রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নারিকেল গাছ পরিষ্কার করেই ৬০ বছর পার!

তোফায়েল হোসেন জাকির
প্রকাশিত: ০৬ মার্চ ২০২৩, ১০:৪৫ এএম

শেয়ার করুন:

নারিকেল গাছ পরিষ্কার করেই ৬০ বছর পার!

ছয়েছ উদ্দিন। বয়স ৭৫ ছুঁইছুঁই। যখন টগবগে যুবক, তখন থেকেই পেশা হিসেবে বেছে নেয় নারিকেল গাছ ঝাড়ার (পরিষ্কার) করার কাজ। প্রায় ৬০ বছর ধরে এ কাজ করে সংসার চলছে তার। এখন বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও জীবিকার তাগিদে ছুটতে হয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

ছয়েছ উদ্দিনের বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নে। তিনি তরফ ফাজিল (নামাপাড়া) গ্রামের মৃত গেন্দা শেখের ছেলে।


বিজ্ঞাপন


Gaibonadha

সম্প্রতি গ্রামের এক মেঠোপথে ঢাকা মেইল প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হয় ছয়েছ উদ্দিনের। কাঁধে ব্যাগ, লাঠি ও রশি। আর হাতে ধারালো ছুরি। এসব নিয়ে হেঁটে চলছিলেন তিনি। এরই মধ্যে হামিদ মিয়া নামের এক ব্যক্তি তাকে ডেকে নিলেন। তার বাড়ির একটি নারিকেল গাছ পরিষ্কার করবেন। ১২০ টাকা চুক্তিতে ছয়েছ উদ্দিন ওঠলেন ৩০ ফুট উঁচু এই গাছে। গাছের মাথায় রশিতে লাঠি ও কোমর বেঁধে আপন খেয়ালে পরিষ্কার করলেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছয়েছ উদ্দিনের বয়স যখন ১৫ বছর, তখন তার বাবা গেন্দা শেখ মারা গেছেন। এরপর সংসারে শুরু হয় টানাপোড়েন। সংসারের হাল ধরতে জীবিকার সন্ধানে ছুটে যান পাবনা জেলায়। সেখানে এক গাছির কাছে নারিকেল গাছ ঝাড়া (পরিষ্কার) করার কাজ শেখেন। এরপর থেকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বাড়িতে ফিরে মায়ের মুরগি বিক্রি করে তৈরি করেন ধারালো ছুরি, রশি ও লাঠি। এসব উপকরণ দিয়ে নিজ এলাকার বিভিন্ন গ্রামে হেঁটে গিয়ে মানুষের নারিকেল গাছ পরিস্কার করতে থাকেন। এর উপার্জন দিয়ে চলে তার সংসার। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এ কাজটি করে যাচ্ছেন তিনি। যার ফলে অত্র এলাকার মানুষ তাকে ছয়েছ গাছি হিসেবে চেনেন এবং ডাকেন। এই এলাকার প্রায় ৫০ গ্রামের মানুষের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, ছয়েছ গাছিকে চেনে না।

Gaibandha


বিজ্ঞাপন


স্থানীয় নারিকেল গাছ মালিক রায়হান মিয়া ও হামিদ মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, আমাদের বাড়িতে অনেক আগে থেকে নারিকেল গাছ রয়েছে। ভালো ফলন নিতে ৬ মাস পরপর গাছ ঝেড়ে নিতে হয়। এসব গাছ ছয়েছ উদ্দিন ঝেড়ে দেন। তারা আরও বলেন, উচ্চতা ভেদে প্রতিটি গাছ পরিষ্কার বাবদ ৮০ থেকে ১২০ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। তবে লোকটির বয়স বেশি হওয়ায় এখন তাকে গাছে তুলে দিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়।

গাছি ছয়েছ উদ্দিন বলেন, গাছ ঝাড়ার জন্য অনেকের ডাক পাই। প্রতিদিন এ কাজটি করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার হয়। এ দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি। তবে আগের মতো এখন আর শরীর চলে না। বার্ধক্য বয়সের কারণে গাছে ওঠলে হাত-পা থরথর করে কাঁপে। আমাকে যদি সরকারি-বেসরকারিভাবে সহযোগিতা করা হতো তাহলে হয়তো শেষ বয়সে আরাম-আয়েশে থাকতে পারতাম।

Gaibandha

রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য লাল মিয়া বলেন, গাছি হিসেবে ছয়েছ উদ্দিনের কাজ অনেক ভালো। এই কাজের তার কদর রয়েছে। পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।

সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু তাহের মিয়া বলেন, জীবন বৃক্ষ এই উদ্ভিদ গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখে। তাই ভালো মানের নারিকেল কিংবা ডাব নিতে মাঝে মধ্যে গাছের শুকনো, মরা আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর