷ মসজিদের একই সারিতে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। প্রতিটি গম্বুজের কোণায় একটি করে মিনার রয়েছে।

মসজিদের মূল ভবনের সামনে রয়েছে একটি আয়াতাকার পাকা অঙ্গন। অঙ্গনের উপরিভাগ উন্মুক্ত। অঙ্গনের বাইরে রয়েছে একটি সুদৃশ্য পাকা তোরণ। তোরণটির নির্মাণ কৌশলও অপূর্ব। এতে রয়েছে খিলান করা অন্তঃপ্রবিষ্ট দরজা, উভয় পাশে খাঁজ করা স্তম্ভ এবং ঢাল ও অর্ধ বৃত্তাকার, নাতিদীর্ঘ একটি গম্বুজ। শিল্প সৌন্দর্যের অপূর্ব নিদর্শন এই মসজিদে ব্যবহৃত ইটগুলো রক্তবর্ণ ও অলঙ্কৃত। যা বর্তমান সময়ের ইটের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

মির্জাপুর শাহী মসজিদের আদি নির্মাতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে জনশ্রুতি মতে ও মির্জা বংশীয় উত্তরসুরীগণের অভিমত অনুযায়ী জানা যায়, মির্জাপুর গ্রামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পূর্বপুরুষ ফুল মোহাম্মদ এই মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন। পরে ফুল মোহাম্মদের ভাই দোস্ত মোহাম্মদ সম্ভবত এর নির্মাণকাজ শেষ করেন। এক সময় প্রবল ভূমিকম্পে মসজিদটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রায় দুইশ বছর আগে মুলুকউদ্দীন বা মালেকউদ্দীন এই মসজিদের মেরামত ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ সম্পন্ন করেন। তিনি হুগলির মসজিদের ইমামের মাধ্যমে ইরান থেকে কারিগর এনেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।

মির্জাপুর শাহী মসজিদ পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি মির্জা আহম্মদ শরীফ জানান, ৯০ এর দশকে মির্জাপুর এলাকার সন্তান সাবেক মন্ত্রী ও স্পিকার মির্জা গোলাম হাফিজ কয়েক দফায় মসজিদটি সংস্কারের কাজ করেছিলেন। সে সময়ই প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে মসজিদটি হস্তান্তর করা হয়। এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই পর্যটকরা এই মসজিদ দেখতে এসে ইতিহাস জানতে চায় বলে জানান তিনি।

আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুশফিকুল আলম হালিম বলেন,মির্জাপুর শাহী মসজিদ একটি প্রাচীন নিদর্শন। পঞ্চগড় জেলার যেসব দর্শনীয় স্থান রয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। মসজিদের নিরাপত্তা ও পবিত্রতা রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা করছে।

প্রতিনিধি/ এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর