শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ছয় মাসের জন্য এমপি হতে ‘মরিয়া’ আওয়ামী লীগের ২৭ জন

এম আই খলিল
প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২৩, ১০:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

ছয় মাসের জন্য এমপি হতে ‘মরিয়া’ আওয়ামী লীগের ২৭ জন

মহানগর ও বোয়ালখালী উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য (এমপি) হতে মরিয়া আওয়ামী লীগের ২৭ জন। ইতোমধ্যে তারা দলীয় মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে প্রয়াত দুই সংসদ সদস্যের স্ত্রী, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা এবং ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও পেশাজীবীও রয়েছেন।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিন দফায় এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দল জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদল। ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর তিনি মারা গেলে চলতি মেয়াদে প্রথম দফায় আসনটি শূন্য হয়। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। তিনি গত ৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান।


বিজ্ঞাপন


আগামী ২৭ এপ্রিল এই আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৭ মার্চ। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৯ মার্চ। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ৫ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ৬ এপ্রিল।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতর থেকে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হয় গত ২০ মার্চ। ২২ মার্চ শেষদিন পর্যন্ত ২৭ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে দফতর থেকে জানানো হয়েছে।

Awami Leagueনেতাকর্মীদের মতে, একাদশ সংসদের মেয়াদ আছে আর মাত্র ১০ মাসের মতো। এর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় শূন্য হয়েছে আসনটি। এ দফায় যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি সর্বোচ্চ ছয় থেকে আট মাসের মতো মেয়াদ পাবেন।

এই স্বল্প সময়ের জনপ্রতিনিধি হতেও মরিয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। যাদের অধিকাংশেরই খুব বেশি পরিচিতি নেই এলাকায়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছেন- যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সুকুমার চৌধুরী। যাকে এলাকার লোকজন এমনকি আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরাও চেনেন না বলে জানান।


বিজ্ঞাপন


তবে সুকুমার চৌধুরীর দাবি, বোয়ালখালীর ঘরে ঘরে আমার ছবি আছে। সবাই আমাকে চেনে। অতীতে আমি এলাকায় কোটি কোটি টাকা ঢেলেছি। নগর ও বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতার পেছনে আমি টাকা খরচ করেছি। আমি দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছি। আমাকে মনোনয়ন দিলেও কাজ করব, না দিলেও কাজ করব।

এছাড়া মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন। তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। আশির দশকে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। পরিণত বয়সে আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকে পড়েন। প্রায় তিন দশক ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও মাঝে মাঝে চট্টগ্রামে এসে সভা-সেমিনার করেন।

Electionমনোনয়নপ্রত্যাশী মনোয়ার হোসেন বলেন, আমি বহু বছর বিদেশে কাটিয়েছি। কিন্তু এখন আমি আমার দেশের মাটির জন্য কিছু করতে চাই। সে জন্য আমি আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদ নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বঞ্চিত এলাকা বোয়ালখালীর জন্য বিশেষ কিছু করতে চাই।

দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য বিজয় কুমার চৌধুরী। তিনি পেশায় প্রকৌশলী। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। উপনির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি এলাকায় সরব হয়েছেন।

বর্ষীয়ান রাজনীতিক মঈনউদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুর পর সহধর্মিণী সেলিনা খান উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। স্বামীর গড়া দল জাসদ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। তবে তিনি মনোনয়ন পাননি। এবার দ্বিতীয় দফা উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তিনি।

সেলিনা খান বলেন, আমার বাবা সারাজীবন আওয়ামী লীগ করেছেন। আমিও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী। আমার স্বামী জাসদ করলেও আমি কোনোদিন মশাল মার্কায় ভোট দেইনি। আমি সবসময় নৌকায় ভোট দিয়েছি। বাদল সাহেবকে তিনবার ভোট দিয়ে এমপি বানিয়েছিল জনগণ। কিন্তু তৃতীয় মেয়াদটা উনি শেষ করতে পারেননি। উনার অনেক স্বপ্ন ছিল, আমি সেগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই। আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে এমপি হতে চাই।

Electionবাদলের আসনে উপনির্বাচনে এমপি হয়েছিলেন মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। তার সহধর্মিণী শিরিন আহমেদ বলেন, স্বামীর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য তিনি এমপি হতে চান। তিনি সত্তরের দশকে ছাত্রলীগের নেত্রী ছিলেন। চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতি শেষে তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।

শিরিন আহমেদ বলেন, আমার পলিটিক্যাল ক্যারিয়ার ছিল। কিন্তু আমার স্বামী একজন সার্বক্ষণিক পলিটিশিয়ান হওয়ায় আমি সংসারের জন্য সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে আসি। কিন্তু রাজনীতি থেকে আমি কখনো হারিয়ে যাইনি। নির্বাচনি এলাকার উন্নয়নে তিনি অনেক পরিকল্পনা করেছিলেন। নিয়তির লিখন, সেই পরিকল্পনা তিনি বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। আমি মোছলেম সাহেবের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই। এলাকার মানুষের পাশে থাকতে চাই।

নগরকন্দ্রিক রাজনীতিতে জড়িত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু এবারই প্রথম কোনো নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তিনি প্রয়াত রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আরশেদুল আলম বাচ্চু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। আমি বঙ্গবন্ধু আদর্শের কর্মী, জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী। আমি মহিউদ্দিন ভাইয়ের পরীক্ষিত কর্মী। আশা করি মনোনয়ন পাব।

২০০৮ সাল থেকে তিন দফা সংসদ নির্বাচনে এবং সাংসদ বাদলের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলেন আবদুচ ছালাম। তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান। আবদুচ ছালাম বলেন, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কিন্তু মহাজোটের স্বার্থে বাদল সাহেবকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। এবার দল আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। আমি মনোনয়ন পেলে অবশ্যই দলকে জয় উপহার দিতে পারব।

বোয়ালখালীর বনেদি ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান এসএম আবুল কালাম পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে ভূমিকা রাখেন। দীর্ঘসময় ধরে দক্ষিণ চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রক ছিলেন তিনি। ২০০১ সালে মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তবে জিততে পারেননি। দল আবারও সুযোগ দেবে বলে মনে করেন সত্তরোর্ধ্ব এস এম আবুল কালাম।

Electionমনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন আবদুল কাদের সুজনও। ১৯৮৪ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি। স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ ও বোয়ালখালী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন।

আবদুল কাদের সুজন বলেন, আমি যখন ছাত্রলীগ করি, তখন ছিল বৈরী সময়। এরশাদ আর খালেদা জিয়ার সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে গ্রাম-গঞ্জে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করেছি। ছাত্রজীবন শেষে সাব রেজিস্ট্রার পদে চাকরি হয়েছিল। ইউসিবিএল ব্যাংকে চাকরি হয়েছিল। সার্বক্ষণিক রাজনীতি করব বলে চাকরিতে যোগ দেইনি। ৩৮ বছর ধরে দলের একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। কোনোদিন দলের নীতি-আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি। আশা করি, দল এবার আমাকে মূল্যায়ন করবে।

এছাড়া মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আবু তাহের, জাতীয় শ্রমিক লীগ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এসএম নুরুল ইসলাম ও আবুল কালাম। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সদস্য আহমেদ ফয়সাল চৌধুরী, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক মাহাবুব রহমান ও নগর কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি এটিএম আলী রিয়াজ খান।

এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সদস্য সাইফুল ইসলাম, এসএম কফিল উদ্দীন, হায়দার আলী চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান ও বোয়ালখালী উপজেলা কমিটির সদস্য খোরশেদ আলম, উপদেষ্টা জাহেদুল হক ও সাবেক সহ-সভাপতি মনছুর আলম মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

এছাড়া নগরীর মোহরা সাংগঠনিক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য আশেক রসুল খান, পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের সদস্য মো. এমরান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ রবি ও দক্ষিণ জেলা তাঁতী লীগের সহ-সভাপতি জহুর চৌধুরী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

তবে শুরু থেকেই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের নাম জোরেশোরে আলোচিত হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি।

প্রতিনিধি/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর