সম্প্রতি রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনে। শহর-নগর পেরিয়ে গ্রামে-গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ে নিন্দার উত্তাপ।
বিজ্ঞাপন
তিন মিনিট ২৬ সেকেন্ডের ওই হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিওতে বাথরুমের ভেতরে নানা রকম অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ নেতাকে।
রাজশাহী মহানগরের কিংবা কেন্দ্রকেও নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে এই ইস্যুতে। এতে ক্ষোভ বিরাজ করছে দলটির মহানগর শাখার এক শ্রেণির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সকালে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজারে। ‘সচেতন রাজশাহীবাসীর’ ব্যানারে এ মানববন্ধন আয়োজন করা হয়।
তবে মানববন্ধন শুরু হওয়ার পরপরই কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়ে মানববন্ধনের বাধা দিতে থাকে ও ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে মানববন্ধন আয়োজকদের সাথে ধাক্কা-ধাক্কির ঘটনাও ঘটে তাদের। উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ও মানববন্ধন সম্পন্ন হয়।
বিজ্ঞাপন
ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে করা ওই মানববন্ধনের ব্যানারে বাম পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ডান পাশে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ছবি লক্ষ্য করা যায়। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ডাবলু সরকারের নোংরা ভিডিও রাজনীতিতে অশনি সংকেত ও সমাজের জন্য বিপদজনক। অবিলম্বে ডাবলু সরকারকে রাজনীতি থেকে অপসারণ করতে হবে।’
এ বিষয়ে ৮০’র দশকের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ছাত্রনেতা, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বিষয়টি একদিকে আপত্তিজনক এবং অপরদিকে দু:খজনক। আমি চাই এটা মিথ্যা হোক। আর যদি ঘটনা সত্য হয় তবে তার দল করার সুযোগ নাই।’
দলীয় বা সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে জানা আছে কি না প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কেন্দ্রের কারো সাথে কথা বলি নি।’
তবে রাজশাহীর আরেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমার এ ব্যাপারে কিছু জানা নেই। আমি এটা জানিও না, দেখিও নি। তাই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না।’
এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেনের সাথে কথা হয় ঢাকা মেইলের। তিনি বলেন, `আপত্তিকর ভিডিওটা আমি দেখিও নি, কেউ কিছু বলেও নি। মহানগরীর প্রেসিডেন্টের সাথে তো কথা বললাম, উনি তো এ ব্যাপারে আমাকে কিছু বললেন না। লিটন ভাইয়ের (আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিক মেয়র) সাথেও কথা হয়েছে। উনি শুধু বললেন রাজশাহীতে একটা বিষয় নিয়ে একটু উত্তেজনা আছে, স্পেসিফিক কিছু বলে নাই।'
কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে অবশ্যই সেন্ট্রালে লিখিত অভিযোগ দিবে। এ বিষয়ে কারো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা ডাবলু সরকার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘মামলা দায়েরের পর এখনও তদন্ত চলছে। গত কয়েক দিন ঢাকায় ছিলাম, সবশেষ কি অবস্থা সেটা বলতে পারছি না। খুব তাড়াতাড়িই একটা ব্যবস্থা হবে বলেও আশাবাদী তিনি।’
সকালে নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে জানি না। আজ সকালেই ঢাকা থেকে এসেছি, কে কি করেছে এ বিষয়ে বলতে পারবো না।’
নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সচেতন রাজশাহীবাসীর’ ব্যানারে একটি মানববন্ধন হয়েছে। সেখানে তেমন কিছু হয় নি, পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। তারা তাদের কর্মসূচি পালন করেছে।
মামলার ব্যাপারে ওসি বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজশাহী মহানগরের বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের নারীর সঙ্গে ফোনে যৌন সম্পর্ক ফাঁস’ শিরোনাম একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যাতে তাকে নগ্ন অবস্থায় দেখা যায়। ভিডিও ছড়িয়ে পরলে চারিদিকে তোলপাড় শুরু হয়।
এরপরই ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন আওয়ামী লীগ নেতা ডাবলু। মামলায় তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে এডিটিংয়ের করে অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে সম্মানহানীর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন।
প্রতিনিধি/এইচই

