শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কেশবপুরে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর ‘লাম্পি স্কিন’

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২৩, ০২:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

কেশবপুরে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর ‘লাম্পি স্কিন’
ছবি : ফাইল

যশোরের কেশবপুরে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর ‘লাম্পি স্কিন’ (পক্স বা বসন্ত জাতীয়) রোগ। উপজেলার পাঁজিয়া, সুফলাকাটি, হাসানপুর ইউনিয়নসহ বেশির ভাগ এলাকায় গরুর এ রোগ দেখা দিয়েছে। গরুর মালিকেরা এ রোগ নিরাময়ে কবিরাজ চিকিৎসায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

তবে প্রাণিসম্পদ অফিস বলছে, এ রোগ সারতে বেশ সময় লাগে। গরুর এ রোগ দ্রুত সারানোর আশায় অনেকে কবিরাজের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তারা ভুল করছেন। আক্রান্ত গরুর প্রাণিসম্পদ অফিসের পরামর্শেই চিকিৎসা করানো উচিত।


বিজ্ঞাপন


এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ডাক্তারি চিকিৎসায় কাজ না হওয়ায় গরুর মালিকেরা কবিরাজি চিকিৎসার ওপর নির্ভর করছেন। কবিরাজের ঝাড়ফুঁকের পাশাপাশি নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ একসঙ্গে বেটে রস খাওয়ানো হচ্ছে। অনেকে আক্রান্ত গরুর গায়ে নিমপাতা বেঁধে রাখছেন।

উপজেলার পাঁজিয়া গ্রামের কৃষক জয়দেব বলেন, তাঁর একটি গাভি ও একটি বাছুর লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বাছুরটি প্রায় ২০ দিন ধরে আক্রান্ত। ডাক্তারি চিকিৎসা নিয়েও কোনো কাজ হয়নি। ১০ দিন গাভিটিও আক্রান্ত হয়ে রয়েছে। বাছুরটির হাঁটু ফুলে এখন রক্ত ঝরা শুরু হয়েছে। ওষুধে কাজ না হওয়ায় এখন কবিরাজি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গরু দুটি খুবই দুর্বল হয়ে গেছে।

এলাকাবাসী জানায়, পাঁজিয়া ইউনিয়নের মনোহরনগর গ্রামের রবি কুমার ঘোষের তিনটি, স্বরূপ বিশ্বাসের একটি, রেজাউল ইসলামের দুটি, মাদারডাঙ্গা গ্রামের অশোক দাসের দুটি, মাজহারের একটি, পাঁজিয়া গ্রামের সনৎ চৌধুরীর দুটি গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেকের গরুই এই রোগে আক্রান্ত।

গরুর লাম্পি স্কিন রোগ রোধে কেশবপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য হাটবাজারে মাইকিংসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ৮৪০টি চিঠি দেওয়া হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


হাসানপুর ইউনিয়নের পল্লি প্রাণি চিকিৎসক আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, তাঁর ইউনিয়নে ৫০ ভাগ গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তিনি শুক্রবার তিনটি বাড়িতে গিয়ে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা দিয়েছেন।

সুফলাকাটি ইউনিয়নের পল্লী প্রাণি চিকিৎসক গোলাম কিবরিয়া মনি বলেন, সুফলাকাটি ইউনিয়নে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার ১০টি বাড়িতে গিয়ে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা দিয়েছেন। প্রতিদিনই এভাবে চিকিৎসা চলছে।

পাঁজিয়া গ্রামের কবিরাজ সোহরাব হোসেন গাজী বলেন, তিনি এ রোগে আক্রান্ত গরুকে ঝাড়ফুঁকের পাশাপাশি নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ একসঙ্গে বেটে রস খাওয়ানোর মাধ্যমে চিকিৎসা দেন। তিনি সম্প্রতি শতাধিক গরুকে চিকিৎসা দিয়েছেন। 

ওই কবিরাজের দাবি, এ চিকিৎসায় গরু ভালো হয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অলোকেশ কুমার সরকার বলেন, লাম্পি স্কিন জাতীয় রোগ মশা-মাছি থেকে ছড়ায়। এ রোগের এখন পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। আক্রান্ত গরু ভালো হতে বেশ সময় লাগে। সাধারণ চিকিৎসা দিয়েই আক্রান্ত গরু ভালো করা হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আক্রান্ত কোনো গরুর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তবে দ্রুত ডাক্তারি চিকিৎসা না নিলে আক্রান্ত বাছুরের মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। যারা আক্রান্ত গরুর কবিরাজি চিকিৎসা করাচ্ছেন, তারা ভুল করছেন। প্রাণিসম্পদ অফিসের পরামর্শে চিকিৎসায় এ রোগ ভালো হচ্ছে। গরুর এ রোগ সম্পর্কে ঢাকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর