শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

২৪০ ডিজিটের ভোগান্তিতে নাকাল বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার গ্রাহকরা

আহমাদ সোহান সিরাজী
প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:১২ এএম

শেয়ার করুন:

২৪০ ডিজিটের ভোগান্তিতে নাকাল বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার গ্রাহকরা
ছবি: ঢাকা মেইল

যাদের বাসা-বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার রয়েছে সাধারণত তাদের সেই মিটারে টাকা রিচার্জ করার ক্ষেত্রে গ্রাহকের ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে খুদেবার্তা আকারে পাঠানো ২০ ডিজিট চেপে তা মিটারে প্রবেশ করাতে হতো। কিন্তু এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই ডিজিট সংখ্যা ১২ গুন বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৪০টি। এতগুলো ডিজিট একসঙ্গে প্রবেশ করাতে গিয়ে অনেকেই ভুল করছেন।

এতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়াবাসীর। ডিজিট চাপতে টানা তিনবার ভুল হলে মিটার লক হয়ে যায় অনেকের। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে সেই গ্রাহককে। অভিযোগকেন্দ্রে জানিয়েও সহসাই মিলছে না সমাধান।


বিজ্ঞাপন


গ্রাহকদের ভোগান্তির এই বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কিন্তু তাতেও কোনো সুরাহা মিলছে না।

এমন ভোগান্তির বিষয়ে জানিয়ে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির বাসিন্দা শিক্ষিকা অন্তরা জাহান ঢাকা মেইলকে বলেন,  আমি মূলত বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে আমার ফ্লাটের পল্লী বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করে থাকি। আগে ব্যালেন্স রিচার্জ করতে গেলে মোবাইল নম্বর বা বিকাশ অ্যাপে মেসেজের মাধ্যমে ২০টি সংখ্যা আসত, ওই সংখ্যাগুলো মিটারের টাইপ করে রিচার্জ করা যেত। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে আমি বিকাশে রিচার্জ করার পর আমার ফোনে ২৪০টি সংখ্যা পাঠানো হয় পরে আমি কয়েকবারের চেষ্টায় সেটি রিচার্জ করতে সমর্থ হই এবং বিষয়টি নিয়ে পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তারা আমাকে জানায়, পরের মাসে এটি আবার আগের মতো ২০টি সখ্যায় ফিরে যাবে। কিন্তু এ মাসেও (ফেব্রুয়ারি) আমি মিটার রিচার্জ করার পর আমাকে পুনরায় সেই ২৪০টি সংখ্যাই পাঠানো হয় এবং আমাকে সেগুলো প্রবেশ করিয়ে মিটার রিচার্জ করতে হয়েছে। এটি আসলেই চরম বিরক্তিকর একটি অভিজ্ঞতা।

সাভারের সোবাহানবাগ এলাকার বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী তোফায়েল হোসেন তোফাসানী ঢাকা মেইলকে জানান, তার বিল্ডিংয়ে মোট ১৪টি মিটার রয়েছে। সব কটিতেই একই ধরনের সমস্যা। শুধু তাই নয়, আশপাশের অন্যরাও একই ধরনের সমস্যায় পড়েছেন। রিচার্জ করতে গিয়ে অনেকে তিনবারের বেশি ভুল নম্বর চাপার কারণে তাদের মিটার লক হয়ে যায়। পরবর্তীতে তা বিদ্যুৎ অফিস থেকে লোক আনিয়ে ঠিক করাতে হয়েছে।

savar
বিদ্যুতের মিটার রিচার্জের আগের ও বর্তমান ক্ষুদে বার্তা

 

আশুলিয়ার ডেন্ডাবর এলাকার বাসিন্দা গৃহবধু তন্নী আক্তার ঢাকা মেইলকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার বাসায় বিদ্যুতের মিটারটি সিড়ির নিচে লাগানো। তাই মিটার রিচার্জ করতে হলে মাথা নিচু করে বাঁকা হয়ে তারপর রিচার্জ করতে হয়। আগে ২০টি ডিজিট টিপে মিটারে টাকা ঢুকানো যেতো, এখন সেখানে ২৪০টি ডিজিট টেপা লাগে যেটিতে প্রায় ১০ থেকে ১২ মিনিটও সময় লেগে যায়। এতক্ষণ এভাবে বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটা খুবই কষ্টকর ব্যাপার। আমাদের বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়াদেরও একই সমস্যায় পরতে হচ্ছে। এর চেয়ে আমাদের আগের এনালগ মিটারই হাজারগুন ভালো ছিল।

এ ব্যাপারে সাভার সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন খান নঈম ঢাকা মেইলকে বলেন, দেশে ডিজিটালাইজেশনের কারণে সবকিছু যেখানে আরও সহজ হবার কথা, সেখানে যদি একটি বিদ্যুতের মিটার রিচার্জ করতে গিয়ে গ্রাহককে ২৪০টি ডিজিট প্রেস করতে হয়, তাহলে তো সেটি রীতিমতো ভোগান্তির ব্যাপার। মিটার রিচার্জের এই প্রক্রিয়াটিকে জটিল না করে বরং কিভাবে একে গ্রাহকদের জন্য আরও সহজতর করা যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সচেতন হবার আহ্বান জানাচ্ছি আমি।

এদিকে, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) কর্তৃপক্ষ তাদের প্রিপেইড গ্রাহকদের এই ভোগান্তির বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তারা বলছেন, বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার দুই প্রকার অফলাইন এবং অনলাইন। মূলত অফলাইন গ্রাহককে এ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গত ১২ জানুয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম গড়ে ইউনিট প্রতি ৩৬ পয়সা বৃদ্ধি করা হয়। বিদ্যুতের ট্যারিফ চেঞ্জ হওয়ার পর থেকে এ টেকনিক্যাল সমস্যা দেখা দিয়েছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাইকারি, খুচরা ও সঞ্চালন- এ তিন পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরও এমন সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তখন গ্রাহককে ১০০টি ডিজিট মিটারে চেপে রিচার্জ করতে হয়েছে। কিন্তু এখন একজন গ্রাহককে একবারই ২০০-এর অধিক ডিজিট মিটারে চেপে তারপর ব্যালেন্স রিচার্জ করতে হবে। তবে ধীরে ধীরে সকল মিটারকে অনলাইনে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলমান রয়েছে। মিটারগুলো অনলাইন হয়ে গেলে গ্রাহকদের আর এই সমস্যা পোহাতে হবে না। এ ছাড়া কোনো সমাধান আপাতত নেই।

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মহাব্যবস্থাপক মো. শাহজাহান কবির ঢাকা মেইলকে বলেন, যখনই বিদ্যুৎয়ের মূল্য পরিবর্তন হয়, তখনই আমাদের এই সমস্যাটি তৈরি হয়। এটা সব জায়গাতেই হচ্ছে, শুধু আমাদের এরিয়াতে না। সারাদেশে আমাদের মোট ১২টা সমিতিতেই একই রকম সমস্যা হচ্ছে। আমরা নিজেরাও এটি সমাধানের জন্য একটা টিম গঠন করেছি। ইতোমধ্যে আমরা আমাদের গ্রাহকেরা কিভাবে এই ২৪০টি ডিজিট মিটারের কিবোর্ডে টাইপ করে মিটার রিচার্জ করবেন, সেই পদ্ধতি আমাদের ওয়েবসাইটসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছি। এছাড়া ভুল ডিজিট প্রবেশ করানোর জন্য কারো মিটার লক হয়ে গেলে আমরা গ্রাহকদের বাসায় লোক পাঠিয়ে তা সমাধান করছি। এতে সাময়িকভাবে গ্রাহকদের ভোগান্তি হলেও ধীরে ধীরে গ্রাহকরা এর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর