রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ডিএম-৪ জাতের তুলা চাষে লাভ বেশি, কৃষক খুশি 

মো. জাহিদ হাসান মিলু
প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

ডিএম-৪ জাতের তুলা চাষে লাভ বেশি, কৃষক খুশি 
ছবি : ঢাকা মেইল

তুলাগাছে ফুটে আছে সাদা ফুল। ছড়াচ্ছে মনজুড়ানো শুভ্রতা। তুলার খেত শুধু আনন্দই দিচ্ছে না, কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসিও ফুটিয়েছে। ভালো ফলন ও ভালো দাম পেয়ে কৃষকেরা খুশি। এ কারণে ঠাকুরগাঁয়ের কৃষকেরা তুলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। 

এই চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ার পেছনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাল তীর সিড লিমিটেডের ভূমিকা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ভালো জাতের তুলার বীজ সরবরাহ করে কৃষকদের তুলা চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। 


বিজ্ঞাপন


উন্নতমানের হাইব্রিড ডিএম-৪ জাতের তুলার ফলনে ও খরচের চেয়ে দ্বিগুণ লাভবান হওয়ায় খুশি ঠাকুরগাঁও জেলায় কৃষকরা। অন্যান্য জাতের তুলার চেয়ে এ জাতের তুলার ফলন ও মান ভালো হওয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে চাষীদের মাঝে।

thakurgaon

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, তুলা এমন একটি ফসল, যার প্রতিটি অংশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—আঁশ থেকে সুতা, বীজ থেকে খৈল ও খাওয়ার তেল পাওয়া যায়। গাছ থেকে জ্বালানি, কাগজ তৈরি ও হার্ডবোর্ড বানানো যায়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। যে জমিতে কোনো ফসল হয় না সেই জমিতে পর পর দুই মৌসুম তুলা চাষ করলে এর উর্বরতা শক্তি এমন বৃদ্ধি পায় যে তখন সব ধরণের ফসল সহজেই ফলানো যায়।

জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরে উফশী ও হাইব্রিড মিলে তুলা চাষ হয়েছে ৪শ ২৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৮১৬ বেল তুলা। যার অর্থমূল্য ১৮ কোটি টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭শ হেক্টর জমিতে, যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বর্তমান মূল্য প্রায় ২৮-৩০ কোটি টাকা। 


বিজ্ঞাপন


সদর উপজেলার হরিহরপুর গ্রামের তুলাচাষি নুরুজ্জমান (গোলাপ) ঢাকা মেইলকে জানান, ৩৩ শতাংশের ১৪ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন লাল তীরের হাইব্রিড ডিএম-৪ জাতের তুলা। চাষ করতে বিঘায় খরচ হয়েছে ২০-২৫ হাজার টাকা। এক বিঘাতেই ফলন হয়েছে ১৬ মণ। বর্তমান যার প্রতিমণ বাজার মূল্য ৩ হাজার ৮শ টাকা। প্রতি বিঘার জমির তুলা বিক্রয় করেছেন ৬০ হাজার টাকা। তাতে ৬ মাসে এক বিঘা জমিতে লাভ হয়েছে তার ৩৫-৪০ হাজার টাকা। এখনও সম্পূর্ণ তুলা হারভেস্ট করা হয়নি। জমিতে এখনো রয়ে গেছে অনেক তুলা। এছাড়াও তিনি তুলার সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে চাষ করেছেন আখ।

জেলার কৃষকরা পরিত্যক্ত জমিতে চাষ করেছেন তুলা। চাষিদের অনেকেই তুলার সঙ্গে সাথি ফসল হিসেব কেউ আখ, কেউবা কলা, কেউ আবার নানা ধরনের শাক-সবজি চাষ করেছেন। 

thakurgaon

তুলা চাষি অর্জুন দেব নাথ ও বেলাল হোসেন জানান, এক ফসলের পরিচর্যা ও খরচে দুই ফসল করতে পেরে লাভবান হচ্ছেন তারা। এছাড়াও তুলা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন স্থানীয় তোফাজ্জল ইসলাম। তিনি বলেন, ফসল উঠানোর পর তুলা গাছগুলো জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া একসঙ্গে সাথী ফসল চাষ করতে পেরে তুলায় আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। 

ঠাকুরগাঁও তুলা উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ পরিদর্শক স্বদেশ চন্দ্র রায় ঢাকা মেইলকে জানান, তুলা বোর্ডের পাশাপাশি কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ ও বীজ সরবরাহ করছেন লালতীর সিড লিমিটেড।

thakurgaon

লাল তীর সিড লিমিটেডের রংপুর ডিভিশনাল ম্যানেজার মেহেদী হাসান খান বলেন, লালতীর সীড অন্যান্য বীজ সরবরাহের পাশাপাশি কোম্পানি দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে, কৃষক এবং শ্রমিকদের আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যেই ডিএম-৪ জাতের তুলার বীজ সরবরাহ করে যাচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, ডিএম-৪ জাতের তুলার মান ভালো ও ফলন অনেক বেশি। আমরা এখানে মাঠ পরিদর্শনে এসে কৃষকদের কাছে শুনেছি কারও কারও বিঘা প্রতি ১৬-২০ মণ করে তুলা হয়েছে।

লাল তীর সিড লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ডক্টর মোহাম্মদ ইশরাত হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ও গামের্ন্টস শিল্পকে রক্ষার জন্য লাল তীর সিড লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল্লা আল মিন্টু সাহেবের একান্ত প্রচেষ্টায় উন্নত জাতের তুলার বীজ ডিএম-৪ নিয়ে আসা হয়েছে এবং এ জাতের বীজের তুলার ফলন ভালো হওয়ায় চাষিদের মাঝে সাড়া ফেলেছেন। আমরা কোম্পানির পক্ষ থেকে কৃষকদের নানাভাবে মাঠ দিবসের মাধ্যমে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। আমি সব কৃষক ভাইদের আহ্বান করব, আপনাদের যাদের তুলনামূলক কম উর্বর জমি আছে, সেগুলো ফেলে না রেখে তুলা চাষ করুন। আসুন আমরা সকলে তুলা চাষে এগিয়ে এসে দেশের ডলার রক্ষা করি।

জেলার প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা বলছেন, লাল তীর সীডের ডিএম-৪ জাতের বীজের জার্মিনেশন ভালো। এর বিঘা প্রতি ১৬-২০ মণ করে ফলন হওয়ায় খুশি কৃষকরা। এছাড়া তুলা উন্নয়ন বোর্ডই কৃষকদের কাছে তুলা ক্রয় করে এবং এই ফসলের দামও স্থিতিশীল। একই ফসলের সঙ্গে অন্য ফসল করতে পারায় আগামীতে জেলায় তুলা চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন ঠাকুরগাঁও জোনের তুলা উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কর্মকর্তা এ কে এম হারুন অর রশিদ।

রংপুর অঞ্চল তুলা উন্নয়ন বোর্ডের উপ-পরিচালক আবু ইলিয়াস মিঞা ঢাকা মেইলকে বলেন, লাল তীর সিডের ডিএম-৪ ও তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সিবি হাইব্রিড-১, উফশী-১২ ও-১৫ জাতের বীজ কৃষকদের সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে কৃষকরা এসব হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন। তাই বিভিন্ন কোম্পানি বীজ সরবরাহ করার জন্য এগিয়ে আসছেন। এছাড়া দেশে উৎপাদিত তুলাকে আন্তর্জাতিক মানের তুলা করার জন্য প্রাইমারের উদ্যোগে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কাজ করছে কোর্টন কার্নেক্ট ও টিএসএমএস। আর এসব তুলা বিভিন্ন জেনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও স্পেনিং মিলস্ ক্রয় করে নিচ্ছেন। তারা কৃষকদের মুনাফাবিহীনভাবে তুলা চাষের জন্য ঋণ দিয়েছে। এতে করে আমরা কৃষকদের আরও বেশি সুবিধা দিতে পারছি। তাই আগের তুলনায় এখন তুলা চাষে এগিয়ে আসছেন কৃষকরা। 

উত্তরাঞ্চলে আগামীতে তুলার চাষ আরও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ হবে বলেও আশা করেন তিনি।

প্রতিনিধি/এইচই/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর