শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

১০টার আগে দেখা মেলে না স্যারদের!

আবু সাঈদ রনি
প্রকাশিত: ১৫ মার্চ ২০২৩, ১২:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

১০টার আগে দেখা মেলে না স্যারদের!

ঘড়ির কাঁটায় তখন মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকাল ৯টা ৫৮ মিনিট। রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে সুনসান নীরবতা। সরকারি অফিসের কার্যক্রম শুরুর সময় ৯টার পর এক ঘণ্টা হয়ে গেলেও উপস্থিত নেই কেউই।

জানা যায়, প্রায় দিনই সকাল ১০টা-সাড়ে ১০টা কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে ১১টাও বেজে যায় অফিসের কার্যক্রম শুরু হতে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ওমর ফারুকের অফিসের দরজা খোলা থাকলেও অনুপস্থিত তিনি। ১০টা-সাড়ে ১০টার আগে তিনি অফিসে আসেন না বলেও জানা যায়।


বিজ্ঞাপন


একই চিত্র দেখা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) রাজশাহীর আঞ্চলিক কার্যালয়েও। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সেখানে পাওয়া যায়নি মাউশির আঞ্চলিক পরিচালক আব্দুল খালেক সরকারকে। একই কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মাহবুবুর রহমান শাহকেও পাওয়া যায়নি তার কার্যালয়ে। সহকারী পরিচালক আব্দুর রহিমও তখন পর্যন্ত অনুপস্থিত ছিলেন অফিসে।

কার্যালয়ের এক অফিস সহকারী জানান, তারা সাড়ে ৯টার মধ্যেই অফিসে আসেন। কিন্তু আজ কেন দেরি হচ্ছে জানা নেই। পরিচালক ও উপ-পরিচালক গতকাল (সোমবার) অফিসে ছিলেন না বলেও জানান তিনি।

মাউশি রাজশাহী অঞ্চল পরিচালকের কার্যালয়ের বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন এক কলেজ শিক্ষিকা। তিনি ঢাকা মেইলকে জানান, নাটোরের বনপাড়া থেকে এসেছেন তিনি। সময় অনুযায়ী ৯টার আগেই উপস্থিত হলেও পরিচালকের দেখা পাননি তখনও। কখন আসবেন বা কতক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হবে সেটিও জানা নেই তার।

রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিস কার্যালয়েও পাওয়া যায় একই চিত্র। সেখানেও ৯টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত প্রবেশ করেননি জেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন। কখন আসবেন জানাতে পারেননি কেউই।


বিজ্ঞাপন


এছাড়া মাউশি রাজশাহীর উপ-পরিচালকের কার্যালয়েও একই চিত্র। সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটেও অনুপস্থিত ছিলেন কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী।

সকাল সোয়া ৯টার পরও অফিসে আসেননি রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন। কখন আসবেন সেটিও জানাতে পারেননি কেউ।

তবে মন্ত্রিপরিষদের পরিপত্র অনুযায়ী, প্রতিদিন সকাল ৯টার মধ্যে প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অফিসে উপস্থিত হতে হবে। একইসাথে সকাল ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত নিজ অফিস কক্ষে অবস্থান করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, বেশিরভাগ কর্মকর্তাই বিলম্বে প্রবেশ করছেন নিজ নিজ কার্যালয়ে। অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু করতেও দেরি হচ্ছে নিয়মিত।

তবে অফিস থেকে ফেরার ক্ষেত্রে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই নানা কারণ দেখিয়ে অফিস ছাড়ছেন অনেকেই। এক শ্রেণির কর্মকর্তার মাঝে লাঞ্চ বিরতির পর অফিস করতেও দেখা যায় অনীহা। এতে একদিকে যেমন সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন জনগণ, তেমনিভাবে সেবা প্রদানের হারও কমছে। কর্মকর্তারা নিয়মিত দেরি করে আসেন, ফলে সেবাগ্রহীতারাও এখন দেরি করে আসেন।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে যদি সেবাদান কার্যক্রম বিঘ্নিত হয় অথবা জনসাধারণ হয়রানির শিকার হয় তা কখনও মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এসব বিষয় আরও বেশি করে মনিটরিং করে জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার। সরকারি বিধিবিধানগুলো আরও কঠোরভাবে মেনে চলা উচিত।

তিনি আরও বলেন, নাগরিকদেরও উচিত সচেতনভাবে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অভিযোগ করা। আমরা নাগরিকরা বড়ই বিচ্ছিন্ন, মিডিয়ার পাশাপাশি নাগরিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে সাথে সাথে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এসব বিষয় জানানো।

এ বিষয়ে জানতে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরুল্লাহর সাথে কথা ঢাকা মেইলের। তিনি বলেন, কোন অফিসে এরকম হয়? অফিসের নামগুলো দিয়ে দেন, পরদিনই দেখবেন যে টাইট হয়ে গেছে। বিভাগীয় কমিশনার অফিসে একবার এসে দেখেন, মিছিলের সাথে পৌনে ৯টার মধ্যে সবাই চলে আসে। আপনি অফিসের নামগুলো নিয়ে আসেন, আমি সবাইকে বলে দেব। দেখবেন সবাই টাইম মতো চলে আসবে।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর