মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ফাগুনের রোদে ক্ষেতজুড়ে দোল খায় সূর্যমুখী

মো. হাবিবুর রহমান
প্রকাশিত: ১৩ মার্চ ২০২৩, ১১:২৫ এএম

শেয়ার করুন:

ফাগুনের রোদে ক্ষেতজুড়ে দোল খায় সূর্যমুখী
ছবি: ঢাকা মেইল

ফাগুনের রোদে বাতাসে মাঝে মাঝে দোল খাচ্ছে মনকাড়া সূর্যমুখী ফুল। ক্ষণে ক্ষণে পাখি আর কীটপতঙ্গের দল ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে। এ যেন অপরূপ এক দৃশ্য, যেটি আকৃষ্ট করছে সূর্যমুখী ফুল বাগানের পাশ দিয়ে হেঁটে চলা পথচারীদের।

বলছিলাম লিয়াকত হোসেনের (৩৫) সূর্যমুখী ফুল ক্ষেতের কথা। নরাইলের লোহাগড়া উপজেলার গ্রামের ভদ্রডাঙ্গা গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে তিনি। এ বছর লিয়াকত হোসেন ঝুঁকে পড়েছেন কৃষি ফসল উৎপাদনে। নানা ফসল ফলানোর পাশাপাশি এ বছর তিনি বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করেছেন সূর্যমুখীর। এ ফসলের দানা থেকে উৎপাদন হয় ভোজ্য তেল। এটির চাহিদা থাকায় ২৪ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন তিনি। এছাড়া এ উপজেলার আরও কয়েকজন কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন। চলতি বছর তেলবীজ কৃষি প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দিয়ে এই ফুলের চাষ করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


liyakat

লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের ভদ্রডাঙ্গা গ্রামে সরেজমিনে দেখা গেছে, এ গ্রামের বিলে যেন টগবগ মেজাজে সূর্যের মুখ করে হাসছে সূর্যমুখী। কৃষকের এই শস্য ক্ষেতের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ফুলপ্রেমীরা করছে ছোটাছুটি। ইতোমধ্যেই ক্ষেতের গাছে ফুল এবং ফুলে বীজ আসা শুরু হয়েছে। ক্ষেতের সূর্যমূখীর সবুজ গাছে গাছে বড় গোলাকারের হলুদ ফুল চারিদিকে যেন এক অপরূপ দৃশ্য ছড়িয়েছে। প্রতিদিন আশপাশের এলাকা থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য পিয়াসু মানুষ সূর্যমুখী ফুলের দৃশ্য দেখতে আসছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সূর্যমুখী সারা বছরে চাষ করা যায়। সূর্যমুখী সাধারণত সব মাটিতে আবাদ করা যায়। এর বীজ সারিতে বুনতে হয়। হেক্টারপ্রতি ৮ থেকে ১০ কেজি বীজ লাগে। বীজ বোনা থেকে প্রায় ১০০ দিনের মধ্যে এ ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। এতে প্রায় ২ টন দানা সংগ্রহ করা যেতে পারে। এ ফসল থেকে তেল উৎপাদন ছাড়াও গরু-মহিষের খাবার হিসেবে খৈল তৈরি হয়ে থাকে। এর গাছও জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

liyakat


বিজ্ঞাপন


সূর্যমুখী চাষী লিয়াকত হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন,আমি এই প্রথম ২৪ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী লাগিয়েছি। এটা চাষ করতে তেমন কোনো কষ্ট নাই খুব সহজেই এটি চাষ করা যায়। এবার দেখব ফলাফল কি হয়। ফলন ভাল হলে পরবর্তীতে বড় পরিসরে করার চিন্তা রয়েছে। এটা আমাদের এলাকায় নাই আমরা কৃষি কাজ করি বিধায় আমি এই উদ্যোগ নিছি।

তিনি আরও বলেন, ফলন যদি ভাল হয় আমাকে দেখে অনেকে এ চাষে এগিয়ে আসবে এজন্যেই এ উদ্যোগ। আমার এই ক্ষেত দেখতে অনেক দূর থেকে লোকজন আসছে। দেখে ছবিও তুলছে, ভিডিও করছেতে। তবে দুঃখের বিষয় অনেকে গাছ পাড়িয়ে চলছে ফুল ছিড়ছে— এটা ঠিক না।

এদিকে, সূর্যমুখীর ক্ষেত দেখতে আসা নুরনবী ঢাকা মেইলকে বলেন, লোকমুখে শুনে সূর্যমুখী ফুল দেখতে এসেছি। এখানে এসে জানতে পারলাম এটা চাষ খুব সহজ এবং লাভজনক। থোকা থোকা ফুলে ভরা সূর্যমুখীর সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আমার খুব ভাল লেখেছে। অপরূপ এই দৃশ্য ফোনের ক্যামারায় ধারণ করে রাখলাম।

liyakat

সূর্যমুখী ফুল দেখতে আসা জিয়াউর রহমান জিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। এই সূর্যমুখী ফুল দেখতে এখানে অনেক দর্শনার্থী আসে। তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, আপনারা কেউ ফুল ছিঁড়বেন না। আপনারা আসবেন, ঘুরে দেখবেন এবং এর সৌন্দর্য উপভোগ করবেন। ফুল ছিঁড়ে কৃষকের ক্ষতি করবেন না।

লোহাগড়া উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার সাহা ঢাকা মেইলকে বলেন, সূর্যমুখী চাষ অত্যন্ত লাভজনক। সূর্যমুখী চাষের বিস্তার ও জনপ্রিয়তার উদ্দেশ্যে কৃষি বিভাগ নানাভাবে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। কৃষি প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষকদের সূর্যমুখীর বীজ সার বিতরণ করা হয়েছে। কৃষকদের আরও লাভবান করতে তাদের সার্বিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর