দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের রাস্তা ধরে হাঁটছি। পাকুড়া ফল একটু একটু খেয়ে ইটের রাস্তায় অজস্র পড়ে আছে। মাথা উপরে তুলতে চোখে পড়ল আবাসিক পাখি কালো-ঝুঁটি বুলবুলি বা কালো-খোঁপা হলদে বুলবুলি পাখি। পাকুড়া ফল খেতে এ ডাল থেকে ও ডালে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। স্থিরতা নেই বললেই চলে।
সাহসী এবং চঞ্চলমতি পাখি খোঁপা বুলবুলি। ছোট ফল কিংবা পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায় এরা। গান সংক্ষিপ্ত, তরল, এবং সুরেলা। শুধু পাহাড়ি এলাকায় এদের দেখা যায়।
বিজ্ঞাপন

কালো-ঝুঁটি বুলবুলি বা কালো-খোঁপা হলদে বুলবুলি নামে এরা পরিচিত। ইংরেজি নাম Black-crested Bulbul বা Black-headed Yellow Bulbu। Pycnonotidae। এর বৈজ্ঞানিক নাম pycnonotus flaviventris। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত পাওয়া যায়।
পাখি ও বন্য প্রাণী লেখক শরীফ খান বলেন, কালো-খোঁপা বুলবুলি পাহাড়ি অঞ্চল ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না। কালো-খোঁপা বুলবুলির দেহের দৈর্ঘ্য ১৭ থেকে ১৯ সেন্টিমিটার। ওজন ৩০ থেকে ৩৪ গ্রাম। এদের কালো মাথায় চমৎকার চকচকে কালো খাড়া ঝুঁটি। ঘাড়-গলাও চকচকে কালো। ডানাসহ দেহের ওপরটা জলপাই-সবুজ ও নিচটা সোনালি-হলুদ। লেজ জলপাই-বাদামি। চোখ সাদাটে। ঠোঁট, পা, পায়ের পাতা ও নখ কালো। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে প্রায় একই রকম। পুরুষ একটু কালো বেশি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা কালচে-বাদামি ও ঝুঁটি অপেক্ষাকৃত ছোট। দেহের পালকের রং অনুজ্জ্বল ও তাতে ধূসরের প্রাধান্য। কালো-খোঁপা বুলবুলি সচরাচর দৃশ্যমান পাখি।

বিজ্ঞাপন
জোড়ায় ও ছোট দলে বিচরণ করে। গাছপালা, ঝোপঝাড়, বৃক্ষতলে-ডালে লতায় বেশি দেখা যায়। ফল প্রধান খাদ্য হওয়ায় পাকা ফলের গাছে বেশি আনাগোনা। তবে কীটপতঙ্গেও অরুচি নেই। গাছের ডাল থেকে সামান্য উড়ে গিয়ে মনোরম ভঙ্গিতে কীটপতঙ্গ ধরে আবার গাছের ডালে এসে খায়।
পাখি ও বন্যপ্রাণী লেখক-গবেষকরা জানায়, মার্চ-জুন প্রজননকাল। এ সময় ঘন ঝোপঝাড় বা চারাগাছে শুকনো পাতা, মাকড়সার জাল ইত্যাদি দিয়ে দুর্বল বাটির মতো বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিমের রং সাদা, তাতে থাকে অসংখ্য লালচে-বেগুনি ফোঁটা ও দাগ-ছোপ। ডিম ফোটে ১০ থেকে ১২ দিনে। বাচ্চারা ১৫ থেকে ১৮ দিনে উড়তে শেখে। তবে এরপর বেশ কিছু দিন মা-বাবার সঙ্গে থাকে। এরা প্রায় ৮ বছর বাঁচে।

পাখি ও বন্যপ্রাণী লেখক-গবেষক শরীফ খান বলেন, কালো-ঝুঁটি বুলবুলি পাহাড়ি এলাকার পাখি। ইংরেজি নাম ব্ল্যাক ক্রেস্টেড বুলবুল। আবাসিক পাখি এরা। সবুজ-বনের বাসিন্দা। সমতলে ওদের দেখা যায় না। খুব সাহসি পাখি। বাসার নিচে মানুষ দেখলে উত্তেজিত হয়ে চেঁচামেছি করে তাড়ানোর চেষ্টা করে । উত্তেজিত হলে মাথার ঝুটির তিন-চারটি পালক খাড়া হয়ে যায়। জাম, পাকুড়াফলসহ অন্যান্য ছোট ফল ও কীটপতঙ্গ খায়। বসস্ত থেকে শরৎকাল পর্যন্ত বাটির মতো গোল করে বাসা বানিয়ে ডিমে তা দেয়। রেগে গেলে চোখ রাঙ্গাকীত হয়ে যায়। পুরুষ পাখি একটু বেশি কালো দেখায়। ১৭ থেকে ১৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।
প্রতিনিধি/এসএস

