শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নওগাঁয় চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রের লেখা নিয়ে বিপাকে সেবাপ্রত্যাশীরা

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

নওগাঁয় চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রের লেখা নিয়ে বিপাকে সেবাপ্রত্যাশীরা

মানুষ অসুস্থ্য হলে যায় চিকিৎসকের কাছে। সৃষ্টিকর্তার পর অসুস্থ্য রোগীদের একমাত্র ভরসাস্থল চিকিৎসক। কিন্তু অনেক চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে লেখা ওষুধের নামগুলো ঠিক মতো বুঝার উপায় থাকে না। শুধু রোগী কিংবা তাদের স্বজনই নন, অনেক সময় ব্যবস্থাপত্রে লেখা ওষুধের নাম পড়া কঠিন হয়ে পড়ে ফার্মেসি ব্যবসায়ীদেরও। ফলে বিপাকে পড়তে হয় রোগী ও ফার্মেসি মালিকদের। 

নওগাঁয় প্রায় ২৯ লাখ মানুষের বসবাস। ১১টি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও জেলা শহরে রয়েছে বৃহৎ সদর হাসপাতাল। প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা নিতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন সরকারি হাসপাতালগুলোতে। চিকিৎসা সেবা পেলেও অনেক রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হয় চিকিৎসকদের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র নিয়ে। চিকিৎসকদের স্পষ্ট অক্ষরে বড় হরফে পড়ার উপযোগী করে ব্যবস্থাপত্র না লেখা বা ছাপার কারণে বুঝতে পারেন না কী কী ওষুধের নাম লেখা আছে।


বিজ্ঞাপন


সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন রুবেল হোসেন, আসাদুজ্জামান ও শারমিন আক্তারসহ বেশ কয়েকজন। এসময় তাদের কাছে থেকে ব্যবস্থাপত্রে লেখা ওষুধের নাম জানতে চাইলে তাদের কেউই বলতে পারেনি। তারা জানান, ফার্মেসিতে যারা ওষুধ বিক্রি করে তাদের থেকে জেনে নেবেন।

সম্প্রতি নওগাঁ সদর হাপাতালের চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ ডা. এস এম শামসুজ্জোহার কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন লাকি বেগম নামে এক রোগী। চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্রে লেখা হয়েছে ৪টি ওষুধের নাম। এর মধ্যে একটি ওষুধের নামও ঠিকতো বুঝতে পারেনি তিনি। লাকি বলেন, আমি ইংরেজি মোটামুটি বুঝতে ও লিখতে পারি। কিন্তু চিকিৎসক যেভাবে লিখেছেন তাতে অনেক শিক্ষিক মানুষও বুঝতে পারবেন না। পরে আমি ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রেতাদের কাছে থেকে ওষুধ কিনে নামগুলো বুঝে নিয়েছি।

শহরের মাস্টারপাড়ার রাফসান হোসেন নামের ২৫ বছর বসয়ী যুবক বলেন, বেশ কয়েকদিন আগে সদর হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকের কাছে পেটের সমস্যাজনিত কারণে গিয়েছিলাম। পরে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লিখে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু আমি কোনো ওষুধের নামই ঠিকমতো বুঝতে পারিনি। পরে এক ফার্মেসি দোকানে গেলাম, কিন্তু তারাও বুঝতে পারেনি। পরে অন্য এক ফার্মেসিতে গিয়ে ফার্মাসিস্টের পরামর্শে ওষুধ নিয়েছি। যদি স্পষ্ট অক্ষরে বড় হরফে পড়ার উপযোগী করে ব্যবস্থাপত্র দিতো তবে বুঝতে সুবিধা হতো।


বিজ্ঞাপন


শহরের মুন্সিপাড়ার মান্নান হোসেন নামের একজন বলেন, প্রচণ্ড মাইগ্রেইনের ব্যথা শুরু হলে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গেলে এক নারী চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে কয়েকটি ওষুধের নাম লিখে দিলেন। নাপা ওয়ান ছাড়া আর কোনো ওষুধের নামই বুঝতে পারিনি। এমনভাবে লিখে আর খুব দ্রুত ব্যবস্থাপত্র দেয় তাতে করে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

শহরের রুবির মোড়ের শান্তা মেডিসিন নামের ফার্মেসির মালিক মোস্তফা বলেন, অনেক চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে লেখা ওষুধের নামগুলো আমরা ঠিকমতো বুঝতে পারি না। যার কারণে আমাদের বিপাকে পড়তে হয় মাঝে মাঝে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে চিকিৎসা পেশাজীবীদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি ডাক্তার হাবিবুর রহমান বলেন, সরকারিভাবে নির্দেশনা আছে চিকিৎসকদের স্পষ্ট অক্ষরে বড় হরফে ‘পড়ার উপযোগী করে’ ব্যবস্থাপত্র লেখা বা ছাপার। এটা আসলে মানসিকতার ব্যাপার। একজন রোগী অনেক আশা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসে সেবা নিতে। ঠিকমতো সেবা ও সুন্দরভাবে ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের নাম লেখা উচিত। আমাদের সংগঠন থেকে চিকিৎসকদের সঠিক নিয়ম মেনে সেবা ও ব্যবস্থাপত্র লেখার তাগিদ দেওয়া হয়। 

নওগাঁ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি। অনেক চিকিৎসক স্পষ্ট অক্ষরে ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের নাম লিখেন না। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। আর যদি আপনার কাছে অস্পষ্ট কোনো ব্যবস্থাপত্র ও কারও অভিযোগ থাকে, তবে জানাতে পারেন। আমরা চিকিৎসকদের নির্দেশনা দিয়ে থাকি যাতে সেবাপ্রত্যাশীরা সঠিক ও মানসম্মত সেবা পায়। তবুও বিষয়টি অবগত হলাম। আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবো।

প্রতিনিধি/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর