বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন দিলো কারা?

তাহজীবুল আনাম
প্রকাশিত: ০৬ মার্চ ২০২৩, ০৮:২৮ এএম

শেয়ার করুন:

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন দিলো কারা?

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা। আগুনে অন্তত তিন হাজার ঘরবাড়ি পুড়েছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় দুটি মার্কেটের প্রায় শতাধিক দোকানপাটও পুড়ে ছাই হয়েছে। এছাড়াও আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত রোহিঙ্গা।

দীর্ঘ ৪ ঘণ্টাব্যাপী ক্যাম্পজুড়ে তাণ্ডব চালানোর পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এখনো রহস্য উদঘাটন হয়নি আগুনের সূত্রপাতের। অবশ্য, অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসনের এডিএম আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রোববার (৫ মার্চ) রাত ৯টার দিকে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় এই কমিটি গঠন করা হয়।


বিজ্ঞাপন


Fireতবে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের অভিযোগ- আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একটি উগ্রবাদী সন্ত্রাসী গ্রুপ কেরোসিন ও পেট্রোল ঢেলে এই আগুন লাগিয়েছে। তারা আরও দাবি করেছেন, ‘আরসা’, ‘আল ইয়াকিন’ ছাড়াও কতিপয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী একত্র হয়ে বসতবাড়ি ও দোকানপাটে এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। সেই সঙ্গে লুটপাট করা হয়েছে স্থানীয়দের বেশ কয়েকটি বসতবাড়িও। সবমিলিয়ে পুরো ঘটনাটিকে নাশকতামূলক বলেই ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের পূর্বে আল ইয়াকিন ও আরসার সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ব্যাপক গুলিবর্ষণ করে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। যে কারণে ভীতসন্ত্রস্ত রোহিঙ্গারা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে আসেন। ফলে ব্যাপক অগ্নিকাণ্ড হওয়া স্বত্বেও কেউ অগ্নিদগ্ধ হয়নি।

Fireএদিকে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে দেখছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। তারা দাবি করেছেন, রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন ‘আরসার’ ও ‘আল ইয়াকিনের’ অর্ধশতাধিক সক্রিয় সদস্য এই অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ঘটনার সময় পালংখালী ইউপির চার নম্বর ওয়ার্ডের ১১ নম্বর ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানীয় সুলতান আহমদের ছেলে আব্দু ছবিরসহ কতিপয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ২০ থেকে ২৫টি বসতবাড়িতে লুটপাট চালিয়েছে। এছাড়াও আগুনে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এমনকি স্থানীয়দের তিন শতাধিক দোকানও আগুনে পুড়ে গেছে।


বিজ্ঞাপন


Fireক্যাম্প এলাকার ব্যবসায়ী ও স্থানীয় একটি মার্কেটের মালিক আকবর আহমেদ বলেন, ‘আমি আগুন লাগার আগ থেকে শেষ পর্যন্তই ঘটনাস্থলে ছিলাম। নিজের চোখে যা দেখেছি তা হলো- অনেক রোহিঙ্গা নিজেদের বাড়িতে নিজেরাই আগুন দিয়েছে। কতিপয় রোহিঙ্গা আরসা ও আল ইয়াকিনের সঙ্গে মিশে গিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।’

একই দাবি করেছেন বালুখালী ৯ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা আবুল কাশেম ও নুরুল আলম। তারা বলেন, পরিকল্পিতভাবে এই আগুন দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। আরসার সন্ত্রাসীরা এই অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে আমরা ধারণা করছি।

Fireএ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান ঢাকা মেইলকে বলেন, ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসনের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা আগুন লাগার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছেন। এছাড়া ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক এডিআইজি মো. আমির জাফর জানিয়েছেন, আগুনে অন্তত ১২ হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। কীভাবে এই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘরগুলো পাশাপাশি হওয়ায় আগুন ১২, ১১, ১০ ও ৯ নম্বর ক্যাম্পে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

তবে এপিবিএনের এই কর্মকর্তা বলেন, আগুনের সূত্রপাত কী কারণে হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া না গেলেও সন্দেহজনক এক যুবককে আটক করেছে এপিবিএন ও পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত জানা যাবে।

প্রতিনিধি/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর