বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

চুয়াডাঙ্গায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বিদেশি ফল স্ট্রবেরি

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

চুয়াডাঙ্গায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বিদেশি ফল স্ট্রবেরি
ছবি: ঢাকা মেইল

অত্যন্ত সুস্বাদু আর পুষ্টিকর বিদেশি ফল স্ট্রবেরি চাষ করে প্রথমবারেই সফল হয়েছেন চুয়াডাঙ্গার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা রুহুল আমিন রিটন। তিনি প্রথমবারের মতো ড্রাগনের সাথী ফসল হিসেবে বাণিজ্যিক ভাবে স্ট্রবেরি চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগরের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা রুহুল আমিন রিটন।


বিজ্ঞাপন


তিনি ড্রাগন বাগানের ৪০ বিঘা জমিতে ৯০ হাজার স্ট্রবেরির চারা রোপণ করেন। বৈরী আবহাওয়া ও ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৫ হাজার চারা মারা যায়। বর্তমানে তার জমিতে আছে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার স্ট্রবেরি গাছ। প্রতিটি গাছ থেকে ৬০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত স্ট্রবেরি ফল উৎপাদন হবে। সেই হিসাবে প্রায় ৪০ হাজার কেজি স্ট্রবেরি উৎপাদনের আশাবাদী রুহুল আমিন রিটন।

stroberi

রুহুল আমিন রিটন বলেন, আমি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে খয়েরহুদা গ্রামের মাঠে ৪০ বিঘা জমিতে ড্রাগনের সাথী ফসল হিসেবে প্রায় ৯০ হাজার স্ট্রবেরির চারা রোপণ করে এ চাষ শুরু করি। এরপর বৈরি আবহাওয়া, ছত্রাকজনিত কারণসহ বিভিন্ন কারণে রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার চারা মারা গেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে গাছগুলোতে ফুল আসতে শুরু করে। এরপর কিছুদিন পর গাছে ফল আসা শুরু হয়। গাছগুলো থেকে ভালো পরিমাণ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি গাছেই সাদা ফুল, সবুজ কাঁচা ফল আর পাঁকা লাল স্ট্রবেরি ফল গাছে শোভা পাচ্ছে। জানুয়ারি মাসের শেষের দিক থেকে ফল আহরণ ‍শুরু হয়েছে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যাবে। প্রথম দিকে আমি ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি করেছি। বাজার দর কমে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা কেজি পেলেও ভালো একটা লাভের আশা করছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার কেজি স্ট্রবেরি ফল বিক্রি করা হয়েছে। যার গড় বাজার মূল্য কোটি টাকার কাছাকাছি। ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে রাজধানী ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিচ্ছেন এ ফল।

stroberi


বিজ্ঞাপন


রুহুল আমিন রিটন আরও বলেন, আমার এই বাগান দেখে অনেকে স্ট্রবেরি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। বাইরের জেলা থেকেও অনেক মানুষ আসছেন প্রতিনিয়ত বাগান দেখতে ও চাষের পরামর্শ নিতে। আমার এই স্ট্রবেরি ও ড্রাগন বাগানকে  কেন্দ্র করে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ১০০ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সভাপতি অ্যাডভোকেট মানিক আকবর বলেন, স্ট্রবেরি বিদেশি ফল হওয়াতে দেশে পাওয়া যেত খুবই কম। এখন স্থানীয়ভাবে চাষ হওয়ার কারণে এই ফল কিছুটা সহজলভ্য হয়েছে। এই ফল দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও সুস্বাদু। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ রসাল এই ফল স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। চুয়াডাঙ্গাতে এই ফল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে এই ফলের চাষ যত বাড়তে তত ভোক্তা পর্যায়ে এর সহজলভ্যতা বাড়বে। বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন যত বাড়বে ফলের দাম তত কমতে থাকবে। দাম কমলে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার আওতায় চলে আসবে।

stroberi

চুয়াডাঙ্গা জেলা মার্কেটিং ও কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম বলেন, স্ট্রবেরি বিদেশি জাতের উচ্চ মূল্যের একটি ফল। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গাতে স্ট্রবেরি ফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাজারেও এই ফল বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। স্ট্রবেরি বাজারজাতকরণে কোনো প্রকার সমস্যা হলে বা কোনো সহযোগিতা লাগলে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, চুয়াডাঙ্গায় স্ট্রবেরি চাষে সফলতা দেখতে পারছি। স্থানীয়দের স্ট্রবেরির চাষ ও রোগবালাই সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। আশা করা যাচ্ছে, জেলার কৃষকরা খুব সহজে স্ট্রবেরি চাষ করে লাভবান হতে পারবেন।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর