শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

শেরপুরে ফসলের মাঠে সূর্যমুখীর হাসি

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৪৮ এএম

শেয়ার করুন:

শেরপুরে ফসলের মাঠে সূর্যমুখীর হাসি

সূর্যমুখীর হলুদের আভায় জ্বলজ্বল করছে ফসলের মাঠ। হাজারো সূর্যমুখী ফুলের নজরকাড়া রূপের দেখা মিলবে শেরপুর শহরের শেরীপাড়ায়। যেখানে সবুজের মাঝে যেন হলুদ গালিচার বিস্তৃতি। গুনগুন শব্দে মৌমাছিদের ছুটোছুটি পুরো মাঠজুড়ে। ফসলের ক্ষেতের এমন দৃশ্য টানছে সৌন্দর্যপিপাসুদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে— এবার জেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এর আগের বছর ১৫৪ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছিল। সদরে এবার মাত্র ৯ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। তাই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।


বিজ্ঞাপন


শেরীপাড়া মহল্লার কৃষক আশরাফ আলী। তিনি এবছর তার ১০ কাঠা জমিতে চাষ করেছেন সূর্যমুখী। যার তেল বিক্রি করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

sun flower

সরেজমিনে দেখা গেছে, আশরাফ আলীর ক্ষেতে হলুদ ফুল জ্বলজ্বল করছে। তিনি এবার ১০ কাঠা জমিতে এই ফুল চাষ করেছেন। প্রত্যেকটি গাছেই ফুল এসেছে। 

আশরাফ আলী ঢাকা মেইলকে জানায়, দীর্ঘদিন ধরে সরিষার চাষ করে আসছেন। এ বছরের প্রথমেই তাকে সরকারিভাবে সরিষার বীজ দেওয়া হয়েছিল। সরিষার পরে আবার তাকে তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির প্রকল্পের আওতায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূর্যমুখীর বীজ বিতরণ করেছেন। তিনি শুধু সেচ খরচ দিয়ে এ সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। সূর্যমুখী থেকে সব মিলিয়ে লক্ষাধিক টাকার মতো লাভ করবেন বলে তিনি আশাবাদী। এ গাছের অবশিষ্ট অংশ পশুর খাবার বা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তিনি এ বছর ১০ কাঠা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। 


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, আমি ১০ কাঠা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছি। আশা করছি এবার লাভ বেশি হবে। আমি এর আগে সরিষা লাগিয়ে ছিলাম। সরিষার বাম্পার ফলন দেখে সরকার থেকে ট্রাক্টর দিয়েছিল। তবে দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকেই এখানে এসে ফুল ছিঁড়ছেন। যার কারণে আমার ক্ষতি হচ্ছে। তাদের সচেতন হতে হবে।

sun flower

এদিকে সূর্যমুখী ফুল দেখতে আসা স্কুল শিক্ষার্থী রাফিউল রাহাত বলেন, আমি আমার বন্ধুদের সাথে ঘুরতে এসেছি। সূর্যমুখী দেখে আমার খুব ভালো লাগল। আমি ফুলের সাথে ছবিও তুলেছি। আরেকদিন আসবো, সময় পেলেই।

চরশেরপুর ইউনিয়নের যোগিনী মুড়া গ্রামের মাজহারুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দেখে জেনেছি সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। তাই আজ ঘুরতে আসলাম। বাগানটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই এসেছেন। 

একই গ্রামের কৃষক রহুল আমীন বলেন, আশরাফ আলী ভাই সরকারি বীজ পেয়ে এই ফুল চাষ করেছেন। সূর্যমুখীগুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। ফলনও ভালো হবে, আশা করি। তবে আমার দাবি— কৃষি বিভাগ এই বীজ আগ্রহী সবার মাঝে যেন বিতরণ করে। তাহলে শেরপুর তেল জাতীয় আবাদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। 

sun flower

অনেক চাষির অভিযোগ— এখানে সূর্যমুখী তেল ভাঙার কোনো মেশিন না থাকায়, সরিষার মেশিন দিয়ে ভাঙাতে হচ্ছে। ফলে তেলের মানও খারাপ হয়। এতে তেমন লাভ পান না কৃষকরা। ফলে সূর্যমুখী চাষ করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেক কৃষক। 

জেলা কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক কর্মকর্তা সুলতান আহম্মেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, সূর্যমুখী ফুল থেকে তেল উৎপন্ন হয়। এই তেল, অন্যসব তেলের থেকে পুষ্টির মান বেশি। এইবার ফলন ভালো হওয়ায় আগামীতে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখীর চাষ হবে আশা করছি। ১ হেক্টর জমি সূর্যমুখী থেকে ৪ টন সূর্যমুখীর বীজ পাওয়া সম্ভব, এতে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো মুনাফা পাওয়া যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস ঢাকা মেইলকে বলেন, শেরপুরে রেকর্ড পরিমাণের সরিষার আবাদ হয়েছিল। তাই তেল জাতীয় আবাদ বাড়াতে একটি প্রকল্পের আওতায় তিন উপজেলায় সূর্যমুখী বীজ দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের সূর্যমুখী চাষের সার ও বীজ সরবরাহের পাশাপাশি নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

প্রতিনিধি/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর