বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ইটভাটা মালিকের ফাঁদে কৃষক, বোরো আবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তা

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩১ এএম

শেয়ার করুন:

ইটভাটা মালিকের ফাঁদে কৃষক, বোরো আবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তা
ছবি : ঢাকা মেইল

নীতিমালার তোয়াক্কা না করে নীলফামারীর সৈয়দপুরে বিভিন্ন এলাকায় খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে ইটভাটার মালিকরা অনেক দিন ধরে ফসলি জমির সাত-আট ফুট গভীর করে মাটি কাটছে। এতে করে পাশের জমি ধসে গেছে। ওইসব জমিতে বোরো ধান আবাদ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

দ্রুত ইটভাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামীতে এ অঞ্চলে খাদ্য ঘাটতিসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।


বিজ্ঞাপন


এদিকে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, জমির ওপরের অংশ অর্থাৎ টপ সয়েল ইটভাটায় যাওয়ায় জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। 
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়,  উপজেলায় ৩২টি ইটভাটা আছে। যার মধ্যে মাত্র ৩টির পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র আছে। বাকিগুলো চলছে অবৈধবভাবে। 

ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটি। ফসলি জমির মাটি ইট তৈরিতেও সুবিধা। এছাড়া হাতের নাগালে হওয়ায় কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে এ মাটি কিনে নেয় একটি পক্ষ। এরপর তারা বেশি দামে ইটভাটায় সরবরাহ করে থাকেন।

সরেজমিন উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের কিসামত কামারপুকুর কাঙ্গালুপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, খননযন্ত্র দিয়ে অনেক জমির সাত-আট ফুট গভীরতায় ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। এতে করে পাশের যেসব উচু জমি রয়েছে সেগুলো ধসে পড়েছে।

ওই এলাকার মৃত আজিজার রহমানের ছেলে আব্দুল গণি ইসরাইল বলেন, আমি একজন বর্গাচাষী। অন্যের জমি আদি নিয়ে চাষাবাদ করি। বাড়ির পাশেই কাঙ্গালুপাড়ার বালাডাঙ্গা দোলায় (চরা) ৩৫ শতক জমি আদি নিয়েছি বোরো ধান আবাদের জন্য। জমিতে পানি দিতেই প্রায় ৩ শতক জমি ধ্বসে গিয়ে সব পানি বের হয়ে গেছে। পাশের জমির মালিক একই এলাকায় অবস্থিত ‘এম জেড এইচ' নামের একটি ইটভাটায় মাটি বিক্রি করেছেন।ভাটা মালিক হারুন অর রশিদ প্রায় ৭ ফুট গভীর করে কেটে মাটি নেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্ট হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, এভাবে মাটি কাটার সময়ই আমরা বাধা দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা শোনেনি। সম্পূর্ণ গায়ের জোরে অতিরিক্ত গভীর করে মাটি কাটায় আশেপাশের সব জমিই ঝুঁকিতে পড়েছে।  

পাশের আরেক জমির মালিক  মতিউর রহমানের ছেলে তরুণ উদ্যোক্তা সবজি চাষী হাসান মাহমুদ বলেন, ভাটা মালিক প্রভাবশালী ও শিল্পপতি হওয়ায় কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করে না।  ভাটার ম্যানেজার নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এতটা গভীর করে কেটে নিয়েছে। এখন খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদেরকে। 

এ নিয়ে কথা হয় মেসার্স এম জেড এইচ ইটভাটার মালিক হারুন অর রশিদের সাথে।  তিনি বলেন, সারা দুনিয়ায় মাটি। এই মাটি নিয়েই ভাটা চলে। এটা সবাই জানে। মাটির প্রয়োজন ছিল তাই মাটি কেটেছি। এতে কার কি ক্ষতি হয়েছে তা আমার দেখার বিষয় নয়।

সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভূষন বলেন, ‘ফসলি জমির উপরিস্তরের ছয় ইঞ্চি গভীরতায় মাটি কেটে নিলে উর্বরতা নষ্ট হয়।  ফসলি জমির উপরিভাগের মাটিতে যে জিপসাম বা দস্তা থাকে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া মাটিতে যে জীবানু থাকে এবং অনুজীবের কার্যাবলি আছে তা সীমিত হয়ে যাচ্ছে। এর পর যে মাটি থাকে, তাতে ফলন ভালো হয় না।এতে করে দিন দিন ফসলি জমিতে উৎপাদন ক্ষমতা কমছে। মাটির জৈব শক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়বে। আর এভাবে ফসলি জমির মাটি ইট ভাটায় যেতে থাকলে আস্তে আস্তে ফসল উৎপাদন ব্যহত হবে। 

পরিবেশ অধিদফতরের নীলফামারী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কমল চন্দ্র বর্মন বলেন, মালিক মাটি বিক্রি করলে আইনিভাবে তাদের করার কিছু নেই।

সৈয়দপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বলেন, মাটি কাটা এবং কৃষিজমি ধসে যাওয়ার বিষয়টা আমার জানা নেই। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর