শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

শহরের ঝলমলে আলোও ঘুম ভাঙাতে পারে না ওদের

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৩ মার্চ ২০২৩, ০২:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

শহরের ঝলমলে আলোও ঘুম ভাঙাতে পারে না ওদের
ছবি: ঢাকা মেইল

পাখ-পাখালির কথা উঠলেই চোখে ভেসে ওঠে সবুজে ঘেরা গ্রাম। শ্যামল-ছায়া আর সুনিবিড় সেই গ্রামজুড়ে থাকে পাখির কিচিরমিচির। তবে ইট-পাথরের শহরে কোলাহলের মাঝেও পাখিরা যে গলা ছেড়ে গাইতে পারে- তা চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হবে না।

যশোর শহরের ব্যস্ততম এলাকা দড়াটানা তেমনই ব্যতিক্রমী একটি জায়গা। যেখানে পাখিরা খুঁজে পেয়েছে তাদের নিরাপদ আবাস। তাইতো ছোট দুই-তিনটি গাছেই প্রতিদিন বিকেল হলেই জড়ো হয় হাজার হাজার চড়ুই। সেই সঙ্গে সন্ধ্যা নামতেই কিচিরমিচির ছন্দে তাল মিলিয়ে মেতে ওঠে তারা। আবার ভোরের আলো ফুটতেই উড়াল দেয় অজানায়।


বিজ্ঞাপন


Speial Newsস্থানীয় প্রাইম হাসপাতালের সামনে থাকা কাঁঠাল এবং কুইন্স হাসপাতালের সামনের দেবদারু গাছদুটি এইসব পাখিদের পছন্দের জায়গা। গাছের প্রতিটি পাতার ফাঁকে ফাঁকে চুপিসারে বসে গলা ছেড়ে গায় তারা। তবে অন্ধকার ঘনিয়ে আসতেই বন্ধ হয়ে যায় সব কোলাহল। বিশ্রামের খোঁজে চোখে পারদ চড়ে পাখিদের। ওই সময় শহরের ঝলমলে বৈদ্যুতিক আলোও পাখিদের ঘুম ভাঙাতে পারে না।

হারুন অর রশিদ জানান, ১০ মাস চড়ুই পাখিরা এই গাছে থাকে। বাকি ২ মাস ডিম বা বাচ্চা ফুটানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও আসতে শুরু করে।

একই কথা জানিয়েছেন দড়াটানা প্রাইম হাসপাতালের সামনে থাকা কাঁঠাল গাছের ঠিক নিচেই বসা টং দোকানি মাসুদুর রহমান। ঢাকা মেইলকে তিনি জানান, আসরের আজানের পরেই চড়ুই পাখি এই কাঁঠাল গাছে আসতে শুরু করে। তারা মানুষের কোনো ক্ষতি করে না, আমরাও তাদের ক্ষতি করি না। তবে বৃষ্টির সময় চড়ুই পাখিগুলো খুব কষ্ট পায়। আমি ৮ থেকে ১০ বছর ধরে দেখছি, অসংখ্য চড়ুই পাখি কাঁঠাল গাছে রাত্রিযাপন করে। অথচ সন্ধ্যার পরে কোনো শব্দ পাওয়া যায় না।


বিজ্ঞাপন


স্থানীয় ওষুধ বিক্রেতা শিমুল দেবনাথ বলেন, চড়ুই পাখিগুলো অসাধারণ, দেখতে অনেক ভালো লাগে। ছোট বাচ্চারাও দেখি বাবা-মার সঙ্গে আসে পাখি দেখতে। তারা অনেক আনন্দ পায়। তবে এখন পাখি কমতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে কিচিরমিচির গানও কমে গেছে। এতে খুব খারাপ লাগে।

Special Newsএ বিষয়ে কথা হলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণের খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তা লুৎফর রহমান ঢাকা মেইলকে জানান, চড়ুই পাখি যেখানে নিরাপদ মনে করে সেখানেই তারা দলবদ্ধভাবে থাকতে ভালোবাসে। নিকটবর্তী জায়গা থেকেই এই পাখিগুলো সহজেই খাবার সংগ্রহ করতে পারে।

পাখিদের নির্দিষ্ট গাছে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, চড়ুই পাখিদের মানুষের মতোই ভালো-মন্দ পছন্দের ক্ষমতা আছে। তারা তাদের নিজেদের পছন্দমতো গাছেই বসবাস করে।

এছাড়া পাখি শিকারের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি পাখি শিকার করে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, ২০১২ এর ৩৮ ধারায় পাখি শিকারিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং এক বছরের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু একই অপরাধ যদি অপরাধী বারবার করে, তবে তার জন্য শাস্তি দ্বিগুণ হয়ে যায়।

প্রতিনিধি/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর