বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বিনা লাভের দোকান

মিজানুর রহমান
প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০২৩, ০১:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

বিনা লাভের দোকান

চরম অস্থির এই বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না কোনোভাবেই। লেবু থেকে শুরু করে মাংস- সবকিছুতেই ইচ্ছামতো লাভ করছেন ব্যবসায়ীরা। চারদিকে যখন দ্রব্যমূল্য নিয়ে এমন ভয়ঙ্কর খেলা চলছে ঠিক তখনই ভিন্নরকম এক উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ী এসএম ওয়াহিদুজ্জামান।

অস্থিরতার এই বাজারে পবিত্র রমজান উপলক্ষে সবার কাছে উদাহরণ হওয়ার মতো এক কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন তিনি। পুরো রমজান মাস জুড়ে বিনা লাভে পণ্য বিক্রয় করবেন এই ব্যবসায়ী।


বিজ্ঞাপন


ওয়াহিদুজ্জামান চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর পৌর এলাকার শান্তিপাড়া স্কুল মোড়ের বাসিন্দা। মুদি ব্যবসায়ী ওয়াহিদুজ্জামানের উদ্যোগে সহযোগিতা করছেন প্রতিবেশি দুই ভাই হাসানুজ্জামান ও মোহাম্দ রুবেল।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) থেকে এ কার্যক্রম শুরু করেন এবং পুরো রমজান মাসে এ কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন এসএম ওয়াহিদুজ্জামান।

তিনি বলেন, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত- এসব মুসলিম দেশে রমজান মাস আসলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে প্রচুর পরিমাণ ছাড় দিয়ে কম দামে বিক্রয় করা হয়, যেন ভোক্তারা ভালোভাবে সবকিছু কিনতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্রটা ভিন্ন। আমাদের দেশে রমজান মাস আসলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বহুগুণে বেড়ে যায়। এর পিছনে দায়ী অতিমুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ী। যার ফলে বিপদে পড়ে যায় খেটে খাওয়া অসহায় মানুষ। এই চিন্তা থেকেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আমি যে পাইকারি দামে পণ্য ক্রয় করছি সে দামেই বিক্রয় করছি সাধারণ মানুষের কাছে। বাজার থেকে অনেক ভালো মানের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিশেষ করে যেগুলো রোজার মাসে খুব প্রয়োজনীয় আমি সেই জিনিসগুলোই পাইকারিতে কিনে এনে বিনা লাভে বিক্রি করছি। রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন চিনি, তেল, ছোলা, মুড়ি, মিস্রি, বেসন, খেজুর, রুহআফজা, সেলাইন, নুডলস, পোলাওর চাল- এগুলোর বেশি চাহিদা আর এগুলোই সাধারণ ক্রেতারা বেশি নিচ্ছেন। আমি আমার সামর্থ অনুযায়ী পাড়ার মানুষকে সহযোগিতা করতে পারছি— এটাই আমার জন্য অনেক। যাদের সামর্থ আছে তারা যদি সবাই নিজ নিজ এলাকায় এমন উদ্যোগ নেন তাহলে সাধারণ মানুষের অনেক বড় উপকার হবে।

বিনা লাভের দোকানের সহযোগী হাসানুজ্জামান বলেন, ওয়াহিদুজ্জামান ভাই খুব ভালো একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তার সঙ্গে কাজ করতে পেরে ভালো লাগছে। ভালো কাজ করতে পারলে সবসময়ই ভালো লাগে। আমাদের ব্যবসার অভিজ্ঞতা না থাকলেও এই দোকানে যতটা পারছি সহযোগিতা করছি। আমরা প্রথম দিনে শতাধিক ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করতে পেরেছি।


বিজ্ঞাপন


বিনা লাভের দোকানের আরেক সহযোগী মোহাম্মদ রুবেল বলেন, ওয়াহেদুজ্জামান ভাই সবসময়ই এমন মানবিক উদ্যোগ নেন। তার দোকানের পাশে পশুপাখির জন্য পাত্রে পানি রেখে দিয়েছেন। পথচারীদের জন্যও তিনি গরমে খাবার পানির ব্যবস্থা করেন। রোজার মাসে তিনি বিনা লাভে পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা তাকে সহযোগিতা করছি। ভালো কাজে থাকতে পারলেও অনেক ভালো লাগে।

পণ্য কিনতে আসা ক্রেতা আব্দুল কাদের বলেন, আমরা পাইকারি দোকান থেকেও অনেক কম দামে এখানে থেকে জিনিস কিনতে পারছি। আমি তেল, চিনি, মুড়ি, ছোলা, মিছরি নিয়েছি। বাজার থেকে অনেক কম দামে কিনতে পেরেছি।

আরেক ক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, এখানে থেকে যে পণ্যগুলো কিনেছি তার দাম অন্য দোকানের চেয়ে ২০০-৩০০ টাকা কম।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জেলা সভাপতি মানিক আকবর বলেন, ওয়াহিদুজ্জামান যে কাজটা করছেন সেটা প্রশংসার দাবিদার। রমজান মাস এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে অধিক মুনাফা করেন। সেখানে ওয়াহিদুজ্জামান বিনা লাভে অর্থাৎ যে দামে তিনি পাইকারি কিনে আনছেন সেই দামেই তিনি সাধারণ ক্রেতার মাঝে বিক্রি করছেন। এতে তার লাভ তো হচ্ছেই না বরং লস হচ্ছে। কারণ পণ্য আনা-নেওয়া খরচটা নিজে বহন করছেন তিনি। আমরা তার এই কাজকে সাধুবাদ জানাই। তাকে দেখে সবাই উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজ নিজ এলাকাই যদি এমন উদ্যোগ নেন তাহলে রমজানে সাধারণ ক্রেতারা খুব স্বস্তিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর