শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ছোলা ও খেজুরের সংকট খাতুনগঞ্জে, বাড়ছে দাম

ইব্রাহিম খলিল
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২৩, ০৯:২৭ এএম

শেয়ার করুন:

ছোলা ও খেজুরের সংকট খাতুনগঞ্জে, বাড়ছে দাম

দেশের পাইকারি বাজার খ্যাত চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ছোলা ও খেজুরের সংকট চলছে। অপর্যাপ্ত এলসি ও ডলার সঙ্কটের কারণে অন্য অনেক ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি এই দুই পণ্যের আমদানিও হ্রাস পেয়েছে। ফলে রোজায় গুরুত্বপূর্ণ এই দুই পণ্যের দাম ক্রমেই বাড়ছে। বুধবার (১৫ মার্চ) দুপুরে এ তথ্য জানান খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা।

ছোলা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রহমান ডেটস ট্রেডের স্বত্বাধিকারী আহসানুল হক বলেন, জানুয়ারিতে যেসব ছোলা আমদানি হয়েছে তা সামান্য। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার তেমন ছোলা আমদানি করা যায়নি। ফলে গুদামে ছোলার সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা আলজেরিয়া ও মিশরে এলসি করেছি। তা আসতে রমজানের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এখন আড়তে যা ছোলা আছে তা বাজারে সরবরাহ করছি। ফলে বাজারে ছোলার দাম বাড়ছে হু হু করে।


বিজ্ঞাপন


একই কথা বলছেন খাতুনগঞ্জের খেজুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আলম ট্রেডিংয়ের ম্যানেজার বাবুল হোসেনও। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনার পর ব্যাংকগুলো জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এলসি (ঋণপত্র) খুলেছে। সেই খেজুর এখনও আসেনি। একটি অংশ চলতি মাসে আসার কথা রয়েছে এবং অন্য অংশ রোজার মাঝামাঝি আসবে। এই খেজুর আসলেই দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে উভয় আমদানিকারক বলেন, এক সপ্তাহ ধরে ছোলা ও খেজুরের দাম বাড়ছে। ছোলা এখন প্রতি কেজি ৯০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর রোজা শুরু হওয়ার সময় ৭০-৭৫ টাকা ছিল। দেখা যাচ্ছে, এক বছরের ব্যবধানে এ পণ্যের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি।

khejur

খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানান, চলতি বছর খাতুনগঞ্জে ছোলার আমদানি গত বছরের তুলনায় কমেছে। গত তিন মাসে (নভেম্বর থেকে জানুয়ারি) আমদানি হয়েছে ৪৩ হাজার টন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। মটর ডালের আমদানি কমেছে ১৮ শতাংশ। রোজায় এই ডালের চাহিদা বেড়ে যায়। তবে মসুর ডালের আমদানি বেড়েছে।


বিজ্ঞাপন


অন্যদিকে এবার খেজুরের আমদানি গতবারের তুলনায় অনেক কমেছে। প্রতি বছর রোজায় দেশে খেজুরের চাহিদা থাকে ৫০ হাজার টনের মতো। গত তিন মাসে (নভেম্বর থেকে জানুয়ারি) খেজুর আমদানি হয়েছে প্রায় ২২ হাজার টন, যা এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে ৪৬ শতাংশ কম। জানুয়ারিতে খেজুর আমদানির ঋণপত্র ১৩ হাজার টন বেড়ে ২৯ হাজার টনে দাঁড়ালেও ফেব্রুয়ারিতে যেসব এলসি করা হয়েছে তা এখনও বাজারে আসেনি বলে জানান আড়তদাররা।

তারা জানান, সঙ্কটের কারণে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বুধবার সকাল থেকে খাতুনগঞ্জে সাধারণ মানের খেজুর কেজিপ্রতি ৩০-৪০ টাকা বেড়ে ৩০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভালো মানের খেজুরের দাম প্রতি কেজি ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে ৬০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আড়তে ভালো মানের প্রতি কার্টন মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকায়। এরচেয়ে কম মানের প্রতি কার্টন মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কার্টন আজোয়া খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার ৮০০ টাকায়, মাসরুব খেজুর ৩ হাজার ১০০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকায়, সাফারি ৩ হাজার ৪০০ টাকায়, ছরা প্রতি কার্টন দুই হাজার ৪০০ টাকা এবং জাহেদি প্রতি কার্টন এক হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

cola

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক নাছির উদ্দিন বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৭৩ টন খেজুর আমদানি করা হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) ৯১ হাজার ৯০৪ টন ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬২ হাজার ২৭৪ টন খেজুর আমদানি করা হয়। যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এ কারণে বাজারে খেজুরের দাম বাড়ছে। একই কারণে বাড়ছে ছোলার দামও।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাব মতে, দেশে সারা বছর খেজুরের চাহিদা প্রায় এক লাখ টন। তার মধ্যে রমজানে চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪৫-৫০ হাজার টন। এ তুলনায় আমদানি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কম। এ সুযোগে বছরের ব্যবধানে প্রায় ৩০ শতাংশের বেশি দামে ছোলা বিক্রি হচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (মেট্রো) আনিছুর রহমান বলেন, খেজুরের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে, বিষয়টি আমরাও শুনেছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বিষয়টি যাচাই করেছি। এবার খেজুরের দাম কিছুটা বেশি।

তিনি বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের কেনা বেশি পড়ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আমদানিকারকদের কাছ থেকে তারা বেশি দামে খেজুর কিনছেন। তবে এখন পর্যন্ত আমদানিকারকদের কাছ থেকে বিষয়টি যাচাই করা হয়নি। খেজুরের দাম কেন বাড়ছে তা আমরা তদারক করছি।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ডলার সংকটে খেজুর ও ছোলার দাম বেড়েছে বলাটাও একটা অজুহাত। গত বছরে যে পরিমাণ খেজুর ও ছোলা আমদানি করা হয়েছিল তা আরও দুই বছর চলবে, যা এখনও মজুত আছে। তেল, চিনিসহ অন্যান্য পণ্য ডলার সঙ্কটের কথা বলে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। সেই সুযোগে খেজুর ও ছোলা আমদানিকারকরাও অজুহাত দিয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করছে। তারা যে সঙ্কটের কথা বলে, বাস্তবে সেরকম সংকট নেই। বাজার মনিটরিং না থাকায় যে যার মতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।

প্রতিনিধি/এমএইচএম/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর