সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতায় নওগাঁয় পুলিশ কনস্টেবল পদে ১০০ জন তরুণ-তরুণীকে চাকরি দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৫টার দিকে উত্তীর্ণ নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ১০০ জন পুলিশ কনস্টেবলের মধ্যে পুরুষ ৮৫ জন ও নারী ১৫ জন।
পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এতে অংশ গ্রহণ করে মোট ২ হাজার ৬৯৮ জন। প্রথম ধাপে শারিরীক পরীক্ষায় ১ হাজার ৫৮১ জন উত্তীর্ণ হয়। দ্বিতীয় ধাপে ২০০মিটার দৌড়, পুশ আপ, লং জাম্প ও হাই জাম্প পরিক্ষায় ১ হাজার ১৪ জন উত্তীর্ণ হয়। তৃতীয় ধাপে ১৬০০ মিটার দৌড়, ড্রাগিং ও রোপ ক্লাইম্বিং পরিক্ষায় ৭৬২ জন উত্তীর্ণ হয়। এর পর ১৮ ফেব্রুয়ারি চতুর্থধাপে লিখিত পরিক্ষায় ৭৬০ জন উত্তীর্ণ হয়। সর্বশেষ সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার রাতভর মৌখিক পরীক্ষা শেষে ভোরে মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়। পরে নিয়োগ প্রাপ্তদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান পুলিশ সুপার।
বিজ্ঞাপন
নিয়োগপ্রাপ্ত ১০০ জনের মধ্যে সাধারণ কোটায় পুরুষ মোট ৬৬ জন প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে । তার মধ্যে পুলিশ পোষ্য কোটা থেকে ৪ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা থেকে ৩ জন এবং উপজাতি কোটা থেকে ২ জন সাধারণ কোটার মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
পুলিশ পোষ্য কোটায় ৩ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১১ জন, আনসার কোটায় ১ জন, উপজাতি কোটায় ৪ জনসহ সর্বমোট ৮৫ জন পুরুষ প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে। সাধারণ কোটায় মোট ১৩ জন নারী প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে। তার মধ্যে ১জন উপজাতি নারী মেধা তালিকায়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নারী মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১ জন, নারী উপজাতি কোটায় ১ জনসহ সর্বমোট ১৫ জন নারী প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুরুষ ১৪ জনের মধ্যে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও ১১ জন মুক্তিযোদ্ধার নাতি রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নারী ১ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রয়েছে।
নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অধিকাংশই গরীব পরিবারের সন্তান। এবার মাত্র ১২০ টাকায় চাকরি পাবে তা কল্পনাও করেতে পরেনি তারা।
চাকরি পেয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করে আরাফাত মোল্লা বলেন, পারিবারিক খরচসহ আমার পড়ালেখার জন্য মা-বাবা অনেক কষ্ট করেছেন। খুব আশায় ছিলাম একটা চাকরির জন্য৷ কোন ঘুষ, তদবির ছাড়াই মেধার মাধ্যমে চাকুরি পেয়েছি।
বিজ্ঞাপন
নিয়োগ পাওয়া সাবরিনা আক্তার বলেন, কিভাবে ভাষায় প্রকাশ করবো জানা নেই। খুব কান্না পাচ্ছে আমার। এই কান্না আনন্দের। বাবা একজন কৃষক। অনেক কষ্ট করে আমাকে মানুষ করেছেন। পড়াশোনা করে বড় করে তুলেছেন। ১২০টাকা মাত্র খরচ হয়েছেন আমার। কোন তদবির লাগেনি। মা-বাবার মুখে হাঁসি ফুটাতে পেরেছি। তাদের কষ্ট সফল হয়েছে আজ। এর চেয়ে আমার জীবনে আর কোন আনন্দ নেই।
পুলিশ সুপার মহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, যোগ্যতা অনুযায়ী ১০০ জন মেধাবী মুখ বাংলাদেশ পুলিশের জন্য নিয়োগ করতে পেরেছি। পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ কার্যক্রম যা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। সরকারের জন্য মেধাবী ও দক্ষ পুলিশ জনবল নিশ্চিত করতে পেরেছি এতে আমার ভালো লাগছে। পুলিশ সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া অনেক বেশি স্বচ্ছ হয়েছে। অনেক কৌশলে সুন্দরভাবে নিয়োগগুলো হয় । যার ফলে মেধাবীদের মূল্যায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। মেধাবীদের নেওয়ার ফলে দ্রুত পুলিশের বিভিন্ন কৌশল ও পাঠগুলো আয়ত্ত করতে পারবে। এতে করে আগের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ পুলিশ বিভাগ গড়ে উঠবে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ভবিষ্যতের পুলিশ অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর আগে থেকে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি, প্রতারক ও দালালচক্রকে কোন অর্থ না দিতে এবং মেধা, যোগ্যতা ও সততার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়ার প্রচারনা করে থাকে। আমরা শতভাগ স্বচ্ছ নিয়োগ সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছি। টাকা ছাড়া মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি পেয়ে ১০০জন আনন্দে আত্মহারা। এটাই বড় প্রাপ্তি।
প্রতিনিধি/ এজে

