ফেনীতে স্বপ্ন দেখাচ্ছে ৩ বন্ধুর কৃষি খামার। ফেনীর মানুষকে পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার সরবরাহ করতে রসায়নিক মুক্ত এ খামার গড়ে তুলেছেন তারা। ৫ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা জান্নাত অ্যাগ্রো খামারটিতে ফলমূলসহ নানা রকমের সবজি পাওয়া যাচ্ছে। খামারটি একদিকে স্থানীয়দের ফ্রেশফুড সরবরাহ করছে অন্যদিকে উদ্যোক্তা যুবকদের স্বাবলম্বী করে তুলছে। ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের আমিন বাজার সংলগ্ন স্থানে চালু হওয়ার ১০ মাসের মধ্যেই খামারটি আশার আলো জালিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।

বিজ্ঞাপন
জানা যায়, ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দা, চাকরির বাজারে অসম প্রতিযোগিতায় মনোবল হারা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ শিক্ষিত ৩ যুবক এক হয়ে গড়ে তোলেন কৃষি খামার। পৃথক দুটি পাশাপাশি স্থানে ৫ একর জায়গায় গড়ে ওঠা এ খামারে লাগানো হয়েছে স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী নানা জাতের দেশীয় ও বিদেশী জাতের ফলমূল। রয়েছে শাক-সবজিও। দীর্ঘ মেয়াদী জাতের ফলমূলের ফলন আসতে সময় লাগলেও ইতোমধ্যে স্বল্প মেয়াদী কুল ও শাক-সবজি উঠতে শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই টাটকা, ফরমালিনমুক্ত শাক-সবজি ও কুল কিনতে আশপাশের মানুষ আসছেন খামারে। বিশেষ করে স্বাদ, মিষ্টি ও রস ভালো হওয়ায় এ খামারের কুলের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে জেলা শহরসহ আশপাশের এলাকায়। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এ খামারে এসে পরিবার ও স্বজনদের জন্য কুল কিনছেন।
বাগানের উদ্যোক্তারা জানান, ফেনী ও আশপাশের এলাকায় ফরমালিন, রাসায়নিক মুক্ত টাটকা ফলমূল ও সবজি সরবরাহ করতে জান্নাত অ্যাগ্রো বিডি নামের এ খামার গড়ে তুলেছেন তারা। ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, তোফায়েল আহাম্মদ রনি ও জাহিদুল ইসলামের এ খামারে আম, মাল্টা, কমলা, এভোকাডো, আলু বোখরা, মালবেরী, আঙুর, আনার ও ড্রাগনসহ দীর্ঘ মেয়াদী বিভিন্ন ফলের গাছ লাগনো হয়েছে।

এসব গাছে ফল আসতে কিছুটা দেরি হওয়ায় সাথী ফসল হিসেবে খামারে কুল, পেয়ারা ও বিভিন্ন প্রকারের সবজি লাগানো হয়েছে। বর্তমানে এ বাগানে লাগানো কুলের সুনাম আশপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই এখানে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ এসে নিজ হাতে কুল সংগ্রহ করে পরিবার ও স্বজনদের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। বাজারে পাওয়া কুলের তুলনায় এ খামার থেকে সংগ্রহ করা কুলের দাম একটু বেশি। তবে নিজ হাতে খামার ঘুরে বাছাই করে সংগ্রহ করার সুযোগ থাকায় দাম যাইহোক কুল কিনে খুশি ক্রেতারা।
বিজ্ঞাপন
প্রায় ২০ কিলোমিটার দূর থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে এ খামার থেকে কুল সংগ্রহ করতে এসেছেন মাহমুদুল হাসান। তিনি জানান, বেশ কিছুদিন আগে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে তিনি এ খামারের কুল খেয়ে স্বাদ পেয়েছেন। তাই আরও দুই বন্ধু নিয়ে খামার ঘুরে পরিবারের জন্য বাছাই করা কুল সংগ্রহ করতে পেরে খুশি তিনি। এখানে প্রতিকেজি কুল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।
স্থানীয় বৃদ্ধ মাদু মিয়া এ খামারে এসেছেন সবজি নিতে। তিনি জানান, এখানকার সবজির দাম বাজারের তুলনায় একটু বেশি। তবে ফরমালিনমুক্ত ও রাসায়নিকবিহীন টাটকা সবজির স্বাদ অনেক বেশি হয়। তাই দাম বেশি হলেও বেশ কিছুদিন ধরে এ খামার থেকেই সবজি ক্রয় করেন।

খামারি তোফায়েল আহাম্মদ রনি বলেন, তাদের খামারে তুরস্ক, মরক্কো, বারি-১ ও মেরেন্ডা জাতসহ ১৫ থেকে ১৬ জাতের মাল্টা গাছ লাগানো হয়েছে। দার্জিলিং ও দেশীয় জাতের কমলা গাছ রয়েছে। গোরমতি, বুনাই কিং, খিল টেস্ট, ব্লাক স্টোন, সুর্য্য দ্বিপসহ ২৬ জাতের আম গাছ আছে তার বাগানে। এসব ফসল আসতে প্রায় ৩ বছর অপেক্ষা করতে হবে। তাই সাথী ফসল হিসেবে পুরো বাগানে কুল, পেয়ারা ও সবজি লাগানো হয়েছে। ইতোমধ্যে বাগান থেকে প্রায় ৫০ মণ কুল বিক্রি হয়েছে। আরও প্রায় ৫ হাজার কেজি কুল পাওয়া যাবে। শুধু কুল বিক্রি করেই চলতি মৌসুমে ৭ লাখ টাকা আয় হওয়ার প্রত্যাশা করেন তিনি।
অন্য সহযোগী খামারি ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, বাগানে মাল্টা গাছের দুরত্ব ১০ থেকে ১৫ ফুট। তাই আমরা ১৫ ফুটের এ খালি জায়গায় কুল ও পেয়ারা লাগিয়েছি। এখন পর্যন্ত এ বাগানে উৎপাদিত ফল ও শাক-সবজি বাজারে নিতে হয়নি। আমাদের খামারের কুলের স্বাদ, রস ও মিষ্টি ভালো হওয়ায় ক্রেতারা এসে নিয়ে যায়।

খামারে টক-মিস্টি, থাইমিস্টি, থাইকুল এবং বল সুন্দরী জাতের কুল রয়েছে। স্থানীয় জাত এবং থাইমিস্টি বারোমাসি পেয়ারা আসবে কিছু দিন পরেই। বাকী ফল আসতে আরও বেশি সময় লাগবে। ভালো দামে কুল বিক্রি আমাদের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে। আমাদের মনোযোগ ও উদ্যোমের কারণে কৃষি বিভাগ, হর্টিকালচার বিভাগ নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। ফ্রেশ ফুড পাওয়ায় আমাদের এ খামার নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝেও এক ধরনের প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে।
ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বিথী বলেন, ধর্মপুর ইউনিয়নের আমিন বাজার সংলগ্ন ৩ যুবকের জান্নাত অ্যাগ্রো বিডি খামারটি আমরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রেখে পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি। তাদের দেখে অনেক যুবক আশাবাদী হয়ে খামার গড়ে তোলার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এধরনের খামার একদিকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনীতির যোগান দেবে অন্য দিকে স্থানীয় পর্যায়ে ফরমালিন ও রসায়নিক মুক্ত ফ্রেশফুডের চাহিদা মেটাবে। ভেজাল খাদ্যের যুগে এধনের খামার অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।
প্রতিনিধি/এসএস

