নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, দেশটাকে একটা আঘাত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশকে পেছন দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই আঘাত করা হবে, সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য না। আমাদের পূর্বপুরুষেরা আমাদের একটি স্বাধীন ভূখণ্ড দিয়ে গেছেন, আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে কী দিয়ে যাব? ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম, শেখ হাসিনার বাবার নাম’?
শনিবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ রাইফেলস ক্লাবে নারায়ণগঞ্জ ক্রিয়েটিভ গ্র্যাজুয়েট অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত মুজিব শতবর্ষ স্মরণে স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
বিএনপি প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, আমি বিএনপিকে ছোট পার্টি মনে করি না। তাদের অনেক নেতা বড় বড় কথা বলেন। তারা এমনভাবে ২৭ দফা দাবি করেন যে সমুদ্রের পানিও যেন চিনি হয়ে যাবে। সেই পার্টির নেতাদের কাছে আমি জানতে চাই, আপনাদের উপস্থিতিতেই স্লোগান দেওয়া হয়, ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম, শেখ হাসিনার বাবার নাম’। আমি বিএনপির ওই নেতাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই- এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে কি হিন্দু এবং মুসলিম ধর্মের মানুষদের আঘাত করা হয়নি? আপনাদেরই কর্মী তারা, আর আপনারাতো তারাই যারা ২০০১ এর পরে ক্ষমতায় এসে পূর্ণিমার মতো শত শত সনাতন ধর্মের নারীদের ধর্ষণ করেছেন। ওরা (বিএনপি) আবারও একই পথে আগাতে চায় নির্বাচনকে বন্ধ করার জন্য। কারণ তারা যানে নির্বাচনে এলে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না।
বিএনপি নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন, আমি সংসদ সদস্য বলে আমার হাত-পা বাঁধা। দায়িত্বশীল পদে আছি বলে দায়িত্বশীল আচরণ করছি। যারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এসব অশ্লীল স্লোগান দিচ্ছেন, আমি যদি আমার জনগণের কাছে বিচার দেই তবে জনগণ কীভাবে আপনাদের কাছে পৌঁছাবে বুঝতে পারেন? যখন এ ধরনের অশ্লীল স্লোগান দেওয়া হয়- তখন বড় বড় নেতারা দাঁত কেলিয়ে হাসেন এবং হাত উঁচিয়ে এই ধরনের স্লোগান দিতে উৎসাহিত করেন। যারা এ ধরনের স্লোগান দিচ্ছে তারা কত বড় সাম্প্রদায়িক শক্তি? রাজনীতি করেন কোনো আপত্তি নাই, কিন্তু পায়ে পাড়া দিতে আসবেন না। আপনাদের পায়ে কিন্তু অত শক্তি নাই। আমাদের পা, জনগণের পা প্রচণ্ড শক্তিশালী, হিমালয় পর্বতের মতো। এই জনগণের পায়ে যে শক্তি আছে, বুকে পাড়া দিলে কিন্তু উঠতে পারবেন না।
বিএনপি-জামায়াতের নিপীড়ন ও অত্যাচারের স্মৃতিচারণ করে শামীম ওসমান বলেন, আমাদের ৫২ জন কর্মীকে সমাহিত করা হয়েছে, বাড়িঘরে থাকতে পারি নাই, আমাদের বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে। সেলিম ওসমানের ফ্যাক্টরিতে হামলা করা হয়েছে, বোবা প্রাণীদের দুধের বান কেটে দেওয়া হয়েছে। আমরা সব ভুলে ক্ষমা করে দিয়েছি, আমরা ধৈর্য ধরেছি। কারণ আল্লাহ ধৈর্যশীলকে পছন্দ করেন। আমাদের সেই দিনের স্মৃতিতে ফিরিয়ে নেবেন না। এখনো মাঝে মাঝে লাশগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। একটা কথা মনে রাখবেন, আমরা মানুষ, রোবট না। সব কিছুর একটা সীমা আছে, সীমা লঙ্ঘন করবেন না। ওই শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে কিছু আম-বাম, সুশীল-আতেল আমাকে সারাদিন গালি দেয়। আমি এগুলোতে কিছু মনে করি না। কিন্তু কিছু প্রশ্নেতো আর আপস করতে পারি না। বঙ্গবন্ধু-বাংলাদেশ-শেখ হাসিনা এই প্রশ্নেতো আপস করতে পারি না।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সাংবাদিক সমাজকে বলা হয় সত্যের দর্পণ, তবে সবাই যে পারফেক্ট তা বলা যায় না। রাজনীতিবিদরাও সবাই পারফেক্ট না। এমনকি পৃথিবীতে কেউই পারফেক্ট না। সম্প্রতি আমরা দেখছি বাংলাদেশের স্বাধীনচেতা সাংবাদিকদের নিয়ে যা তা লেখা হচ্ছে। একদল বলছেন ডিজিটাল আইন খুব খারাপ। আমি দেখলাম এক সাংবাদিক বোন এই ডিজিটাল আইনে বিচার চেয়ে মামলা করেছেন। আসলে আইন না থাকলে মামলা করতেন কীভাবে? অশ্লীলভাবে চরিত্র হরণ করা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের ওই সব খুনিদের ইন্ধনে এই কাজগুলো করছে। তবে আপনারা যারা সত্য লেখেন তাদের আমি খুব সম্মান করি। কারণ সত্যই সুন্দর, সুন্দরই সত্য। যারা পক্ষে লেখেন তাদের বেশি ভালো লাগে, আর যারা বিপক্ষে লেখেন তাদেরও ভালো লাগে। ভালো লাগে এই জন্য যে আপনি সত্য লিখেছেন। সত্য লিখতে পারলে লেখেন নতুবা লেখালেখি বাদ দিয়ে দেন। তবে অনুরোধ কাউকে নিয়ে মিথ্যা লিখবেন না।
বিজ্ঞাপন
অধ্যাপক ড. শিরিন বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সামসুল হক ভূইয়া ও স্বাচিপের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী বীরু প্রমুখ।
প্রতিনিধি/একেবি