বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে যশোরে, আসছে আইইডিসিআরের টিম

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে যশোরে, আসছে আইইডিসিআরের টিম
ছবি : ঢাকা মেইল

যশোরে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। একের পর এক রোগী ভর্তি হচ্ছে যশোর জেনারেল হাসপাতালে। স্থান সংকুলান না হওয়ায়, অনেকের শয্যা মিলছে হাসপাতালের বারান্দায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষে বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

এদিকে ডায়রিয়ার কারণ নির্ণয়ে আগামীকাল রোববার (২ এপ্রিল) ঢাকা রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে ৪ সদস্যের একটি গবেষক দল যশোরে আসছেন। তারা শহরের পৌরসভার ধর্মতলা ও আরবপুর এবং শঙ্করপুর ও খুলনা স্ট্যান্ড এলাকার পানি এবং হাসপাতালের ভর্তি রোগীর শরীর থেকে আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষা করবেন।


বিজ্ঞাপন


বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন-অর রশিদ। তিনি বলেন, হঠাৎ করে শহরে সংক্রামণ ব্যাধি ডায়রিয়ার রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যেখানে ২৪ ঘণ্টায় ১০-১২ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হতো, এখন সেখানে ৫০-৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। শুধু তাই নয় গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে ডায়রিয়ায় (রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ৫৩ জন শিশু, মহিলা ও পুরুষ।  তবে এ সময় কোনো রোগী মারা যায়নি। হাসপাতালে ভর্তি ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের অধিকাংশ রোগী মূলত কি কারণে আক্রান্ত হচ্ছে সে বিষয়ে চিকিৎসকরা বুঝতে পারছেন না। তবে হঠাৎ করে বৃষ্টি, ভ্যাপসা গরম এবং বাড়িতে ভারি ও পেট গরম হয় এমন খাবার খাওয়ার কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

সংক্রামণ ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, ৫ শয্যার ওয়ার্ড হলেও রোগী রয়েছে ৫৩জন। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মোট ২৬ রোগী শিশু, মহিলা ও পুরুষ ভর্তি হয়েছেন। ওয়ার্ডের মধ্যে জায়গা না থাকায় রোগীদের হাসপাতালের করিডোরে ও প্রসূতি ওয়ার্ডের পাশে বারান্দায় থাকার জায়গা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ । 

ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী মাসুদ পারভেজ জানান, ৪ রমজান থেকে একটু বাথরুম হচ্ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে অনবরত বাথরুম ও সাথে বমি হচ্ছিল। তাই স্বজনদের সহযোগিতায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি । 

হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি এক শিশুর পিতা ওহিদুল জানান, গত তিন দিন আগে তার বাচ্চাকে তরমুজসহ নানা ফল ফলাদি খাওয়ানো হয়, এরপর থেকে খাওয়া বন্ধ করে দেয় আর পাতলা পায়খানা শুরু হয়ে যায়। অবস্থা খারাপ হওয়ায় সীমাখালী থেকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে তার শিশুকে ভর্তি করা হয়।


বিজ্ঞাপন


শার্শা উপজেলার নাভারণ এলাকার বাসিন্দা নয়ন (৩০) বলেন, ডায়রিয়া হওয়ার মতো তেমন কিছু খেয়েছি বলে মনে হয় না। তবে আমার খাবার পানির প্রতি সন্দেহ হচ্ছে। বাকিটা পরীক্ষা-নিরিক্ষা করলে বোঝা যাবে।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডাক্তার আবু হায়দার মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান বলেন, বৃষ্টির সঙ্গে সকালে গরম ও রাতে ঠাণ্ডা এবং মাঝ দুপুরে ভ্যাপসা গরম অনুভব হচ্ছে। এছাড়া ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবে এবং ভারি খাবার খাওয়ার কারণে পেটের হজমে ত্রুটি হয়ে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ জন্য তিনি রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি কলা ভর্তা, ফেনা ভাত, ডাবের পানিসহ তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আব্দুস সামাদ বলেন, হাসপাতালে যে রোগী ভর্তি হচ্ছেন প্রাথমিকভাবে রোটা ভাইরাস প্রবাহের কারণে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ডায়রিয়ার আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ নির্ণয়ের জন্য ঢাকা রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে যেকোনো দিন তারা যশোরে পরীক্ষার জন্য আসবেন ।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার ডা. হারুন-অর রশিদ জানান, হাসপাতালে ভর্তি অধিকাংশ রোগীর বাড়ি শহরের ধর্মতলা, আরবপুর, খুলনা স্ট্যান্ড এবং শংকরপুর এলাকায়। রোগীদের বেডের সমস্যা হলেও ওষুধ ও সেবাই কোনো কমতি নেই।

তিনি আরও জানান, ঢাকা রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে ৪ সদস্যের একটি গবেষক দল রোববার যশোরে আসছেন। তারা শহরের পৌরসভার ধর্মতলা ও আরবপুর এবং শঙ্করপুর ও খুলনা স্ট্যান্ড এলাকার পানিসহ বিভিন্ন বিষয় এবং হাসপাতালের ভর্তি রোগীর শরীর থেকে আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষা করবেন।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর