বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

প্রথমবারের মতো কলাগাছের সুতা থেকে তৈরি হলো দৃষ্টিনন্দন শাড়ি

সুফল চাকমা
প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:২৬ এএম

শেয়ার করুন:

প্রথমবারের মতো কলাগাছের সুতা থেকে তৈরি হলো দৃষ্টিনন্দন শাড়ি
ছবি: ঢাকা মেইল

বান্দরবানে প্রথমবারের মতো কলাগাছের তন্তু (বাকল) থেকে সুতা এবং সুতা থেকে দৃষ্টিনন্দন শাড়ি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির উদ্যোগ ও অনুপ্রেরণায় শাড়িটি তৈরি করেন রাধাবতী দেবী। তার তত্ত্বাবধানে দীর্ঘ একমাসের প্রচেষ্টায় কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি হয়েছে। ১৩ হাতের এ শাড়ির নাম রাখা হয়েছে ‘কলাবতী’। 

শনিবার (১ এপ্রিল) বিকেলে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি কালাঘাটা এলাকায় কলাগাছের সুতা থেকে বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরির পাইলট প্রকল্প পরিদর্শনে গেলে সাংবাদিকদের একথা জানান।


বিজ্ঞাপন


shari

তিনি জানান, বান্দরবান জেলায় অসংখ্য কলাগাছ আছে। ফল দেওয়ার পর কলাগাছটি কেটে ফেলে দেওয়া হয়, সেই ফেলে দেওয়া কলাগাছ থেকেই সুতা তৈরি করা হয়। বর্তমানে অপরুপা বান্দরবানই বান্দরবানের ব্রান্ডিং, যদি আর কেউ দাবি না করে তাহলে কলাগাছের সুতা থেকে তৈরি শাড়ি বান্দরবানেরই ব্রান্ডিং হবে।

শাড়ী তৈরির তাঁত শিল্পী রাঁধাবতী দেবী জানান, তিনি সিলেটে সমবায় অফিসে হ্যান্ডিক্রাফটের উপরে কাজ করতেন। অবসরে যাওয়ার পর ও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি কল্পনাও করেননি যে কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি করা যায়। তার এলাকায় যারা মনিপুরী শাড়ি বুনেন তারা তাকে বলেছিলেন এ দায়িত্ব  না নিতে। কারণ তারা ভয় পাচ্ছিলেন যে, তিনি ব্যর্থ হবেন এবং জেলা প্রশাসকের কাছে কথা দিয়ে তা বাস্তবায়ন না করতে পারার কারণে মনিপুরী  তাঁত শিল্পীরা ছোট হবেন। তিনি এটাকে হিসেবে চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন এবং সফল হয়েছেন। সেই সঙ্গে সফল করেছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসকের চিন্তা-পরিকল্পনাকে।

shari


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও জানান, জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি সাহস যুগিয়েছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তাই ১০ দিনের মধ্যে শাড়ি তৈরি সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন। লম্বা সাড়ে তের হাত প্রস্থ আড়াই হাত তৈরি করতে সময় লেগেছে ১০দিন।

রাঁধাবতী দেবী জানান, তিনি অনেক খুশি। এই শাড়ি তৈরিতেই দ্বিতীয় জীবন লাভ করেছেন। কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি করার জন্য তার মেধা শ্রম দক্ষতা, অভিজ্ঞতা সবকিছু উজার করে দেবেন বলে জানান এই অভিজ্ঞ তাঁতশিল্পী।

shari

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর বান্দরবানের উপ-পরিচালক আতিয়া চৌধুরী বলেন, জেলা প্রশাসকের অনুপ্রেরণায় আমরা বান্দরবানবাসী গর্বিত। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি হলো। আগামীতে আরও নিত্যনতুন সামগ্রী উৎপাদন হবে। যাতে নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি আরও তরান্বিত হয়।

বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও এই শাড়ি তৈরির সার্বিক সহযোগী সাই সাই উ নিনি বলেন, বান্দরবান জেলা প্রশাসকের দুরদর্শী চিন্তার ফসল এই কলাগাছের সুতা থেকে তৈরি ১৩ হাত দৃষ্টিনন্দন শাড়ি। এ পরিবেশবান্ধব শাড়ি সবার কাছে দ্রুত সময়ে পৌঁছে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।

shari

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানান, প্রথমবারের মতো কলা গাছের তন্তু থেকে শাড়ি তৈরি করা হয়েছে। এটা সহজ ছিল না। তাই তিনি এটাকে বিশাল সাফল্য হিসেবে দেখছেন। যদিও একবছর আগে থেকেই কলাগাছের তন্তু থেকে সুতা তৈরি করার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। বান্দরবানে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই এখানকার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। সেই চিন্তা থেকেই কলাগাছের তন্তু থেকে সুতা তৈরি করা হয়, সেই সুতা থেকে পর্দার কাপড়, পাপোজ, ব্যাগ, কলমদানী, বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি করার পর পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি করার।

shari

তিনি বলেন, সুতা তৈরি থেকে শাড়ি তৈরি পর্যন্ত এতো সহজ ছিল না। মৌলভীবাজার থেকে তাঁত শিল্পী রাঁধাবতী দেবীকে বান্দরবানে নিয়ে আসার পর তিনি মত দিলেন এই সুতা থেকে শাড়ি তৈরি করা সম্ভব। প্রথমে একটি ছোট কাপড় তৈরি করার দায়িত্ব দিলে তিনি সফল হলেন, তখন চিন্তা করা গেল যেহেতু কাপড় তৈরি করা গেছে তাহলে শাড়িও তৈরি করা সম্ভব। তারপর সুতা প্রস্তুত করে বুনন পর্যন্ত দশদিনে সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়েছে।কলাগাছের সুতাটি মসৃণ নয়। সেজন্য স্থানীয়ভাবে যতটুকু সম্ভব সুতা মসৃণ ও নরম করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই কলাগাছের সুতাকে আরও কিভাবে মসৃন ও নরম করা যায় সেজন্য গবেষণা করা দরকার। এব্যাপারে তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।

shari  

বান্দরবানে নারীদের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে বান্দরবান জেলা প্রশাসন একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে স্থানীয় প্রায় ৪শ নারীদের কয়েক দফায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি করে তাদের ভাতা প্রদান করা হয়, যাতে তারা আগ্রহী হয় এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয় বলেও জানান জেলা প্রশাসক। 

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর