মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ফিরে যেতে আগ্রহী না রোহিঙ্গারা

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২৩, ০৫:০৫ এএম

শেয়ার করুন:

ফিরে যেতে আগ্রহী না রোহিঙ্গারা
ছবি : সংগৃহীত

প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত থাকা রোহিঙ্গাদের একটি অংশের তথ্য যাচাই বাছাই করতে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের টেকনাফে অবস্থান করছেন। কিন্তু তারা যেসব রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন ও তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন, তাদের অনেকেই বলছেন যে তারা এখনই মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী না।

মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল এই দফায় টেকনাফ এসে যাদের সাথে দেখা করেছেন তাদের মধ্যে একজন মফিজ মিয়া (পরিবর্তিত নাম)। কুতুপালংয়ের একটি ক্যাম্পের ভেতরে নিজের ঘরে বসে মফিজ মিয়া ব্যাখ্যা করছিলেন কেন তিনি মিয়ানমার ফেরার ব্যাপারে যথেষ্ট ভরসা পাচ্ছেন না।


বিজ্ঞাপন


মফিজ মিয়া বলেন, মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গারা যদি তাদের আশ্বস্ত করে যে সেখানে তারা ভালো আছে ও তাদের পুরোনো বাসভূমি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী অত্যাচার করছে না, তাহলে তারা নিজেরাই ফিরে যাবে। কিন্তু সেরকম খবর যদি না পাই তাহলে শুধুমাত্র জোর করেই আমাদের নিয়ে যাওয়া যাবে। স্বেচ্ছায় আমরা যাবো না।

টেকনাফ স্থলবন্দরের সম্মেলনকক্ষে ৪ দিনে প্রায় ২০০ রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নিয়েছে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। আরও ৪-৫ দিন প্রতিনিধি দলটি প্রত্যাবাসন তালিকার রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করবে। 

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের (আরআরআরসি) অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা বলেন, শনিবার পর্যন্ত ৮০ পরিবারের প্রায় ২০০ রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই বাছাই করা হয়েছে। আরও ৪-৫ দিন এ সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। 

গত বুধবার সকালে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু থেকে দেশেটির ২২ সদস্যের প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের টেকনাফে আসে। এর মধ্যে ৫ সদস্যের বর্ডার গার্ড পুলিশ মিয়ানমার ফিরে গেছে। 


বিজ্ঞাপন


রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সাক্ষাৎকারে তাদের কাছ থেকে চার ধরনের প্রশ্ন করছে। ১) বাড়ি কোথায়। ২) বাংলাদেশে ঢোকার এলাকার চেয়ারম্যানের (উক্কাটা) নাম কী। ৩) বাড়ির চারপাশের গ্রামের নাম। ৪) ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ঢোকার সময় সন্তান কয়জন ছিল, ক্যাম্পে কয়জন জন্ম নিয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই চার প্রশ্নই করা হচ্ছে। 

রোহিঙ্গারা প্রতিনিধি দলের সদস্যদের বলেছেন, নাগরিকত্ব দেওয়ার পাশাপাশি নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। তাদের সম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। না হয় তারা মিয়ানমার ফিরবে না। 

সাক্ষাৎকার দেওয়া রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই টেকনাফের নয়াপাড়া শালবন ও জাদিমোরা আশ্রয়শিবিরের। এরমধ্যে বেশিরভাগ নিবন্ধিত রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের ক্যাম্প ২৬,২৭ ও ২৪ এর। ক্যাম্প ৪ এর কয়েকজন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাইয়ে প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মংডুর আঞ্চলিক পরিচালক অং মাইউ। 

rohinga

আরআরআরসি কার্যালয়ের তথ্য মতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। চীনের মধ্যস্থতায় এ প্রক্রিয়া শুরুর পর প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ৮ লাখ ৬২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেয়। এই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল মিয়ানমার। 

এরপর প্রথম ধাপে প্রত্যাবাসনের জন্য ১ হাজার ১৪০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই তালিকার ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সম্মতি থাকলেও ৪২৯ জনের বিষয়ে আপত্তি তোলে। তবে বাংলাদেশের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই ৪২৯ জনের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি এসেছে। 

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি ৪২৯ জন রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই করছেন। দ্রুত সাক্ষাৎকার শেষ করার জন্য সহযোগিতা করা হচ্ছে। 

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়। নতুন ও পুরোনো মিলে কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও নোয়াখালীর ভাসানচরে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সঙ্গে জড়িত প্রশাসনিক কর্মকর্তারা পুরো বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখলেও প্রত্যাবাসন কবে থেকে শুরু হতে পারে বা আদৌ শুরু হবে কিনা সেবিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর