মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
আব্দুল জলিল ১৯৩৯ সালের ২১ জানুয়ারি তৎকালীন নওগাঁ মহকুমার চকপ্রাণ মহল্লায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মাতা জারিনা ফয়েজ। তার দুই স্ত্রী ফাতেমা জলিল ও রেহানা জলিল, দুই মেয়ে ডা. শারমীন জলিল জেসি ও ডা. মৌমিতা জলিল জুলি এবং দুই ছেলে নিজামউদ্দিন জলিল জন ও জুমায়েত জলিল জুম্মা।
বিজ্ঞাপন
আব্দুল জলিলের কর্ম ও রাজনৈতিক জীবন
বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশের পথে আমৃত্যু পথচলা এক রাজনীতিবিদের নাম জননেতা আব্দুল জলিল। দীর্ঘ ৭৪ বছর জীবনে ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগ- ৫৭ বছর একই আর্দশে পথ হেঁটেছেন। ১৯৫৭ সালে নওগাঁ কেডি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাসের পর রাজশাহী কলেজে অধ্যায়ন কালেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫৭-৫৮ সালে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাহিত্য সম্পাদক হন।
১৯৬০ সালে বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েটের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন কালে ডাকসুর অতিরিক্ত সেক্রেটারি পদে নির্বাচিত হন। এসময় তিনি ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে পর পর দুবার অর্থাৎ ১৯৬০-৬১ এবং ১৯৬১-৬২ সমিতির সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি অর্নাসসহ মার্ষ্টাস র্কোস সমাপ্তির পর ব্যারিষ্টারি পড়তে লন্ডন যান। বঙ্গবন্ধুর কথায় সাড়া দিয়ে ১৯৬৯ সালে দেশে ফিরে নির্বাচনী রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন।
১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ৭ নম্বর সেক্টরে ভারতের বালুরঘাঁট ক্যাম্পে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৭২ সালে নওগাঁ পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান, ৭৩ এর নির্বাচনে প্রথম বারের মত সংসদ সদস্য, ৭৫ সালে দেশের এক বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছু সময়ের জন্য সব দল মিলে জাতীয়দল বাকশাল গঠন করার পর নওগাঁর গর্ভনর পদে তিনি নিয়োগ পান। একই সঙ্গে বাকশালের যুক্তফ্রন্ট জাতীয় যুব লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য হন তিনি।
বিজ্ঞাপন
৭৫ এর ১৫ আগষ্টের পর দীর্ঘ প্রায় চার বছর বিনা বিচারে কারা নির্যাতন ভোগ করে ১৯৭৯ সালে তিনি মুক্তি লাভ করেন। ১৯৮৪ সালে কারা নির্যাতিত এই নেতা নওগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ৮৬ এর সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৮৮ সালে দ্বিতীয় বারের মতো নওগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ, সরকার গঠন করলে টেকনোক্র্যাট কোটায় ৯৯ সালে মাত্র ১৪ মাস বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে নওগাঁ-৫ সদর আসন থেকে তৃতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি একটানা ১৬ বছর নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
২০০৭ জরুরি অবস্থা জারি হলে ২৮ মে তিনি গ্রেফতার হন। কারাগারে গিয়ে তিনি অসুস্থত হয়ে পড়ে। অনেক নির্যাতন ও কষ্টের পর ২০০৮ সালের ২ মার্চ পাঁচটি শর্তে একমাসের জন্য প্যারোলে মুক্তি পান এবং চতুর্থ বারের জন্য সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন, গণতন্ত্র এবং ভোটের লড়াইয়ে তিনি ছিলেন সামনের সারির নেতা। ২০০২ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত আবদুল জলিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সদালাপী, কর্মীবান্ধব ও উদার মনের এই ব্যক্তিত্ব দলমত নির্বিশেষে সবার শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ২০১৩ সালে ৬ মার্চ সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শহরের চকপ্রাণ মহল্লায় গ্রামের বাড়িতে চিরনিন্দ্রায় শায়িত করা হয়।
স্মতি চারণ
বাবাকে হারানোয় খুব বেশি নাড়া দেয় আবদুল জলিলের ছেলে নওগাঁ-৫ (সদর আসনের) সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জনকে। বাবার স্মৃতি সব সময় মনে পড়ে তার। বাবার আর্দশ ও বাবার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ করে যাচ্ছেন দেশের সর্ব কনিষ্ঠ এই সংসদ সদস্য।
ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন বলেন, আমার ফুফু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এই আসনে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। নওগাঁ ৫ আসনের মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছেন। তার জন্য আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। বাবা ছিলেন গণমানুষের নেতা। এই দিনটি আসলে অনেক কষ্ট হয়। এই দিনে বাবাকে হারিয়ে ছিলাম। বাবাকে ভুলে থাকতে পারি না এক মুহূর্তও।
জন বলেন, বাবার স্মৃতি খুব গভীরভাবে মনে নাড়া দেয়। সব সময় বাবার কথা মনে পড়ে। বাবার মতো করেই সবার পাশে সুখে-দুঃখে থাকতে চাই। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই আমার নির্বাচনী আসনে। সেই লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছি। সেই সঙ্গে সবার সহযোগিতা কামনা করছি। বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন।
১০ম মৃত্যুবার্ষিকী কর্মসূচি
নওগাঁ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আহম্মেদ ইমরান বলেন, প্রিয় নেতার ১০ম মৃত্যু বার্ষিকী আজ। নেতাকে হারিয়ে ১০টি বছর আমরা পার করলাম। একজন আব্দুল জলিল গণমানুষের নেতা ছিলেন। রাজনৈতিক ও পারিবারিকভাবে প্রিয় নেতার করবে শ্রদ্ধা জানিয়ে মোনাজাত করা হবে। সেই সঙ্গে কয়েকদিনের মধ্যেই স্মরণসভা করা হবে। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
প্রতিনিধি/এসএস

