শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

‘বেতন বাড়ে না, সপ্তাহে সপ্তাহে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে’

শাওন খান
প্রকাশিত: ১০ মার্চ ২০২৩, ০৬:৫৬ এএম

শেয়ার করুন:

‘বেতন বাড়ে না, সপ্তাহে সপ্তাহে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে’

‘কোনো রকম ধারদেনা করে চলছে সংসার। যা আয় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতি মাসেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের আয় বাড়ছে না।’ 

বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) বরিশাল নগরীর বাংলাবাজার এলাকা থেকে রিকশায় যেতে যেতে এসব কথা বলেন চালক শামীম হোসেন (৩৯)। 


বিজ্ঞাপন


লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে রিকশা চালিয়ে কোনো মতে চলছে তার সংসার। 

শামীম হোসেন বলেন, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বরিশাল নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বঙ্গবন্ধু কলোনিতে ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। রিকশা চালিয়েই ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, বাজার-সদাই, স্ত্রীর ওষুধ ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হয় তাকে। একদিন রিকশার চাকা বন্ধ থাকলেই হাত পাততে হয় অন্যদের কাছে। তবে প্রতিদিনই সবকিছুর দাম যে হারে বাড়ছে তাতে কোনো হিসাব মেলাতে পারছেন এ রিকশা চালক। প্রতি মাসেই ধারদেনা করে চলতে হয়।

Special Newsতিনি আরও বলেন, রিকশার (ব্যাটারিচালিত) জমা খরচ কদিন আগেও যেখানে ছিল ২শ টাকা। এখন তা বেড়ে ৩শ থেকে ৩শ ৫০ টাকা হয়েছে। এভাবে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ায় আমি আর পেরে উঠছি না।

শুধু শামীম হোসেন নন, তার মতো নিম্নআয়ের মানুষেরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার্য সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা উভয় সংকটে পড়েছেন। খরচ কাটাছেঁড়া করেও তারা হিসাব মেলাতে পারছেন না।


বিজ্ঞাপন


দুপুরে নগরীর বাংলাবাজারে কথা হয় মুরগি বিক্রেতা আরমান খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, কয়েক দিনের ব্যবধানে দেশি মুরগির দাম কেজিতে ৮০ টাকা বেড়ে ৫শ ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, ব্রয়লার, সোনালী, সাদা কক, লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা। সোনালী মুরগি ৩শ ৩০ টাকা, ব্রয়লার ২শ ৪০ থেকে ২শ ৫০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩শ ২০ টাকা, সাদা কক ৩শ ১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেচাবিক্রি এখন আগের চেয়ে কম বলে জানান এ বিক্রেতা।

Special-Newsএকই বাজারের মাংস বিক্রেতা ইউসুফ মিয়া বলেন, গরুর মাংস সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ টাকা বেড়ে ৭শ ৫০ টাকা, খাসির মাংস এক হাজার টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে এখন আগের তুলনায় বাজারে গরু-খাসি বিক্রি কমে গেছে। তাছাড়া সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ চাইলেও মাংস কিনতে পারছে না।

নগরীর সাগরদী বাজার এলাকার চায়ের দোকানদার ফিরোজ আহমেদ বলেন, তার সংসারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলের মাঝে এক ছেলে বিয়ে করেছেন। ছেলের বউ নিয়ে পাঁচজনের সংসার।

তিনি বলেন, ৪০ বছর ধরে এই দোকানদারি করছি। আগে এক কাপ চা ৫ টাকা ছিল এখনও ৫ টাকাই আছে। অথচ চা তৈরির উপকরণ সব দ্বিগুণ হয়েছে। দিনের পর দিন যেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে তাতে মনে হচ্ছে, আমার ভাগ্যের অবনতি হয়েছে। আগে তো মাংস বছরে একবার হলেও কিনে খেতে পারতাম। এখন তাও পারি না। করোনার পরে খাসির মাংস কিনে খেতে পারি নাই। কারণ, এখন দৈনিক ৭০০ টাকার মতো রোজগার করতে পারি। এই টাকা চাল, ডাল, তেল, সবজি কিনতেই লাগে। মাংস কেনার টাকা থাকে না।

Special-Newsনগরীর আমতলা এলাকার ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা নূর আলম বলেন, সবজি বিক্রি করে যা পাই তা চাল-ডাল-তেল কিনতেই শেষ। তার মধ্যে আবার নাকি সরকার নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এখন বিদ্যুৎ বিল দেব না সংসার খরচ চালাব। জিনিসপত্রের এমন মূল্য বৃদ্ধি আগে কখনো দেখিনি।

নগরীর আমতলা এলাকার একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষক বেল্লাল হোসেন বলেন, বেতন বাড়ে না, কিন্তু সপ্তাহে সপ্তাহে প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। ফলে সংসারের খরচ বহন করা এখন কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য যে হারে বাড়ছে তাতে আমাদের মতো মানুষের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে, রমজান মাসকে সামনে রেখে বাজারে খেসারি ডাল, ছোলা, খেজুরসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। বাজারে বেড়ে চলেছে, চাল, ডাল, তেল, মাছ, মুরগি, লবণ, পেঁয়াজ, মরিচ গম, আটা, রুটি, বিস্কুট থেকে শুরু করে সব ধরনের তরকারি দাম। ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষেরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। বিশেষ করে কম আয়ের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর ওপর চেপে বসেছে দ্রব্যমূল্য। তাদের কষ্টের কথা শোনার মতো কেউ নেই।

মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অপূর্ব অধিকারী ঢাকা মেইলকে বলেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ের উদ্যোগে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় মূল্যবৃদ্ধি, মূল্য তালিকা টানানো না থাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রিসহ বিভিন্ন অপরাধে জেল জরিমানা করা হচ্ছে। বাজার পরিস্থিতি সহনীয় রাখতে নিয়মিত অভিযানও অব্যাহত থাকবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর