মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

৬৬ বছর বয়সে পুতিকে নিয়ে স্কুলে ভর্তি হলেন মান্নান

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

৬৬ বছর বয়সে পুতিকে নিয়ে স্কুলে ভর্তি হলেন মান্নান

বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান মিয়া। পা রাখছেন ৬৬ বছরে। তার মেয়ে মালেকা বেগম (৪৬)। এই মালেকার ছেলে মাহাফুজার রহমান (২৬)। আর মাহাফুজারের একমাত্র ছেলে কাওছার রহমান (৬) এবার ভর্তি হয়েছে প্রথম শ্রেণিতে। অতীত জীবনে লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি মান্নানের। অবশেষে সেই শিক্ষাগ্রহণের জন্য তারই পুঁতি কাওছারের সাথে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন বৃদ্ধ মান্নান। 

সম্প্রতি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন সময়ে ১ম শ্রেণিতে পাঠগ্রহণ করতে দেখা যায় বৃদ্ধ মান্নানকে। এসময় অন্যান্য শিশু শিক্ষার্থীর বেঞ্চে বসে মনযোগ দিয়ে পাঠ্যবই পড়ছিলেন। এভাবে যথারীতি স্কুলে এসে শিক্ষা জীবন শুরু করেছেন এই মান্নান।  


বিজ্ঞাপন


স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামের মৃত তছিম উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মান্নান মিয়া (৬৬)। তার আদি বাড়ি ছিলো গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শ্রীমুখপাড়া গ্রামে। সেই জন্মাভিটা ছেড়ে স্বপরিবার এখন কাশিয়াবাড়ী গ্রামে বসবাস করছেন। শিশু-কিশোর বয়সে পিতার অভাব-অনটনের সংসারে আব্দুল মান্নান শিক্ষাগ্রহণ করতে পারেনি। এরপর যুবক বয়সে বিয়ে করার পর সংসারের হাল ধরেন। জীবিকার তাগিদে দিনমজুর হিসেবে কাজ করার একপর্যায়ে কাশিয়াবাড়ী বাজারস্থ ক্ষুদ্র একটি খিলিপানের দোকান দিয়েছেন। ওই দোকানই এখন তার একমাত্র ভরসা।

দাম্পত্য জীবনে আব্দুল মান্নানের ঘরে মালেকা বেগম ও জান্নাতী বেগম নামে ২ মেয়েসহ মমিরুল ইসলাম নামে এক ছেলে রয়েছে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে মালেকা বেগমের ছেলে মাহাফুজার রহমানকে বিয়ে দিয়ে এখন পুতির মুখও দেখছেন। এই পুতি কাওছার রহমান (৬) এ বছর কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। একই সঙ্গে এবং একই বিদ্যালয়ে বৃদ্ধ মান্নানও লেখাড়পড়া শিখতে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন। তার ভর্তি রোল নম্বর ৩৭। বৃদ্ধ বয়স হলেও মনোবল হারায়নি মান্নান। তিনি নিয়মিত পাঠ্যবই-খাতা-কলম নিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের সাথে অধীর মনযোগের সাথে ক্লাসও করছেন।

এই বৃদ্ধ শিক্ষার্থী আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, অতীতের কাহিনী বললে আমার চোখে পানি আসে। অনেক দুঃখ-কষ্টে বড় হয়েছি। এখন বয়সের ভারে তেমন কাজকর্ম করতে পাই না। বাবা-মা যখন বেঁচে তখন অভাবের কারনে স্কুলে পড়তে পারিনি। এখন একটি খিলিপানের দোকান দিয়েছি। অনেক সময় বাকি যায় কিংবা বাকি টাকা যখন মানুষ দেয়, তা মনে রাখতে পারিনা। যেনো খাতায় লিখে রাখতে পারি, এ জন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছি। স্কুলের স্যারেরা অনেক ভালোভাবে আমাকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন।  

তিনি আরও বলেন, এখন স্কুলে গেলে দোকানটি দিনব্যাপী বন্ধ থাকে। তবে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দোকানে বসে খিলিপান বিক্রি করে যেটুকু লাভ হয় তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে আমাকে কেউ যদি সহযোগিতা করতেন, তাহলে উপকৃত হতাম। 


বিজ্ঞাপন


স্থানীয় সংবাদকর্মী সোহেল রানা জানান, ওই মুরুব্বি অত্যন্ত সহজ-সরল ও পরহেজগার একজন মানুষ। এই বয়সে শিক্ষাগ্রহণ করতে পুঁতির সাথে স্কুলে ১ম শ্রেণিতে ক্লাস করছেন। তার এই চেষ্টায় মুগ্ধ। তবে সামাজিক দায়বদ্ধ থেকে এই বৃদ্ধ মান্নানকে সহযোগিতা করা দরকার।  

কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান মিথুন মন্ডল জানান, আব্দুল মান্নান মিয়া স্কুলে ভর্তি হবার জন্য দীর্ঘদিন থেকে যখন-তখন অনুরোধ করছিলেন। তার এই অনুরোধে নতুন বছর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। উনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে এসে বাচ্চাদের সাথে মনযোগের সহিত ক্লাসে লেখাপড়া করছেন। তাছাড়া ওনার আচার-ব্যবহার খুব ভালো। ওনার ক্লাসের সহপাটিরা ওনাকে পেয়ে আনন্দের সাথে পড়ালেখা করছে। 

এ বিষয়ে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান নয়ন বলেন, ওই বৃদ্ধ যেহেতু শিক্ষাগ্রহণ করতে ইচ্ছুক সেটা খুব ভালো কথা। উনি যদি লিখতে-পড়তে পারে তাহলে ওনারই কাজে লাগবে। ওনার এই ইচ্ছাকে সাধুবাদ জানাই।   

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর