সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

চুয়াডাঙ্গায় অজ্ঞাত রোগে হুমকির মুখে ভুট্টা চাষ

মিজানুর রহমান
প্রকাশিত: ০৯ মার্চ ২০২৩, ১০:৪৪ এএম

শেয়ার করুন:

চুয়াডাঙ্গায় অজ্ঞাত রোগে হুমকির মুখে ভুট্টা চাষ
ছবি: ঢাকা মেইল

চুয়াডাঙ্গা জেলার মাটি পলিমিশ্রিত এঁটেল, এঁটেল-দোঁয়াশ হওয়ার কারণে এখানকার জমি অত্যন্ত উর্বর। এ জেলায় যে কোনো ফসল খুব ভালো হয়। তাছাড়া আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো ভুট্টা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। প্রচুর পরিমাণ ফলন, ভালো দাম এবং খরচের তুলনায় অধিক মুনাফা হওয়ার কারণে চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রতি বছরই বাড়ছে ভুট্টার আবাদ। চাষিরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহার এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও অধিক লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা এখন চুয়াডাঙ্গার প্রধান অর্থকরী ফসল হয়ে দাঁড়িয়েছে।


বিজ্ঞাপন


চুয়াডাঙ্গাস কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমে ভুট্টার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ হাজার ৫৩০ হেক্টর থাকলেও তা ছাড়িয়ে ৪৯ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ১৫ হাজার ১৮০ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় ১৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর, দামুড়হুদায় ১৪ হাজার ৫০০ হেক্টর, জীবননগরে ৬ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে ভূট্টার আবাদ হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গায় ভুট্টাচাষে এতো সফলতা ও ব্যাপক ফলন হওয়া সত্বেও কৃষকদের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে এবং কৃষি বিভাগের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ভুট্টাক্ষেতের অজ্ঞাত রোগ। চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলা ও দামুড়হুদা উপজেলার কিছু মাঠে এখন পর্যন্ত ২৩ হেক্টর জমিতে অজ্ঞাত এ রোগ বিস্তার লাভ করছে। এ রোগে আক্রান্ত হলে ভুট্টার মোচা পরিপুষ্ট হওয়ার আগেই শুকিয়ে মারা যাচ্ছে ভুট্টাগাছ। অজ্ঞাত এ রোগের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ লক্ষণ দেখে ধারণা করছে, এ রোগের নাম “ফিউজারিয়াম স্টক রট”।

vutta

গত তিন বছর ধরে এ জেলার কিছু কিছু মাঠে এরোগ স্বল্পমাত্রায় দেখা গেলেও এবছর ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ রোগে আক্রান্ত হলে ভূট্টার ক্ষেত পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত হয়ে সবুজ ভুট্টার গাছ বিবর্ণ হয়ে ধূসর রঙ ধারণ করছে। খুব দ্রুত শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গাছের গোড়া ও কাণ্ড। সেই সাঙ্গে নষ্ট হচ্ছে গাছের ভুট্টার মোচা। মাঠের পর মাঠ এ রোগের সংক্রমণে দিশেহারা ভুট্টা চাষিরা। এভাবে গাছ মরে গেলে বিঘা প্রতি প্রায় অর্ধলক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হবে। যার ফলে ভুট্টা চাষিরা যেমন বাড়তি ধার-দেনায় জড়িয়ে পড়েছেন, তেমনি ঋণ নিয়ে আবাদ করা কৃষকরা টাকা পরিশোধ করা নিয়েও পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।


বিজ্ঞাপন


বেগমপুর ইউনিয়নের কোটালি গ্রামের ভুট্টাচাষি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ভুট্টা মোচা আসার পর গাছ নষ্ট হওয়া শুরু হচ্ছে। প্রথম দিক থেকে কোনো সমস্যা হয় না। ভুট্টা ঘরে তোলার ২/৩ মাস আগে পুরো গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি তার মধ্যে ১ বিঘার পরিমান ভুট্টাও আমি পাব না।

একই গ্রামের ভুট্টাচাষি রানা আহম্মেদ বলেন, ভুট্টার এই রোগ আরও তিন বছর আগে থেকে দেখা যাচ্ছে। এর আগে অল্প পরিমাণ ছিল কিন্তু এ বছর ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। এর আগে যা ক্ষতি হয়েছে তা অনেকে পুষিয়ে নিয়েছে পরিমাণ অল্প থাকার কারণে। কিন্তু এ বছর যা খরচ হয়েছে সে টাকাও উঠবে না।

একই গ্রামের ভুট্টাচাষি আক্তার আলী বলেন, যখন ভুট্টার মোচা বের হয়, তখনই ভুট্টার গাছ মরা শুরু হচ্ছে। এরোগ থেকে রক্ষার জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করেছি কিন্তু কোনো উপকার পাচ্ছি না। আমরা আর কিছু দিন পরই ফসল ঘরে তুলতাম। গাছ মরে যাওয়ার কারণে সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

vutta

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার আফরিন বিন্তে আজিজ বলেন, ভুট্টা গাছে যে রোগটা দেখা গেছে তা আমরা প্রাথমিকভাবে ‘ফিউজারিয়াম স্টক রট’ নামে চিহ্নিত করেছি। এটা নিয়ে আমাদের আরও বিস্তর গবেষণা চলমান রয়েছে। আমরা কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করছি। যে সকল মাঠে এ রোগ দেখা যাচ্ছে আমরা সে সব মাঠে পরবর্তী বছরে ভুট্টা চাষ না করার জন্য বলা হচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে বলা হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন। কৃষকেদের নানা ভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ভাইরাসজনিত এ রোগের হাত থেকে বাঁচতে ভুট্টা চাষিদের গত বছরও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু অনেক কৃষকই পরামর্শ মানছেন না। এছাড়া আগামীতে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় বীজ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর