বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

দেশের এক-তৃতীয়াংশ রসুন চাষ নাটোরে, দাম না পাওয়ায় কমছে উৎপাদন

মো. লিটন হোসেন লিমন
প্রকাশিত: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০৬ পিএম

শেয়ার করুন:

দেশের এক-তৃতীয়াংশ রসুন চাষ নাটোরে, দাম না পাওয়ায় কমছে উৎপাদন

দেশের মোট উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ২৬ শতাংশ রসুন উৎপাদিত হয় নাটোরে। জেলার গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলায় সবচেয়ে বেশি
রসুনের আবাদ করা হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে রসুনের সঠিক মূল্য না পাওয়ায় চাষিরা আগ্রহ হারিয়ে অন্য ফসলে ঝুঁকছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৫ হাজার ৯২৩ হেক্টর কম জমিতে রসুনের আবাদ করা হয়েছে। ফলে জেলায় দিনে দিনে কমছে রসুনের রেকর্ড উৎপাদন।

নাটোর জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর নাটোর জেলায় ১৬ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ করা হয়েছে। যার মধ্য গুরুদাসপুর উপজেলায় ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর, বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৯ হাজার ৬০০ হেক্টর,লালপুর উপজেলায় ১ হাজার ৩০০ হেক্টর, বাগাতিপাড়া উপজেলায় ১ হাজার ১৫০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৩ হাজার ১৮ হেক্টর, নলডাঙ্গা উপজেলায় ৫৫০ হেক্টর এবং সিংড়া উপজেলায় ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


রসুন

আরও জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে নাটোর জেলার ৭ উপজেলায় ১৬ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ করা হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২২ হাজার ৬৬৮ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৯৩ হাজার ১৩১ মেট্রিক টন। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ৯২৩ হেক্টর কম জমিতে রসুনের আবাদ করা হয়েছে। গত ২০২১-২২ মৌসুমে রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার ২ হেক্টর। আবাদ হয়েছিল ২১ হাজার ৯৭০ হেক্টর এবং উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ১২৪ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ মৌসুমে রসুন আবাদ হয়েছিল ২৫ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ১৮ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ মৌসুমে রসুন আবাদ হয়েছিল ২১ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে। রসুন উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৭৮ মেট্রিক টন।  

নাটোর সদর উপজেলার মাঝদিঘা গ্রামের রসুন চাষি আবুল কালাম বলেন, এ বছর ২ বিঘা জমিতে রসুনের আবাদ করেছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর কম আবাদ করেছি। রসুন আবাদ করে এখন শুধু লোকসান। গত তিন বছর থেকে রসুনের দাম নেই। রসুনের উৎপাদনের খরচই উঠছে না। সবকিছুর দাম বাড়ে, কিন্তু রসুনের দাম বাড়ে না। এক বিঘা জমিতে রসুন চাষে খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে বীজ, সার, ওষুধ ও সেচের দাম বাড়ায় এখন রসুন চাষে কোনো লাভ নেই। তাই এ বছর ২ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছি।

রসুন


বিজ্ঞাপন


মোহনপুর এলাকার রসুন চাষি মো. সবুজ হোসেন বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে রসুন রোপন, সার, ওষুধ, কীটনাশক, সেচ, পরিচর্যা ও জমি থেকে তোলা পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় গড় ফলন কাঁচা অবস্থায় ২৫ থেকে ৩০ মণ। শুকানোর পর ২০ মণ টেকে। বিগত কয়েক বছর রসুন চাষ লাভজনক ছিল। কিন্তু গত দুই বছর ধরে রসুনের দাম একেবারেই কম। ফলে রসুন চাষ আর লাভজনক নেই। অনেক চাষি রসুন বাদদ দিয়ে বিভিন্ন শস্য চাষ করছে। সরকার যদি রসুনের মূল্যটা নির্ধারণ করে দেয় তাহলে আমরা সাধারণ চাষিরা লাভবান হবো।

একই গ্রামের রসুন চাষি মো. রবিউল ইসলাম জানান, ন্যায্য দাম না পাওয়ায় রসুন চাষে লোকসান হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বিঘায় ২০ থেকে ২৫ মণ রসুন পাওয়া যায়। কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হলে সব খরচ বাদে লাভের মুখ দেখতে পাবো। সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধি পায়, কিন্তু রসুনের দাম বাড়ে না। এ বছর রসুনের দাম যদি বাড়ে, তাহলে আগামী বছর রসুন চাষ করবো। দাম কমে গেলে আগামী থেকে অন্য ফসল চাষ শুরু করবো।

রসুন

গুরুদাসপুরে রসুন চাষি আনিছুর রহমান জানান, গত ৪ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছিলাম। এ বছর ২ বিঘা জমি আবাদ করেছি। আবাদ করে ন্যায্য দাম পাই না, কম দামে রসুন বিক্রি করতে হয়। বর্তমানে রসুন চাষে প্রচুর খরচ। বিঘা প্রতি রসুন চাষে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। রসুন বিক্রি করে খরচের টাকা তুলতেই কঠিন হয়ে যায়। তাই রসুনের আবাদ কমিয়ে দিয়েছি।

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ ঢাকা মেইলকে বলেন, নাটোর জেলায় দেশের এক-তৃতীয়াংশ রসুনের আবাদ করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর রসুনের ফলন ভালো হয়েছে। চাষিরা রসুনের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে সরিষা, তরমুজ, কালিজিরা, ধনিয়া, বাঙ্গিসহ বিভিন্ন চারা রোপন করেছেন। ফলে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

প্রতিনিধি/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর