শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘কাঁচাবাজার করতে গেলে মাছ মুখে জুটে না’

নাঈম ইসলাম
প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২৩, ০৫:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

‘কাঁচাবাজার করতে গেলে মাছ মুখে জুটে না’

পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। লাগাম ধরার যেন নেই কেউ! এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। দৈনিক মজুরীতে যারা কাজ করেন, তাদের আয়ের চেয়ে খরচ বেশি। তাই এখন সংসারের খরচ মেটাতে ধারদেনা করছেন অনেকেই। ধারদেনার পরেও অভাব কাটিয়ে উঠতে পারছেন না অনেকে।  

রোববার (১৯ মার্চ) দিনব্যাপী শেরপুরের বিভিন্ন হাটে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য মিলেছে।


বিজ্ঞাপন


সকালে পৌর শহরের আখের মামুদ বাজারে কথা হয় চাতাল শ্রমিক ছমেলা বেগমের সাথে। 

আমি ঝিনিয়া হতে ৫টাকা ভাড়া দিয়ে আসলাম। এখানে এসে জানতে পারলাম আজ খলায় ধান পড়বে না। আকাশের অবস্থা ভালো না, বৃষ্টি নামতে পারে। তাই ফিরে যাচ্ছি বাড়িতে। সপ্তাহে প্রতিদিন কাজ হয় না। আবার কতদিন অর্ধেক বেলা কাজ হয়। সারাদিনের মজুরি দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা। আর অর্ধেক বেলার মজুরি দেড়শ টাকা।

তিনি বলেন, এক লিটার সয়াবিনের দামই তো ২০০ টাকা। চাউলের দাম ৭০টাকা, মরিচও ৬০টাকা। চাল কিনতে গেলে কাঁচাবাজার করার টাকা ফুরিয়ে যায়। আবার কাঁচাবাজার করতে গেলে মাছ মুখে জুটে না। তেলাপিয়া মাছও ২০০টাকা করে, তাহলে কি কিনব আর কি খাব। তারপর তিনটা সন্তান আর স্বামীর অসুখ। আমারও বাত, বেদনা, জ্বর। ওষুধের দাম এখন আগের চেয়ে দুইগুণ বেড়ে গেছে। কাজ বন্ধ থাকলে, চোখে মুখে অন্ধকার নেমে আসে।

hf


বিজ্ঞাপন


একই অবস্থা পাথরভাঙার শ্রমিক শাহিদা বেগমের। তিনি জানান, টানা-পোড়নের সংসারে এখন হানা দিয়েছে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির টান। এতে ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছি।

শ্রীবরদীর কুড়িকাহনিয়া এলাকার বাসিন্দা অটোরিকশাচালক রফিকুল ইসলাম। অটোরিকশায় খরমপুর যাওয়ার পথে কথা হয় চালকের সঙ্গে। এক ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীসহ ছয়জনের সংসার। তিনি বলেন, ‘ভাইগো, পুলাডা স্কুলে সিক্সে পড়ে। বই পুস্তক, খাতা কলমের দাম বাইড়ে গেছে। আর সারাদিন অটো চালিয়ে যে ট্যাহা পাই তাতে পুলাপাইনরে গোশত তো পরের কতা মাছও ঠিকমতো কিনবার পাইনা। মাছের বাজারে আগুন, কাঁচা বাজারেও একই অবস্থা। তেল, ডাল, চাল আর মশলার দামও নাগালের বাইরে।’

খোয়ারপাড় শাপলা চত্বরের আরেক ইজিবাইকের চালক সেকান্দর আলী। তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেও আমাদের আয় বাড়েনি। সবকিছুর দাম খুব বেড়ে গেছে। আমার কোমরের বেদনা আর ডায়াবেটিসকের ওষুধের টাকা জোগাড় করতে গেলে বাজারে টান পড়ে। ধারদেনা করে চলা ছাড়া উপায় নাই। খুব চিন্তায় আছি।

fd

মানবাধিকার সংস্থা ও এনজিও ‘সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটি’র জেলা সভাপতি আলমগীর আল আমিন বলেন, কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে প্রসাধনী, ওষুধ, বাচ্চাদের খাতা কলম সবকিছুর দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। হাট বাজারগুলোতে প্রশাসনের নিয়মিত মনিটরিং বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি। আর হতদরিদ্র ও অসচ্ছল পরিবারের মাঝে সরকারের দেওয়া টিসিবি পণ্য সঠিকভাবে পৌঁছে দিলে এসব পরিবারের ব্যাপক উপকার হবে।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর