শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

মরিচের ঘাঁটিতেও মরিচের দামে ‘অস্বস্তি’

পারভীন লুনা
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২৩, ০৪:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

মরিচের ঘাঁটিতেও মরিচের দামে ‘অস্বস্তি’

মরিচের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়া। কিন্তু সেই বগুড়াতেই অন্যান্য নিত্যপণ্যের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে মরিচের দাম। ৬০ টাকা কেজির মরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। কয়েকদিন পরই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। তখন মরিচের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের। মরিচের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্বেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব সবজির দাম মণপ্রতি ১২০-২০০ টাকা বেড়েছে। ১৪ ও ১৫ মার্চ সরেজমিন বিভিন্ন বাজার ঘুরে এই চিত্র পাওয়া যায়।

বগুড়ার রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজার, কলোনী বাজার ও খান্দার বাজারে ঘুরে  জানা যায়, কয়েক দিনের ব্যবধানে কাঁচা ও শুকনো মরিচের দাম হঠাৎ বেড়েছে। বাজারে ১০০-১২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ। পাশাপাশি দেশি শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫০-৬০০ টাকা। যা গত সপ্তাহের তুলনায় অনেক বেশি। গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচ ছিল ৬০ টাকা কেজি এবং শুকনো মরিচ ছিল ৫০০-৫৫০ টাকা কেজি।


বিজ্ঞাপন


ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমাদানি কম হওয়ায় এবং দেশি মরিচের সঙ্কটের কারণে দাম আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে অন্যান্য সবজির দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, হঠাৎ করেই বাজারে কাঁচা মরিচ ও শুকনো মরিচের দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে চড়া দামে মরিচ বিক্রি করছে বলে ক্রেতাদের দাবি। রমজান আসার আগেই এমন দাম বৃদ্ধিতে চিন্তিত সাধারণ ক্রেতারা।

জানা যায়, পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে এসে মরিচের মূল্য বেড়ে যায় কেজিতে ১০-১৫ টাকার মতো। রাজাবাজারের পাইকার ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ জানান, আমদানি কম থাকায় কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। দাম আরও বাড়তে পারে। আর কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ায় শুকনো মরিচের দামও বেড়েছে। কারণ কৃষকরা বর্তমান বাজারে কাঁচা মরিচের দাম ভালো পাওয়ায় জমি থেকে কাঁচাই বিক্রি করছেন।

শহরের নাটাই পাড়া থেকে বাজার করতে আসা হোসেন জানান, রমজান মাস আসার আগেই বাজারে মরিচসহ অন্যান্য মসলার দাম বেড়ে গেছে। তবে হঠাৎ করে কাঁচা মরিচ ও শুকনো মরিচের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে পাল্লা দিয়ে যদি সব জিনিসের দাম বাড়ে তাহলে আমাদের মতো খেটেখাওয়া মানুষের কষ্টের শেষ নেই। মরিচ কিনতে এসেছিলাম, দাম বেশি হওয়ার কারণে অল্প পরিমাণে কিনে নিয়ে যাচ্ছি।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, জেলায় এবার ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। এই আবাদের পাশাপাশি চাহিদার অন্তত ৫০ শতাংশ কাঁচা মরিচ বাইরের জেলা থেকে আসে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান বলেন, মূলত আবহাওয়ার কারণে কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। শীত তীব্র হওয়ায় অনেক কৃষকই জমি থেকে মরিচ উত্তোলন করতে পারেনি।


বিজ্ঞাপন


এদিকে মরিচের সাথে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব সবজির দাম মণপ্রতি ১২০-২০০ টাকা বেড়েছে।

সবজির দাম বেশি হওয়ার কারণ কি- এ প্রশ্নের জবাবে একেক আড়তদার একেক রকম কথা বলছেন। কেউ দাবি করছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম। আবার কেউ বলছেন, শীতকালীন সবজি শেষের দিকে। গ্রীষ্মকালীন সবজি ক্ষেত থেকে উঠতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। যদিও বাজারে সবজির অভাব দেখা যায় না। দাম বাড়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলেও আড়ৎ ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে। তত দিনে শীতকালীন সবজির সরবরাহ আরও কমে আসবে। তখন দাম আরও বাড়বে।

বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে দেশের অন্যতম বৃহৎ সবজির পাইকারি মোকাম বগুড়ার মহাস্থান হাট ঘুরে দেখা যায়, মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, শশা, গাজর, করলা, পটল, টমেটো, পালংশাক, লালশাক, পুঁইশাক, কাঁচা মরিচ, আলুসহ শীতকালীন বিভিন্ন সবজির কোনো কমতি নেই। ক্রেতা-বিক্রেতা, আড়তদার ও পাইকারদের সরগম দেখা যায় এই হাটে। কিছু সবজি যাচ্ছে স্থানীয় খুচরা বাজারে। বেশিরভাগ সবজি পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় মোকামে।

kaca-moric

মোকামে আসা কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতি কেজি দেশি পাকড়ি আলু বিক্রি হয়েছে ২০ টাকায়, ডায়মন্ড আলু ১২, কাঁচা মরিচ ১৩০, গাঁজর ১৫, করলা ৭০, মুলা ৩০, বেগুন ২০, টমেটো ২৫, শশা ১৭, পটল ৫০, পেঁপে ২০ টাকা, ফুলকপি ১৫, প্রতি পিস মাঝারি আকারের বাঁধাকপি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি দেশি পাকড়ি আলু বিক্রি হয়েছে ১৬ টাকায়, ডায়মন্ড আলু ৯ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০, গাঁজর ১৩, মুলা ২০, টমেটো ২০, শশা ১০, পেঁপে ১০ টাকা, ফুলকপি ৩ টাকা এবং মাঝারি আকারের প্রতি পিস বাঁধাকপি ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শশা, কাঁচা মরিচ, ফুলকপি, লেবু ও পেঁপের দাম।

মহাস্থান হাটে ২০ মণ পাকড়ি আলু বিক্রি করতে এসেছিলেন গোকুল ইউনিয়নের কৃষক ইসলাম। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে হাটে আলু বিক্রি করে দাম পেয়েছি প্রতি মণ ৬৫০ টাকা। আজ প্রতি মণে ১০০ টাকা বেশি পেয়েছি। সদর উপজেলার পল্লী মঙ্গল  গ্রামের কৃষক দবির  উদ্দিন বলেন, গত সপ্তাহে এক মণ শশা বিক্রি করেছি ৪০০ টাকা দরে। আজ বিক্রি করেছি ৭০০ টাকা মণ দরে। রোজা আসলে দাম আরো বাড়বে।

মহাস্থান হাটের আড়তদার ও কাঁচা-পাকা মাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, শীত মৌসুমে মহাস্থান হাটে গড়ে ১০০ ট্রাক সবজি বেচাবিক্রি হয়। এ বছর শীত শেষ হলেও বাজারে সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। এখনো প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ ট্রাক সবজি পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন পাইকারি মোকামে।

মোকামে প্রচুর মিষ্টি লাউ উঠলেও দাম চড়া। পাইকারিতে প্রতি মণ মিষ্টি লাউ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে হিমাগারে সংরক্ষণ মৌসুম শুরু হওয়ায় হঠাৎ আলুর দাম বেড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে অন্য সবজিতেও।

প্রতিনিধি/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর