চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পারিবারিক কলহের জের ধরে প্রবাস ফেরত স্বামী এমদাদুল হককে (৪৮) পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন স্ত্রী নারগিস মোস্তারি (৪০)।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) চট্টগ্রাম চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটে জিহান সানজিদার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন নারগিস ও ভাড়াটে খুনী আইয়ুব নবী।
বিজ্ঞাপন
নিহত এমদাদুল হক উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ওয়াহেদপুর গ্রামের ফরাজি বাড়ির মৃত মনছুর আহম্মদের ছেলে।
এদিকে ঘটনায় নিহত এমদাদের ছোট ভাই কামলা পাশা বাদী হয়ে বুধবার (২২ মার্চ) রাতে নারগিস মোস্তারি (৪০) ও আইয়ুব নবীকে (২২) আসামি করে মিরসরাই থানায় একটি হত্যা মামলা (নং ১৩) দায়ের করেন। নারগিস সাহেরখালী ইউনিয়নের মধ্য সাহেরখালী গ্রামের আলা মিয়া চৌধুরী বাড়ির আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে। আইয়ুব নবী একই বাড়ির নিজাম উদ্দিনের ছেলে। সে পেশায় দিন মজুর।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এমদাদের স্ত্রী নারগিস বলেন, ২০০৪ সালে এমদাদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী প্রবাসে চলে যান। প্রবাস থেকে ঠিকমতো টাকা পয়সা দিত না, অনেক কষ্ট দিত। এর মধ্যে তাদের দুটি সন্তানের জন্ম হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্বামী একেবারে দেশে চলে আসেন। দেশে আসার পরও ঠিকভাবে টাকা পয়সা খরচ করত না। এ নিয়ে তার সঙ্গে আমার প্রায় সময় ঝগড়া হতো। তার আচরণে আমি অতিষ্ঠ হয়ে মেরে ফেলার মনস্থির করেছি। এরপর বিষয়টি আমাদের বাড়ির কাজের লোক আইয়ুব নবীকে বলি। সে প্রথমে রাজি না হলেও পরে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমার স্বামীকে খুন করতে রাজি হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার তিনদিন আগে বাবার বাড়িতে থেকে স্বামীর বাড়ি ওয়াহেদপুরে চলে আসি। আসার সময় সাহেরখালী ভোরের বাজারের একটি ফার্মেসি থেকে ঘুমের ঔষধ নিয়ে আসি। পরিকল্পনা অনুযায়ী মঙ্গলবার (২১ মার্চ) আছরের পর রান্না করা সেমাইয়ের সঙ্গে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দিই। সেমাই খেয়ে আমার স্বামী অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর আইয়ুব নবীকে ফোন করে বাড়িতে আসতে বলি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সে আমার ঘরে আসে। তখন আমার স্বামীর জ্ঞান ফিরে আসে। তখন তাকে বলি ডাক্তার এসেছে, তোমাকে চিকিৎসা করতে। এরপর আমি একহাত চেপে ধরি, আইয়ুব নবী আরেক হাতে জিআই তার পেছিয়ে মাল্টিফ্লাগ থেকে সংযোগ দিয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর মাল্টিফ্লাগ পাশের পুকুরে ফেলে দিয়েছি।
জবানবন্দিতে নারগিস আরও বলেন, মারা যাওয়ার পর আমার স্বামীর মানিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে আইয়ুব নবীকে ভাড়ার জন্য দিই। এরপর রাত সে চলে যায়। পরবর্তীতে রাত ২টায় আমার দেবর কামাল পাশাকে ফোন করে তার ভাই বিদ্যুৎ পৃষ্টে মারা যাওয়ার বিষয়টি জানাই।
বিজ্ঞাপন
নিহতের ছোট ভাই ও মামলার বাদী কামাল পাশা বলেন, আমরা শুরু থেকে বলেছি। আমার ভাইকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। আদালতে দেওয়া আসামির জবানবন্দি অনুযায়ী আমাদের কথা সত্য হয়েছে। আমি মিরসরাই থানা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেফতার করার জন্য। আমরা আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। যাতে অন্য কোনো স্ত্রীর হাতে তার স্বামীকে নির্মমভাবে খুন হতে না হয়।
মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কবির হোসেন বলেন, এমদাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্ত্রী নারগিস ও ভাড়াটে আইয়ুব নবীকে আসামিকে করে তার ছোট ভাই কামাল পাশা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এজারহারনামীয় দুই আসামিকে গ্রেফতার করে বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে পাঠাই। বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে দুই আসামী হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার আলামত জিআই তার, মালিফ্লাগ ও ৫০০ টাকার একটি নোট উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।
উল্লেখ্য, গত বুধবার ভোরে ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ওয়াহেদপুর এলাকায় এমদাদুল হকের ঘর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। জিজ্ঞাসাদের জন্য স্ত্রী নারগিস মোস্তারিকে গ্রেফতার করা হয়। একইদিন ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আইয়ুব নবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রতিনিধি/এসএস

