শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

হাতিয়ায় শুঁটকি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জেলেদের শঙ্কা

এ.এস.এম.নাসিম
প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২৩, ০৫:০৬ পিএম

শেয়ার করুন:

হাতিয়ায় শুঁটকি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জেলেদের শঙ্কা

মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বিভিন্ন মৌসুমে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ। তবে অন্য মাছের শুঁটকি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা না হলেও প্রতি মৌসুমে এ দ্বীপ থেকে কয়েকশ কোটি টাকার চেউয়া শুঁটকি উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৫টি ঘাটের জেলেরা ব্যস্ত চেউয়া শুঁটকি উৎপাদন নিয়ে।

উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্য মতে- চলতি মৌসুমে চেউয়া শুঁটকির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিকটন। তবে চেউয়ামাছ কম ধরা পড়া, মাছের আকার ছোট হওয়ায় এ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কায় মৎস্য বিভাগ ও লোকসানে দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার জেলে।


বিজ্ঞাপন


সরেজমিনে হাতিয়ার বিভিন্ন ঘাটে গিয়ে ও জেলেদের  সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে চেউয়া মাছের সাইজ ও আকার গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক ছোট। প্রতিটি মাছের সাইজ মাত্র ৩ থোক ৫ ইঞ্চি, যা গত মৌসুমেও ছিল ৮ থেকে ১০ ইঞ্চির মতো। মাছের আকার ছোট হয়ে যাওয়ায় এবার কমে গেছে মূল্য। অথচ দেশের চেউয়া মাছের অর্ধেক চাহিদা মেটায় এ জনপদের মৎস্যজীবীরা। শুধু চেউয়া মাছ আর শুঁটকি নয়, মৌসুমে ইলিশের জন্যও বিখ্যাত হাতিয়ার বিভিন্ন ঘাট। চেউয়া মাছ মুলত ইলিশ মৌসুম শেষ হওয়ার পরে অগ্রাহয়ণ মাস থেকে শুরু হয়ে চৈত্র মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়।

Noakhali

হাতিয়ার জঙ্গলিয়া ঘাটের শুটকি ব্যবসায়ী আলা উদ্দিন বলেন, জেলেরা মেঘনা নদীতে চেউয়া মাছ ধরে এবং সে মাছ রোদে শুকিয়ে তৈরি হয় চেউয়া শুটকি। এ শুটকিগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানেও পাঠানো হয়।

একই ঘাটের জেলে কলিম উল্যাহ বলেন, এখন চেউয়া মাছের আকার ছোট। আগে অনেক বড় বড় চেউয়া মাছ জালে ধরা পড়ত।


বিজ্ঞাপন


স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার লোকের হাত ধরে তৈরি হওয়া এই চেউয়া শুঁটকি ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। যা দিয়ে তৈরি হয় মাছ ও মুরগির খাদ্য (ফিড)। একদিকে নদীতে মাছের আকাল, অন্যদিকে ছোট মাছের মূল্য কম। ঘাটগুলো থেকে প্রধান সড়কে উঠার পথটি ভাঙাচোরা ও চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় বেড়েছে পরিবহন খরচ। সবমিলে চলতি মৌসুমে লোকসানে আছেন শুঁটকি উৎপাদনকারীরা।

Noakhali

জাহাজমারা ঘাটের শুটকি ব্যবসায়ী আলতাফ মিয়া বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আমাদের খরচ বেড়েছে, জেলেদেরও খরচ বেড়েছে। এখন আর এ ব্যবসায় তেমন লাভ নেই। এছাড়া ঘাটের পাশের রাস্তা ভালো না। তাই পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

উপজেলার বিভিন্ন ঘাট সংলগ্ন চরে প্রায় ৫ হাজার একর জমির ওপর চলে এ চেউয়া শুকানো ও শুঁটকি উৎপাদনের কাজ। নদী থেকে মাছ তোলার পর রোদে শুকিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করতে সময় লাগে তিন থেকে চারদিন। উপজেলার জঙ্গলিয়া ঘাট, জাহাজমারাঘাট, কাদিরিয়াঘাট, বুড়িরদোনাঘাট, সূর্যমুখীঘাট, দানারদোনঘাট, কাজীরঘাট, আমতলীঘাট, কাটাখালিঘাট, রহমতবাজারঘাট, নামারবাজার, চেউয়াখালিঘাট, বাজারখাল, ডুবাইখাল ও মুক্তারিয়া ঘাট থেকে প্রতিদিন মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে যায় ইঞ্জিন চালিত প্রায় সাড়ে ৩শ নৌকা। প্রতিটি নৌকায় ২ জন মাঝি, ২৫ জন নাইয়া ও জেলে থাকেন। ঘাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শুঁটকির শতাধিক পাইকারের পাশাপাশি খুচরা বিক্রেতা আছেন অন্তত ৩ শতাধিক।

Nouakhali

তবে চলতি বছর ইলিশ মৌসুমের পরপর ছোট চেউয়া মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ায় চেউয়া মৌসুমে এখন আর আশানুরূপ মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। জেলেদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি সড়ক মেরামতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাজু চৌধুরী। তিনি বলেন, হাতিয়া উপজেলার প্রায় ১০ হাজার জেলে প্রত্যক্ষভাবে শুটকি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। চলতি বছর ৪০ হাজার মেট্রিকটন শুটকি উৎপাদনরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু জেলেদের জালে কম মাছ ধরা পড়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হতে পারে। আগামীতে যাতে মাছের উৎপাদন বাড়তে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ঘাটগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে এ দ্বীপের মৎস্যজীবীদের হাত ধরে দেশের শুঁটকির চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ হলেও দীর্ঘ এত বছরেও যাতায়াত ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি। যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতি করার পাশাপাশি ঘাটগুলোতে রাডার লাইট স্থাপন করলে আরও অনেক বেশি শুঁটকি এ অঞ্চল থেকে উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে আশা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর