চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে বাড়ছে চাল, ডাল, সবজি, মাছ, মাংসসহ নিত্যপণ্যের দাম। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্য কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ জনগণ। ক্রেতাদের দাবি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যর দাম বাড়লেও বাড়েনি মজুরি। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
শুক্রবার (১৭ মার্চ ) চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিউ মার্কেট সংলগ্ন কাচা বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও চিনির দাম। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বেড়ে হয়েছে ২৬০ টাকা এবং লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা। এদিকে, চিনির দাম এক সপ্তাহে বেড়েছে ৭-৮ টাকা। বর্তমান বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৪ টাকা কেজি। অপরদিকে গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে সাড়ে ৭০০ টাকায়।
বিজ্ঞাপন
সজনে ৯০ টাকা,পটল ৭০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, বেগুন ২৫ টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিউ মার্কেটের মুরগী বাজারে লেয়ার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৮০ টাকা, প্যারেস বিক্রি হয়েছে ২৩০ টাকায়, সাদা লেয়ার ২৬০ টাকায় এবং দেশি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৫৫০ টাকায়। অপরদিকে, গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে সাড়ে ৭০০ টাকায়। এসব মাংসে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১২৫ টাকা।
![]()
ব্রয়লার মুরগি কিনতে আশা আসাদুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক বলেন, প্রতিদিন কাজ করে ৩০০ টাকা পাই। কিন্তু এই ৩০০ টাকায় আমি কি কিনব। আজকে ব্রয়লার মুরগি দাম চাচ্ছে ২৬০ টাকা কেজি। তো আমি চাল কিনব নাকি ব্রয়লার কিনব। হঠাৎ সবজির দামও বেড়েছে। এমনকি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা হালি। যা গত মাসেই ছিল ১৫-২০ টাকা।
চিনি ক্রয় করতে এসেছিলেন ষাটোর্ধ্ব আসরাফুল নামে এক শিক্ষক। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে চিনি কিনেছিলাম ১০০ টাকা কেজি। আর এখন বাজারে এসে দেখি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৩-১১৫ টাকা কেজি। দফায় দফায় বেড়ে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এতে বিপাতে পড়তে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষকে।
বিজ্ঞাপন
![]()
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার রাজেদুল নামে এক চা দোকানি বলেন, আমি চা ব্যবসায়র সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫ বছর ধরে। আমি চায়ে লেবু দিয়ে বিক্রি করতাম। কিন্তু গত এক মাস থেকে লেবুর দাম এতো বেড়েছে যে লেবু দিয়ে চা বিক্রি করে লোকশানে পড়তে হচ্ছে। তাই লেবু চা বিক্রি করা ছেড়ে দিয়েছি। তাই আমার দোকানে বেচা-কেনাও কমে গেছে। এতে আয় কমে গেছে আমার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের সবচেয়ে বড় মুরগির বাজার হল-নিউ মার্কেট এলাকায়। সেখানে অর্ধশত দোকান রয়েছে। তারা সবাই পাবনা, রাজশাহী, কক্সবাজার, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে বিভিন্ন জাতের মুরগি এনে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করে থাকেন। সব রকম মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় বেচা বিক্রিও কমে গেছে একেবারেই। ফলে এক রকম মানবেতর জীবনযাপন করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ না হলে সামনে রমজানে হাঁড়িতে মাংস তুলতে পারবেন না সাধারণ মানুষ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের সবচেয়ে বড় মুরগির বাজার হলো নিউ মার্কেট এলাকার মেসার্স ব্রয়লার হাউসের মালিক রুবেল আলী বলেন, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে ব্যবসা করছি। তবে বর্তমান সময়ের মত ক্রেতা শূন্য দোকানে এর আগে হয়নি।
![]()
এ বিষয়ে জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে জানান, ফিড, বাচ্চা ও পরিবহন খরচের জন্য ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য জেলা পর্যায়ে তেমন কোনো সিন্ডিকেট নেই। আর বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে আমরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) একে.এম গালিব খান ঢাকা মেইলকে জানান, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে কার্ডধারীদের মাঝে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। এছাড়া আসন্ন রমজানকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা যাতে ক্রেতাদের ঠকিয়ে অধিক মুনাফা অর্জন করতে না পারে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসন মনিটরিং করবে।
টিবি

