শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নেই কোনো মূল্য তালিকা, ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছেন দোকানিরা

মিজানুর রহমান
প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৯:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

নেই কোনো মূল্য তালিকা, ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছেন দোকানিরা

চুয়াডাঙ্গা শহরের বেশ কয়েকটি বাজারে মূল্য তালিকা থাকলেও জেলাব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায়ের হাটবাজার ও বেশিরভাগ দোকানেই নেই নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকা। আবার অনেক দোকানে মূল্য তালিকা প্রদর্শিত থাকলেও তাতে মূল্য লেখা নেই। কিছু কিছু মূল্য তালিকার সঙ্গে অন্য দোকানের মূল্য তালিকার রয়েছে বিস্তর ফারাক। দোকানীরা নিজের খেয়াল-খুশিমত প্রতিযোগিতামূলকভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ৩৮ নং ধারা অনুযায়ী, দোকান বা প্রতিষ্ঠানে সহজে দেখা যায় বা বোঝা যায় এমন স্থানে মূল্য তালিকা টাঙানো না হলে বা প্রদর্শন করা না হলে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এ বিধান শুধু কাগজে-কলমেই শোভা পাচ্ছে। বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই বললেই চলে। যার ফলে সঠিকভাবে অনেকেই মানছেন না নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শনীর সরকারি নিদের্শনা।


বিজ্ঞাপন


Bazar

বর্তমান বাজার দর ও মূল্য তালিকা নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগেরও শেষ নেই। ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ রয়েছে, প্রতি বছরই রমজান মাস আসলেই সাধারণ ক্রেতাদের দুর্ভোগ বহুগুনে বেড়ে যায়। নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে দামও বৃদ্ধি পায় এ রমজান মাসকে ঘিরেই। আবার পণ্যে সঠিক দাম না জানার কারণে বাজারে এসে বিপাকে পড়তে হয় ক্রেতাদের। বাজারে মূল্য তালিকা থাকলে প্রতারণার শিকার কম হতে হয়। এছাড়া ব্যবসায়ীরা চাইলেও অনৈতিক মুনাফা করতে পারবেন না।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারের নিচের বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানেই নেই সঠিক মূল্য তালিকা। অনেক দোকানে মূল্য তালিকা আছে তাতে মূল্য লেখা নেই। আবার কিছু কিছু দোকানে রয়েছে গত বছরের মূল্য তালিকা। ক্রেতাদের কাছে বিক্রয় করা পণ্যের মূল্য আর তালিকায় প্রদর্শিত মূল্যের সঙ্গে রয়েছে বিস্তর ফারাক। মাছের বাজারের মূল্য তালিকায় এক বছর আগের মূল্য লেখা

মূল্য লেখা নেই বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকায়


বিজ্ঞাপন


চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারের নিচের বাজারে সাপ্তাহিক বাজার করতে আসা জাহিদুর রহমান বলেন, সঠিকভাবে পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন করা থাকলে দোকানগুলোতে দামের এত অমিল থাকত না। সঠিক মূল্য না জানার কারণে দোকানিরা যে যার মতো দাম হাঁকানোরও সুযোগ পাচ্ছেন। যদি দাম সম্পর্কে সবাই অবগত থাকে তাহলে সঠিক দামে পণ্য কেনা সহজ হতো।

ক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন, অনেক দোকানে মূল্য তালিকা থাকলেও সেটি টাঙানো হয় না। হঠাৎ যখন প্রশাসনের অভিযান শুরু হয় তখন সেটা টাঙানো হয়। অনেক সময় পুরাতন তালিকা দিয়েও ধোঁকা দেওয়া হয়। তালিকায় কি লিখা, দাম কত লেখা তা খুঁটিয়ে দেখা হয় না। যার ফলে এক তালিকা দিয়ে মাসের পর মাস চালানোর অভিযোগ রয়েছে বাজারে আসা এসব ক্রেতাদের। হাট বাজারে মূল্য তালিকা প্রদর্শীত না থাকায় একই পণ্য ভিন্ন ভিন্ন দোকানে ভিন্ন ভিন্ন দাম নেওয়া হয়।

Bazar

বিক্রিত পণ্যের মূল্য আর তালিকায় প্রদর্শিত মূল্যের সঙ্গে রয়েছে বিস্তর ফারাক

বাজারের মাছ ব্যবসায়ী নওশাদ আলী বলেন, বাজারদর সবসময় এক থাকে না। সকালে একদাম আবার বিকালে হয়ে যায় আর একদাম। যেভাবে পণ্যের দাম ওঠানামা করে, তাতে প্রতিদিন আমাদের পক্ষে তালিকা সংশোধন সম্ভব নয়। তাছাড়া অনেক পণ্য মাঝে-মধ্যে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কমেও বিক্রি হয়। তাই তালিকা টাঙানোর গুরুত্ব থাকে না।

আজাদুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, চুয়াডাঙ্গা শহরের নিজের বাজার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার। অথচ এখানকার অধিকাংশ সরকারি ভাবে যে তালিকা দেওয়া হয়েছে তাতেও কিছু লেখা থাকে না। আবার এখানকার অনেক দোকানেও নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকা নেই, আবার কিছু কিছু দোকানে আছে তা সঠিক নয়। দোকানীদের এসব বিষয়ে বললে তারা এগুলো নিয়ে হাসাহাসি করে। সাধারণ ক্রেতারা কারও কাছে অভিযোগ করার সুযোগও পায় না। তাই দ্রুত নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকা টাঙানোসহ অভিযোগ বক্স বসানো খুবই দরকার।

Bazar

কৃষি বিপণন অধিদফতরের মূল্য তালিকায় লেখা নেই কোনো মূল্য

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সভাপতি মানিক আকবর বলেন, আমরা দেখেছি প্রতি বছর পবিত্র রমজান মাস আসলে কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন অজুহাতে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে জেলা মার্কেটিং অফিস থেকে যে মূল্য তালিকা দেওয়া আছে তাতে যদি নির্ধারিত মূল্য লেখা থাকে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন যে দাম নির্ধারণ করে দেন সেটা দোকানে দোকানে প্রকাশ্যে মূল্য তালিকা টাঙ্গানো থাকে তা হলে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বাড়াতে পারে না। বড় বাজারে মূল্য তালিকার যে ডিসপ্লে বোর্ড দেওয়া আছে সেটাও দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। সেটা চালু করা বা বাজারদর নিয়মিত প্রদর্শন করার বিষয়ে জেলা মার্কেটিং অফিসের গুরত্ব চোখে পড়ার মতো না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে বিষয়টি আমলে নেন না ব্যবসায়ীরা।

চুয়াডাঙ্গা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সজল আহম্মেদ বলেন, চুয়াডাঙ্গায় দ্রব্যমুল্যের তালিকা না টাঙ্গানোসহ বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযানে কয়েকজন ব্যসায়ীকে জরিমানাও করা হয়। মুল্য তালিকা প্রদর্শিত আছে কিনা, ক্রয়-বিক্রয় ভাউচার মজুদ আছে কিনা এবং পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি কেমন আছে তা নিয়মিত তদারকী করা হয়।

Bazar

কৃষি বিপণন অধিদফতরের মূল্য তালিকার ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ

জেলা মার্কেটিং অফিসার সহিদুল ইসলাম বলেন, চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারে নিচের বাজারে যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দৈনিক বাজার দরের বোর্ড দেওয়া আছে সেটি করোনাকালীন সময়ের জন্য। এখন আর ওটার কার্যকারিতা নেই। সরকারিভাবে শুধু তেল আর চিনি ছাড়া কোনো কিছুর মূল্য দেওয়া নেই। ব্যবসায়ীরা ক্রয় মূল্য দেখে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করবেন। আর বড় বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য প্রদর্শনীর ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড ছিল তার প্রকল্প শেষ হয়ে গেছে। ওটাও দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর