শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাইদের

আলমগীর হোসেন
প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৩৪ এএম

শেয়ার করুন:

টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাইদের
ছবি: ঢাকা মেইল

মাত্র দেড় লাখ টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না জটিল রোগে আক্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু সাইদ (৭৫)। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার করাতে না পেরে বিছানায় শুয়ে শুয়ে তিনি এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। তার আক্ষেপ বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশ মাতৃকার টানে জীবন বাজী রেখে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের শেষদিন পর্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে লড়েছেন শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে। ছিনিয়ে এনেছেন লাল সবুজ পতাকা। আর আজ সামান্য কিছু টাকার জন্য তাকে বিনা চিকিৎসায় মরতে হচ্ছে তাকে।

জানা গেছে, জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার চরগোয়ালিনী ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা আবু সাইদ ৭ বছর আগে ব্রেইনস্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এতদিন সাধ্যমত চিকিৎসা চালিয়ে এলেও এখন তিনি অনেকটাই অপারগ। ডাক্তারের মতে, তার সুস্থতার জন্য অপারেশনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা জরুরি। তার জন্য প্রয়োজন কয়েক লাখ টাকা। কিন্তু সে টাকা যোগারের সাধ্য নেই মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের। এ অবস্থায় দিন দিন তার অবস্থা অবনতি হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন জানান, তাদের ঘরে তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে ইলিয়াছ পুলিশ কনস্টেবল। স্ত্রী সন্তান নিয়ে তার আলাদা সংসার। ছোট ছেলে রাফিউর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। ছেলের পড়াশোনা, সাংসারিক খরচ নিত্যদিনের ওষুধ পথ্য কিনকে গিয়ে স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ফুরিয়ে যায়।

ইয়াসমিন আরও জানান, সাত বছর ধরে স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে সব শেষ। ভিটামাটি আর সরকারের দেওয়া বীর নিবাস ছাড়া অবশিষ্ট কিছুই নেই তাদের। ফলে টাকার অভাবে স্বামীর সঠিক ও উন্নত চিকিৎসার করাতে পারছেন না তিনি। যার কারণে প্রতিদিন নতুন নতুন রোগ বাসা বাধছে তার দেহে।

নানা রোগে আক্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু সাইদ বলেন, এই দেশে অনেক বিত্তবান মানুষ আছেন। কিন্তু তিনি ৭ বছর ধরে রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে আছে এখন পর্যন্ত কেউ দেখতে আসেনি। মাত্র দেড় লাখ টাকা জন্য তিনি চিকিৎসা করাতে পারছেন না। জীবনের এই শেষ পর্যায়ে এসে মৃত্যু সঙ্গে লড়াই করছেন তিনি। যে দেশ ও দেশের মানুষের দুঃসময়ে জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছিলেন। আজ তার চরম দুঃসময়ে কেউ তার পাশে নেই। এ অবস্থায় অর্থ সাহায্য নয়, তার সুচিকিৎসার দায়িত্ব নিতে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।

jamalpur


বিজ্ঞাপন


তার সহযোদ্ধা আবুল হোসেন বলেন, বর্তমানে জামালপুরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কোনো কমিটি নেই। এ জন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা কেমন আছে, তার কোন খোঁজ খবর রাখা সম্ভব হয় না। এইজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এইভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে এটা লজ্জাজনক। তাই তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদের চিকিৎসার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু সাইদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ডাকে ১৯৭১ সালের ৪ঠা মে ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর তাহেরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। রিক্রুট হওয়ার পর ২৯ দিন সাধারণ যোদ্ধার প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি গেরিলা যুদ্ধের জন্য উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। যোদ্ধা হিসেবে তার সাহস, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা দেখে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৩ গার্ড ব্যাটালিয়ান রেজিমেন্টে তাকে বেছে নেন। যুদ্ধকালীন এই বীর যোদ্ধা পাক-হানাদার বাহিনীর সঙ্গে কামালপুর, কোদালকাটি, চেঙ্গানিয়র চর, মোশাররফগঞ্জ, পয়লা ব্রিজ, ডিগ্রির চর, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, ঢাকার আমিন বাজারসহ অসংখ্য সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধ শেষে ঢাকা সেনানিবাসে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন তিনি।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর